ইনসাইড পলিটিক্স

নোম্যান্সল্যান্ডে জিএম কাদের


প্রকাশ: 02/12/2022


Thumbnail

আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। রওশন এরশাদের সাথে সকালের প্রাতরাশের পর জাতীয় পার্টির বিভক্তির শঙ্কাও দূর হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও জিএম কাদের এখনও চুপচাপ। তিনি কথাবার্তা তেমন একটা বলছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন তিনি এখন নোম্যান্সল্যান্ডে অবস্থান করছেন। গত কিছুদিন ধরেই জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অস্থিরতা চলছিল। আর এই অস্থিরতার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের হাত ছিল, এমন অভিযোগও কেউ কেউ করছিলো। কিন্তু সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় পার্টি এখন যেমন অখণ্ড রয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সমঝোতার দৃশ্যপটও আস্তে আস্তে উন্মোচিত হচ্ছে। জিএম কাদের গত কিছুদিন ধরেই সরকারের কট্টর সমালোচক হয়ে গিয়েছিলেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি সমালোচনায় বিএনপিকেও হার মানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে জিএম কাদেরের বক্তব্য ছিলো খুব সুস্পষ্ট। তিনি বলেছিলেন যে, জাতীয় পার্টি আলাদা অবস্থান নিতে চায়। জাতীয় পার্টি সরকারে 'বি টিম' হতে চায়না। তিনি এটিও বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্তিশালী বিরোধী দলের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। আমরা শক্তিশালী বিরোধী দল হতে চাচ্ছি।

কিন্তু শক্তিশালী বিরোধী দল হতে যেয়ে তিনি এমন কিছু কর্মকান্ড করেছেন যেটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিছুটা হলেও বিচলিত হয়েছিলো। কারণ, আগামী নির্বাচনে তিনি যাবেন কি যাবেন না এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, অর্থপাচার ইত্যাদি বিষয়ে তিনি সরকারকে তুলোধোনা করছিলেন। ফলে সরকারের মধ্যেও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে একটি শঙ্কা দেখা দিয়েছিলো। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি বিএনপির সাথে গাঁটছড়া বাঁধা কিনা, এ নিয়েও গুঞ্জন তৈরি হয়েছিলো। এই প্রেক্ষাপটে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে যে পদক্ষেপগুলোর ফলে এখন জিএম কাদের তার অবস্থান থেকে সরে এসেছে। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে তাঁর দলেরই একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য মামলা করেছিলেন এবং সে মামলার প্রেক্ষিতে আদালত জিএম কাদেরের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত সেই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছেন। ফলে জিএম কাদেরের এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আর বাধা নেই।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে জিএম কাদের চাপে পড়েছিলেন তা হলো রওশন এরশাদ। রওশন এরশাদ প্রয়াত হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা। জিএম কাদেরের সঙ্গে তার প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দেয়। আর এই বিরোধের প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টিতে ভাঙ্গনের শঙ্কাও তৈরি হয়েছিলো। রওশন এরশাদ দেশে ফেরার পর কি হয়, এ নিয়ে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা ছিলো। কারণ, জিএম কাদের ২৩ জন সংসদ সদস্যের চিঠি সম্মিলিত একটি আবেদন জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে জমা দিয়েছিলেন যে আবেদনে রওশন এরশাদকে হটিয়ে তাকেই বিরোধীদলের নেতা করার প্রস্তাব করা হয়েছিলো। কিন্তু স্পিকার সেই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। এর প্রতিবাদে জাতীয় পার্টি সংসদ বর্জনের ঘোষণা দিলেও পরে ফিরে আসে। এর মধ্যেই রওশন এরশাদ ব্যাংকক থেকে আসেন। এই সময় জিএম কাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। তিনি সরাসরি রওশন এরশাদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে রওশন এরশাদের সাথে সমঝোতায় যান, দুইজন প্রাতরাশ করেন একসঙ্গে এবং এরপরই জাতীয় পার্টির নেতারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে।

ইতিমধ্যে রওশন এরশাদ রংপুর সিটি কর্পোরেশনে তার পছন্দের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করিয়েছেন। ফলে রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদেরের একক প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও কৌশলী হয়ে রংপুরে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী দিয়েছেন যাতে জাতীয় পার্টির সাথে দূরত্বটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। আর এই পদক্ষেপে কাজ দিয়েছে। জিএম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর এবং রওশন এরশাদ ফিরে আসার পর এখন সরকারের বিরুদ্ধে আর কঠোর অবস্থানে নেই। বরং সামনের দিনগুলোতে তিনি আগের মতোই বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবেন, এটিই সকলে মনে করছেন। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার সম্ভাবনা এখন আপাতত নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, না বিএনপি, না আওয়ামী লীগ এরকম একটি নোম্যান্সল্যান্ডে অবস্থান করছেন জিএম কাদের। দেখার বিষয় হলো, কতদিন এই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭