জাবিতে রঙ বেরঙের প্রজাপতির মেলা

‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানকে ধারণ করে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রজাপতি মেলা-২০২২। প্রতিবছরের ন্যায়ে এবারের প্রজাপতি মেলার আয়োজক ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা।

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সম্মুখে প্রজাপতি মেলার উদ্বোধন করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শেখ মো: মনজুরুল হক।

দিনব্যাপী নানা প্রজাতির ও নানা বর্ণের প্রজাপতির সৌন্দর্য উপভোগে প্রজাপতিপ্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। প্রজাপতির রঙিন ডানায় চড়ে কল্প জগতে হারিয়ে যেতে প্রজাপতি মেলায় ভিড় জমিয়েছিল ছোট্ট শিশুরাও। শিশুদের কেউবা পরে এসেছিল প্রজাপতির সাজপোশাক, পিঠে লাগিয়েছে বর্ণিল ডানা- যেন প্রত্যেকেই একেকটা প্রজাপতি। ছবি অঙ্কন প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড়ানোর চমৎকার সব আয়োজনে উচ্ছ্বসিত দিন পার করেছে ঘুরতে আসা শিশুরা।

প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিনব্যাপী এ মেলার নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল নৃত্যানুষ্ঠান, শিশু কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, অরিগামি প্রতিযোগিতা, বারোয়ারি বিতর্ক, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, সবশেষে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল আয়োজনের অংশ।

এবছর প্রকৃতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য তরুপল্লব সংগঠনকে ‘বাটার ফ্লাই অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী দীপ্ত বিশ্বাসকে ‘বাটার ফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে।

মেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাসে প্রজাপতিপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রজাপতি মেলা দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রজাপতিপ্রেমীরা ছুটে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আয়োজনে। বিশেষ করে বাহারি রঙ্গের প্রজাপতি দেখে শিশুদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মত।

ঢাকার ধানমন্ডি থেকে বাবার সাথে প্রজাপতি মেলা দেখতে এসেছেন ছোট্ট ফারিহা। ছোট্ট শিশু ফাইরুজ বলেন, মেলায় এসে লাল-নীল প্রজাপতি দেখে ভালো লাগছে। আজ অনুষ্ঠানে ছবি এঁকে ও ঘুড়ি উড়িয়ে খুবই ভাল লাগছে। আমি প্রজাপতির উপর দুইটা বইও কিনেছি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য বলেন, প্রজাপতির সৌন্দর্য আমাদের মনকে আপ্লুত করে। প্রজাপতি না থাকলে পরাগায়ন হবে না। তাই প্রকৃতিতে প্রজাপতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশ-প্রকৃতি আমাদের নিত্য অনুষঙ্গ। প্রকৃতি ভালো থাকলে মানুষ ভালো থাকবে। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার রক্ষার জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

মেলার আহ্বায়ক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হলে প্রকৃতিও বিরূপ আচরণ করে। ছোট্ট কীটপতঙ্গ আমাদেরকে কীভাবে আলোড়িত করতে পারে, প্রজাপতি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে প্রজাতির সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে। আগে বাংলাদেশে সাড়ে চার শত প্রজাতির প্রজাপতি লক্ষ করা যেত। সেই সংখ্যা এখন কমে এসেছে। আগে

পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি লক্ষ্য করা যেত। এখন এই ৫২ তে নেমে এসেছে। প্রজাপতিকে রক্ষা করতে হলে পরিবেশকে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, বন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, কিউট প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ মাতলুব আক্তার, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান প্রমূখ।

প্রসঙ্গত, প্রজাপতির প্রতি গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১০ সালে সর্ব প্রথম ক্যাম্পাসে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় নানা আয়োজনে প্রতিবছর প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।