ইনসাইড পলিটিক্স

১০ ডিসেম্বর নিয়ে ঘরে-বাইরে কোণঠাসা হচ্ছে বিএনপি


প্রকাশ: 04/12/2022


Thumbnail

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ নিয়ে একগুঁয়েমি এবং জেদের কারণে ঘরে-বাইরে কোণঠাসা হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির দলের মধ্যে থেকে যেমন কেউ কেউ এখনই সরকারের সাথে সরাসরি বিরোধে জড়িয়ে না পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিএনপির দাবির পক্ষে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে এই সমাবেশের সাফল্য নিয়েও এক ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যার ফলে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপি যে পরিমাণ তর্জন-গর্জন করেছিলো তা আস্তে আস্তে ম্লান হতে শুরু করেছে। ১০ ডিসেম্বর কি হবে দেশে? বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন যে, ১০ ডিসেম্বর কিছুই হবে না। আর সাতটি মহাসমাবেশের মত এখানেও একটি বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখান থেকে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানতে বাধ্য করার জন্য নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। কিন্তু বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের লাগামহীন বক্তব্যের কারণেই ১০ ডিসেম্বর নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই উত্তেজনা আরও তীব্র হয় যখন সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় যে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারা সমাবেশ করবে না, তারা সমাবেশ করবে নয়াপল্টনে। কিন্তু নয়াপল্টনে সমাবেশ নিয়েই আসলে বিএনপি প্রথম বেকায়দায় পড়ে।

বিএনপির ভেতর থেকেই কোনো কোনো নেতা প্রশ্ন তোলেন যে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ না করে নয়াপল্টনে সমাবেশের একগুঁয়েমি কেন করা হচ্ছে? কারণ, তাদের অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর আগেও নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে গিয়ে বিএনপি পুলিশের হাতে বেধড়ক পিটুনি খেয়েছিলো। এমনকি বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের পিটিয়েছিল। এরপর বিএনপির কার্যালয়ে তালাও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই বিএনপির ত্যাগী-পরীক্ষিত অনেক নেতাই মনে করেন যে, নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপির দলীয় কার্যালয়কে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলনে পশ্চিমা কূটনীতিকরা কিছুটা সমর্থন দিচ্ছিলো। বিশেষ করে রাজনৈতিক সমঝোতা এবং বিরোধীদলের মতপ্রকাশের অধিকার দেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিলো। এই সমর্থনের কারণেই বিএনপির সমাবেশগুলো থেকে আস্তে আস্তে বিধিনিষেধ তুলে নেয় সরকার। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বদলে যখন বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে, তখন পশ্চিমা দেশগুলো এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছে। তারা মনে করছে যে, এটি রাজনীতিতে উস্কানি এবং সহিংসতা সৃষ্টির পথ উন্মুক্ত করবে। এটি কখনোই করা উচিত নয়। কারণ, একটি সমাবেশ নয়াপল্টনে করা না অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য থাকা উচিত নয়। বিএনপির অনেক নেতাকেই কূটনীতিকরা এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে।

আর সর্বশেষে যেটি নিয়ে বিএনপি আসলে ব্যাপকভাবে কোণঠাসা হয়েছে যে, গতকাল থেকেই পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপারেশন শুরু করেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পুলিশের এই অভিযানের কারণে যুবদলের নেতা টুকু গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়াও গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে। ফলে বিএনপি সমাবেশের আয়োজন কি করবে বরং নিজেরাই এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। বিএনপির কর্মীরা এখন নিজেদের মামলা এবং গ্রেপ্তারি এড়ানোর জন্য পালিয়ে বেড়াতে শুরু করেছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে বিএনপি ঢাকায় যে একটি সফল সমাবেশ করতে পারবে না, এটা মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে। আজ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ১ থেকে ১৫  ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্লক রেইড এবং বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে, পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এর ফলে বিএনপির ১০ ডিসেম্বর নিয়ে যে পরিকল্পনা ছিলো তা ভেস্তে যেতে বসেছে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে বিএনপি যে অর্জন করেছিলো সেই অর্জন কি ১০ ডিসেম্বর বিসর্জন যেতে বসেছে? এই প্রশ্নই এখন বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭