ইনসাইড পলিটিক্স

পুলিশকে নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাচ্ছে বিএনপি


প্রকাশ: 03/12/2022


Thumbnail

আগামী ১০ ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপি নানামুখী কৌশল অবলম্বন করছে। তারা নয়াপল্টনে তাদের মহাসমাবেশ করার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে রয়েছে। এই অবস্থানে থাকার প্রেক্ষিতে সরকারের ওপর একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, সভা করতে গেলে তাদেরকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে হবে, নয়াপল্টনে কোনো অবস্থাতে সমাবেশ করা যাবে না। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, যেখানে তাদেরকে অনুমতি দিয়েছে সেখানে সমাবেশ করতে হবে। এর বাইরে কোথাও তাদের সমাবেশ করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রগুলো বলছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকেই নয়াপল্টনে দখল নিবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু বিএনপি নয়াপল্টনেতাদের সমাবেশ করার লক্ষ্যে এখন পুলিশের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তাকে বলা হচ্ছে যে, তারা যদি নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে বাধা দেয়, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যদি কারা চড়াও হয় বা অন্য কোনো তৎপরতা করে তাহলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। 

বিএনপি কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন অনেকে। বিএনপির অত্যন্ত তিনজন নেতা ইকবাল মাহমুদ টুকু, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং এবং মির্জা আব্বাস একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন যে, যদি নয়াপল্টনের সমাবেশ নিয়ে পুলিশ বাড়াবাড়ি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আতঙ্ক এখন পুলিশের মধ্যে ছাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। পুলিশকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল করে দেয়া এবং তারা যেন কঠোর অবস্থানের না যায় সেজন্য বিএনপি এই কৌশল অবলম্বন করছে। এই কৌশলের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিষেধাজ্ঞার গল্প ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মহলে বলা হচ্ছে আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আরও বেশকিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। মূলত নিষেধাজ্ঞার আতঙ্ক দেখিয়ে বিএনপি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী  বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়। এবং অনেকে নেতাই মনে করছেন যে, এরকম চাপ সৃষ্টি করতে পারলেই শেষ পর্যন্ত তাদের সমাবেশে পুলিশ নমনীয় থাকবে এবং তারা সমাবেশ সফল করতে পারবে। 

বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, নয়াপল্টনের জনসমাবেশ হবে একটু টার্নিং পয়েন্ট। কারণ সরকারের বাধা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত যদি নয়াপল্টনে সমাবেশ করা যায় তাহলে সরকারের একটি নৈতিক পরাজয় ঘটবে। বিএনপির নৈতিক বিজয় হবে সেটি। আর এর ফলে পরবর্তী আন্দোলনগুলো করা বিএনপির জন্য সহজ হবে। বিএনপি নেতারা বলছেন যে, নয়াপল্টন নিয়ে তাদের লক্ষ্য হলো তিনটি 

প্রথমত, জনসমাগম করে সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানো এবং সরকারের বিধি নিষেধ সত্ত্বেও যে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন বাদ দিয়ে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারে এর মধ্য দিয়ে তাদের শক্তি প্রমাণ করা। 

দ্বিতীয়ত, কোনো ধরনের হট্টগোল, সন্ত্রাস-সহিংসতা ইত্যাদি করে ঢাকায় লাশ ফেলা। এই লাশ পড়লে আন্দোলন বেগবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল তিনি ডয়চে ভেলেতে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় শীর্ষক’ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বলেছিলেন যে, এরশাদের সময়ে ২৭ নভেম্বর মিলনের মৃত্যুর পরে এক মুহুর্তে সারাদেশে আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ লাশ পড়লে আন্দোলন ছড়িয়ে যাবে এমন একটি ভাবনা থেকেই বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করতে চাচ্ছে। 

তৃতীয়ত, এই মহা সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি জনগণের মধ্যে একটা ভীতি সঞ্চার করতে চাচ্ছে যে, বিএনপির এখন জনপ্রিয়তা রয়েছে। কাজেই ভবিষ্যতে যে কর্মসূচি দেয়া হবে সে কর্মসূচি সাধারণ জনগন যদি না মানে তাহলে জনজীবনে নানারকম দুর্ভোগ আসতে পারে। মূলত এই তিন কারণেই নয়াপল্টনে সমাবেশের ক্ষেত্রে বিএনপির অনড় অবস্থানে রয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭