গতকাল নিয়ম রক্ষার ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং বিশ্ব ফুটবলের র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দল ব্রাজিল। আর তার প্রতিপক্ষ ছিল ক্যামেরুন। ব্রাজিল যেহেতু দ্বিতীয় রাউন্ডে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো সেজন্য তারা তাদের মূল একাদশকে বসিয়ে রেখে তাদের দ্বিতীয় টিম বা বি টিমকে মাঠে নামিয়ে ছিল। যারা বিভিন্ন সময়ে সাইডলাইনে বসে থাকেন। কিন্তু ঐ খেলায় বিশ্বসেরা দলটির ভরাডুবি ঘটে। ১-০ গোলে ক্যামেরুনের কাছে হেরে যায়। এই ঘটনাটি শুধু খেলার মাঠে না, সর্ব ক্ষেত্রে একটি বড় শিক্ষা। শিক্ষাটি হলো বি টিম দিয়ে কখনো এ টিমের কাজ হয় না। বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ আছে ‘ছাগল দিয়ে হাল চাষ করা যায় না’ তেমনি যিনি যে কাজের জন্য যে যোগ্য সেই কাজের জন্য যদি তাকে দায়িত্ব না দেওয়া হয় তাহলে সেই কাজ সফল হতে পারেনা। ব্রাজিলের অভিজ্ঞ কোচ তিতে ক্যামেরনের কাছে পরাজিত হয়ে এই শিক্ষাটা নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি এই শিক্ষা নেয়া হচ্ছে?
আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ বি টিমকে দিয়েই দেশ চালাচ্ছে বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। বিশেষ করে অধিকাংশ মন্ত্রী নিস্পৃহ এবং কর্মহীন অবস্থায় বসে আছেন। জাতীয় সংকট, আন্তর্জাতিক সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। সংকট সমাধানে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কেও তারা কতটুকু ওয়াকি বহাল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বরং দুই-একজন মন্ত্রী বিতর্ক সৃষ্টি করে সরকারকে আরও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলছেন। আওয়ামী লীগের সাইডলাইনে বহু ভালো এবং যোগ্য নেতা রয়েছেন যারা এই সংকটের সময় ত্রাতা হিসেবে আসতে পারেন এবং সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। কিন্তু তাদেরকে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এখন যখন দেশের তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ঘনীভূত অর্থনৈতিক সংকট তখন সাইডলাইনে থাকা আওয়ামী লীগের মূল একাদশ ঘটনাবলি দেখছে এবং কোনো রকম ভূমিকা পালন করছে না। আর তাই ব্রাজিল-ক্যামেরুনের খেলা দেখে আওয়ামী লীগ সরকার কি শিখবে? আওয়ামী লীগ কি এই সংকটে তাদের এ টিমকে নামাবে?
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাই এখন কোনো রকম ভূমিকাহীন। অথচ এই সংকটে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারতো। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরীর মতো নেতারা যদি মন্ত্রিসভায় থাকতেন বা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সামনে আসছেন তাহলে পরে অনেক সমস্যার সমাধান হতো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রতিনিয়ত কথা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন রকম মত দিচ্ছেন। কিন্তু এই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অর্থনীতির ভূমিকা কি? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ আওয়ামী লীগের সাইডলাইনে বসে আছেন বহু যোগ্য ব্যক্তি। যারা অর্থনীতিবিদ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আগামী দিনগুলোতে সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর এই সংকট মোকাবেলায় ব্রাজিল থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা নিতে পারে। ব্রাজিলের কোচ তিতে যেমন হেরে শিখলেন যে বি টিমকে দিয়ে এ টিমের কাজ হয় না, তেমনি আওয়ামী লীগ এই সংকট থেকে কি শিখবে? খেলায় ব্রাজিলের জন্য সুবিধাজনক অবস্থা হলো তারা দ্বিতীয় সুযোগ পাচ্ছে, তারা নকআউট পর্বে যেতে পারছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্য এই সংকট মোকাবেলা তাদের অস্তিত্ব রক্ষা। এটি তাদের জন্য ডু অর ডাই। তাই এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আওয়ামী লীগ কি তা সেরা একাদশকে মাঠে নামবে? নাকি এভাবেই সংকট সমাধানের চেষ্টা করবে? সেটি এখন রাজনীতিতে অনেক বড় একটি প্রশ্ন।