ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদা জিয়া কার: বিএনপির না আওয়ামী লীগের?


প্রকাশ: 04/12/2022


Thumbnail

খালেদা জিয়াকে নিয়ে ধুম্রজাল কাটছেই না। রওশন এরশাদ যেমন জাতীয় পার্টিতে আওয়ামী লীগের জন্য একজন ইতিবাচক নেতা, ঠিক তেমনি বেগম খালেদা জিয়াও কি বিএনপিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেছেন? এই প্রশ্ন এখন উঠেছে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যখনই সংকটে পড়ে তখনই রওশন এরশাদ ত্রাতা হয়ে সামনে আসেন এবং সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যদিও রওশন এরশাদের জাতীয় পার্টিতে প্রভাব খুবই কম। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর জাতীয় পার্টিকে পুনর্গঠনে রওশন এরশাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এরশাদ যখনই জেলে গেছেন তখনই তিনি জাতীয় পার্টির হাল ধরেছিলেন। এ কারণে জাতীয় পার্টিতে তার একটা শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টিতে তিনি গ্রহণযোগ্য নেতা নন। তার ঠিক বিপরীত অবস্থা খালেদা জিয়ার। খালেদা জিয়া এখনো বিএনপিতে অবিসংবাদিত নেতা। বিএনপিতে তার জনপ্রিয়তার ধারেকাছেও কেউ নাই।

কিন্তু রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টিতে খুব বড় প্রভাব বিস্তারকারী নেতা না হলেও বিভিন্ন সংকটের সময় তিনি আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে রওশন এরশাদের কারণে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ভোট বর্জন ঘোষণা সফল হয়নি। রওশন এরশাদের কারণেই জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেছিল এরশাদের জাতীয় পার্টি। আবার এখন জাতীয় পার্টির মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্য বা গোপনে বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলো এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কৌশল গ্রহণ করেছিলো তখন রওশন এরশাদ এই অসুস্থ অবস্থাতেও অবস্থান নিয়েছেন এবং তার অবস্থানের কারণেই জাতীয় পার্টি এখন সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে খানিকটা হলেও সরে এসেছে। রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কখনোই মূল নেতা ছিলেন না। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াই বিএনপির মূল নেতা। বিশেষ করে ১৯৮১ সালের পর থেকে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এমন পরিস্থিতি ছিলো ২০০১ সালের আগ পর্যন্ত যে তার কথাই বিএনপিতে শেষ কথা। বিএনপিতে এই বিপুল জনপ্রিয় নেতা ২০০১ সালের পর আস্তে আস্তে দলে প্রভাব এবং কর্তৃত্ব হারাতে থাকেন। তিনি তার পুত্রের কাছেই তার নেতৃত্বকে সমর্পণ করতে বাধ্য হন। কিন্তু তারপরও কর্মীদের কাছে এখনো তিনি জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সেই বেগম জিয়ার অবস্থান কি, এই নিয়ে বিএনপিতে ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির অনেক নেতা আশা করেছিলেন যে, আন্দোলনের এক পর্যায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নয়াপল্টনে নিয়ে আসা হবে এবং এখান থেকে সরকারকে একটা বড় ধরনের বার্তা দেয়া হবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া নিজেই সেই প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছেন এবং এ ধরনের কোনো কিছু না করার জন্য বিএনপি নেতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা রহস্যময়। তিনি সম্প্রতি বিএনপির অন্তত দুজন নেতাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, সরকারের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার একটি যোগাযোগ রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার সাথে এই যোগাযোগের মূল সূত্র হলো শামীম এস্কান্দার যিনি বেগম খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্ত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সরকারের একটি গিভ এন্ড টেক নির্বাচনের সময় হতে পারে, এমন গুঞ্জন বিএনপির মধ্যে শোনা যাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিকে নির্বাচনে নিবেন, তার বিনিময়ে নির্বাচনের পর বেগম জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি সরকার দিতে পারে। এমন একটি সমঝোতার ভিত্তিতেই বেগম খালেদা জিয়া এখন তার বাড়িতে অবস্থান করছেন এবং যেকোনো সময় বিএনপির আন্দোলনকে চুপসে দেওয়ার মতো ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব তার রয়েছে। তাই বিএনপির মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, বেগম খালেদা জিয়া আসলে কার? তিনি কি বিএনপি না আওয়ামী লীগের?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭