ব্রাজিলকে হারিয়েও শেষ ষোলতে যেতে পারলো না ক্যামেরুন

আগেই বিশ্বকাপের নকআউট নিশ্চিত হয়েছিলো ব্রাজিলের। ইনজুরি এবং ফ্লু জটিলতায় এদিন একাদশে ৯টি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে দলটি। এই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে খেলবে সেলেসাওরা। সেই সাথে রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তিমত্তার পরীক্ষাও সেরে নেয়া যাবে। আর ক্যামেরুনের বিশ্বকাপ ভাগ্য ঝুলছিলো সুতোয়। পরের রাউন্ডে যেতে জিততে তো হবেই, তাকিয়ে থাকতে হবে গ্রুপের অন্য ম্যাচের ফলের দিকেও। দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে চমক দেখিয়ে শেষ মুহুর্তের গোলে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের কাজটা সেরে ফেলে আফ্রিকার দলটি।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই ক্যামেরুনের রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করে ব্রাজিল। ফ্রেড ও অ্যান্তোনির সে আক্রমণ অবশ্য কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। তবে ম্যাচের শুরুতেই হলুদ কার্ড দেখাতে হয় রেফারিকে। ৬ মিনিটে নোউহোউ এবং ৭ মিনিটে এদার মিলিতাওকে কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেন ইসমাঈল ইলফাত। ১৪ মিনিটে মার্টিনেল্লির হেড লাফিয়ে উঠে বাইরে পাঠিয়ে দেন ইপাসি। ২০ মিনিটে চোপো মোটিং ফাবিনহো ক্লিয়ার করেন। সেখান থেকে আবরো মোটিং এর আক্রমণ প্রতিহত করেন এদারসন। ২২ মিনিটে ফ্রেড গোলবারের উপর দিয়ে শট করেন। ২৫ মিনিটে অ্যান্তোনির শট প্রতিহত করে দেন ক্রিস্টোফার উহ।

২৮ মিনিটে ক্যামেরুনের হয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন পিয়েরে কুন্দে। ৩০ মিনিটে রদ্রিগোর নেয়া ফ্রি-কিক ক্যামেরুনের ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ৩২ মিনিটে আরেকটি হলুদ কার্ড দেখেন ক্যামেরুনের কলিন্স ফাই। সেখান থেকে ফ্রি-কিকে

নেয়া দানি আলভেজের শটটি বারের উপর দিয়ে চলে যায়। এই ম্যাচ দিয়ে ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড গড়লেন আলভেজ। তার আগে এই রেকর্ড ছিলো আরেক রাইট ব্যাক দালমো সান্তোসের।

৩৮ মিনিটে ডি-বক্সের বাম পাশ থেকে অ্যান্তোনির শট গ্লাভসে জমা করেন ইপাসি।

৪২ মিনিটে রদ্রিগোর দূর থেকে নেয়া শট সরাসরি চলে যায় ইপাসির হাতে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে রদ্রিগোর শট নেটে লাগলে হতাশ হতে হয় ব্রাজিলকে। দুই মিনিট পর এমবেউমুর শট থেকে গোলের ভাল সম্ভাবনা তৈরি করেছিলো ক্যামেরুন। তবে ডান পাশে ঝাঁপিয়ে সে যাত্রায় ব্রাজিলকে রক্ষা করেন এডারসন। এটিই ছিলো ব্রাজিলের গোলমুখে ক্যামেরুনের নেয়া অন টার্গেটে প্রথম শট।

৫১ মিনিটে আবু বাকারের শট সেকেন্ড বারের পাশ দিয়ে চলে যায়। ৫৫ মিনিটে দলে তিনটি পরিবর্থন আনেন ব্রাজিল কোচ তিতে। তেলেস-রদ্রিগো-ফ্রেডকে উঠিয়ে নেন। তাদের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মার্ককুইনোস, এভারটন ও ব্রুনো গুইমারেজ। ৫৬ মিনিটে আবারো ক্যামেরুনের ত্রাতা হর ইপাসি। মার্টিনেল্লির শট কর্নারের বিনিময়ে বাইরে পাঠিয়ে দেন। কর্নার থেকে বল পেয়ে মিলিতাও এর শটও ঠেকিয়ে দেন তিনি।দুই মিনিট পর আবার মার্টেনল্লির শট বাইরে পাঠিয়ে ব্রাজিলকে হতাশ করেন ইপাসি।

৬৩ মিনিটে ব্রাজিলের গোছানো একটি আক্রমণ নসাৎ করে দেয় ক্যামরুন ডিফেন্ডাররা। ৬৪ মিনিটে জেসুসের পরিবর্তে মাঠে নামেন পেদ্রো। ৭৩ মিনিটে মার্ককুইনোস দুর্দান্তভাবে প্রতিপক্ষের গোল লাইন থেকে বল করে দেন। সেখান থেকে বল পেয়ে এলোমেলো শট নেন ব্রুনো গুইমারেজ।

৭৮ মিনিটে অলিভার চ্যামের শট সরাসরি গ্লাভসে জমা করেন এডারসন। ৭৯ মিনিটে অ্যান্তোনির জায়গা রাফিনিয়াকে মাঠে নামান তিতে। পরের মিনিটে আবুবাকারের শট আলভেজের পায়ে লেগে বাইরে চলে যায়। সেখান থেকে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে ব্রাজিল। মার্টনেল্লি সে আক্রমণ থেকে গোল হলেও হতে পারতো। বিপদ বুঝতে পেরে মার্টিনেল্লিকে ফাউল করেন আবুবাকার। হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। ৮৪ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতরে রাফিনিয়ার কোস থেকে ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন ব্রুনো। তবে সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন নি তিনি। উল্টো পরের মিনিটে বাজে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন ব্রুনো। ৮৬ মিনিটে আবার ব্রাজিলকে বাঁচিয়ে দেন এডারসন।

৮৯ মিনিটে পেনাল্টি বক্স থেকে গ্যালারিতে বল পাঠান পেদ্রো। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে মার্টিনেল্লির ক্রস কর্নারের বিনিময়ে বাইরে পাঠিয়ে দেন ক্রিস্টোফার উহ। এরপরই যেন বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা দারুণ এক আক্রমণে উঠে এডারসনকে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়ান ভিনসেন্ট আবুবাকার। উদযাপন করতে গিয়ে জার্সি খুলে ফেলায় গোল করার  লাল  কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ১০ জনের দলে পরিণত হয় ক্যামেরুন।

৯৭ মিনিটে ব্রুনোর হেড সরাসরি গোলরক্ষক হাতে চলে যায়। পরের মিনিটে ব্রুনো আরো একটি সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। ম্যাচের শেষ মিনিটেও বল নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে এলেমেলো শটে পোষ্টের উপর দিয়ে পাঠান ব্রুনো গুইমারেজ। হারের হতাশায় ভেঙে পড়ে ব্রাজিল। 

এ জয়ে আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে হারানোর কৃতিত্ব দেখালো ক্যামেরুন। সেই সাথে গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের টানা অপরাজিত থাকার যাত্রাতেই ইতি টানলো ক্যামেরুন। তবে সেলেসাওদের বিপক্ষে জিতলেও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে ক্যামেরুনকে। এই গ্রুপের আরেক ম্যাচে সার্বিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে রাউন্ড অব সিক্সটিনের টিকিট পেয়েছ সুইজারল্যান্ড। আর হেরেও গ্রুপ সেরা হয়েই শেষ ষোলতে খেলবে ব্রাজিল। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ এইচ গ্রুপ রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া।