প্রকাশ: 05/12/2022
সম্প্রতিকালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। সাবেক ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন সেটি একটি মোটর সাইকেলকে ধাক্কা
দিলে এই মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা হয়। আর এই মর্মান্তিক ঘটনার সূত্র ধরে আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে :ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা-
মুক্তি কোথায়?
বিজয়ের মাসে আমাদের হৃদয় এমনিতেই ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানীরা
যে বর্বর হত্যাকান্ড সারা দেশে চালিয়েছিল সেই সব স্মৃতিগুলো থেকে।বিজয়ের মাসে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সাবেক শিক্ষক যে বর্বরতার পরিচয় দিলেন, কিংবা ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারী
২০০৯ বিডিআর সদর দপ্তরে বর্বরতার যে নির্মম ইতিহাস রচিত হলো তার থেকে মুক্তির
আকুলতা আমাদের সকলের।
কিন্তু কোথায়
আমাদের মুক্তি? এক সাগরের রক্তের বিনিময়ে কিংবা ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রক্তের বিনিময়ে যে আমাদের যে মুক্তি ১৬ ডিসেম্বর হয়েছিল সেটি কি তবে আবার কোথাও বন্দি হয়ে আছে ?
আমাদের ছাত্ররা যে ক্যাম্পাসে শান্তিতে নেই
সেটা আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সমাবর্তন ভাষণে উঠে এসেছে।
সমাজ জনগণ অভিভাবক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন যখন তখনি এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
কিছুদিন আগে আমি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নিয়ে কিছু কথা
লিখেছিলাম। সেখানে আমি এক শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধার নীরবতা আকুলতা নিয়ে যে লেখাটি
লিখেছিলাম তার সঙ্গে ক্যাম্পাস নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম। লেখার
আগে তুখোড় সাবেক ছাত্র নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য জনাব এস এম বাহালুল
মজনুন চুন্নু ভায়ের সঙ্গে সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে হাটতে হাটতে কিছু কথা হয়েছিল
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে এবং তিনি কি পরামর্শ দিয়েছিলেন সে গুলো বলছিলেন। তার বক্তব্য গুলোর সঙ্গে আমার চিন্তাগুলো মিলে
যাওয়াতে লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাবেক শিক্ষার্থীর কথাগুলোর
গুরুত্ব দেবেন। হয়তো তারা ভাবছেনও। সেটা যাই হোক , আজ আবার ছাত্রদের দাবির সঙ্গে আমি সহমত
পোষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও
সারাদেশের সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কগুলো সাধারণ
জনগণের জন্য খুবই প্রয়োজন।সুতরাং, সেখানে সেনানিবাসের মতো বিধিনিষেধ আরোপ সম্ভব নয়। তবে তার পরেও অনেক কিছু
করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলো খুবই প্রশস্ত। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন দেখেছি শিক্ষা ভবন
থেকে কার্জন হলের সামনে দিয়ে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত
আলাদা রিকশার লাইন ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি
কর্পোরেশন খুব সহজেই সেই রকম একটি ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে
চলতে পারে সেজন্য ফুটপাতগুলো হকার মুক্ত করে দিতে পারেন। এবং ফুটপাতগুলোতে যাতে
মোটর সাইকেল বা সাইকেল নিয়ে কেউ পথচারীদেরকে অত্যাচার না করতে পারে সেজন্য
ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এমনকি ফুটপাথগুলোকে রক্ষা করতে গ্রীল দিয়ে ঘিরে দিতে পারেন তাতে করে নিদৃষ্ট স্থান দিয়ে পথচারী পারাপার হবে।
এছাড়া গতিসীমা সর্বোচ ১০ কিলোমিটার করে দিতে পারেন। ভারী যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ হতে পারে। আমার এই লেখাটি পড়েও সেরকম মন্তব্য শুনতে হবে হয়তো।
প্রসঙ্গক্রমে বলি, আমি রাজনীতি , সমাজের
অবস্থা , শিক্ষা
ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলি।সেগুলো যারা পড়েন বা শোনেন তাদের অনেকেই আমাকে
পরামর্শ দেন নিজের কথা ভাবতে। আমি তাদের পুনরায় বলি সমাজে
আজ অসহায় মানুষ, ছাত্র ,
শিশুদের নিয়ে কথা
বলার মানুষ কমে গেছে। ক্ষমতায় যারা আছেন
তারও নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করেন। আমরা
শুনি পুলিশরা নাকি সবচে ক্ষমতাবান। কিন্তু
তাদের সঙ্গে যখন কথা বলি তারাও বলেন- তারা কি
রকম অসহায়! এইতো গুলিস্তানের সামনে সিএনজি চালকদের
কাছ থেকে চাঁদা তুলছে পুলিশের সামনেই! তারা কতটা অসহায় তা দেখে সকলেই মুখ বুজে চলে
যান। আমি চেষ্টা করেছি, প্রতিবাদ করেছি।হয়তো সেজন্য আমি নিজের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছি !
কিন্তু বিবেকের তাড়নায় নীরব থাকতে পারিনি ! আমার প্রতিবাদ সুবিধাভোগীদের ভালো
লাগছে না বলে নিজের বিপদ তৈরী হচ্ছে।
পরিবারের চিন্তা বাড়ছে। তথাপি আমি করছি প্রতিবাদ। আমার লেখার
পাঠক/বন্ধুরা জানতে চেয়েছেন "হুমকি
কে দিল, কেন দিল জানালে উপকৃত হই।" আমি
তাদের উত্তরে বলতে চাই - অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদে যার সংক্ষুব্ধ তারাই
আমাকে হুমকি দিয়েছে।
আমাদের
উপাচার্যরা কত অসহায় তা আমার চেয়ে হয়তো তারাই ভালো বোঝেন।তারা একটি ভালো পদক্ষেপ
নিলে আরেকজন তার বাগড়া দেন। একজন যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন
তথাকথিত সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের কাছে।একটি শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করবার চেষ্টাকে
ভণ্ডুল করতে একটি মহল সবসময় চেষ্টা করেন।উপাচার্যকে অসহায় দেখে অনেকেই চুপ
থাকেন।আজ আমাদের সকলের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
সুতরাং , সময় এখন জাগরণের। সবার আগে মাননীয় উপাচার্যদেরকে শক্ত হতে হবে এবং জনগণ তাঁদের জাগরণের অপেক্ষায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নিরাপত্তা
সহ ডাস্টবিনের দাবি করেছেন।তারা দাবি করেছেন উপাচার্য মহোদয়ের নিকট যত অভিযোগ জমা
পড়েছে সেগুলোর সমাধান দাবি করেছে। আজ এসময়ে মনে
পড়লো আমার প্রিয় সংগঠন রোটারাক্ট ক্লাব অফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। তারা
ক্যাম্পাসে কিছু ডাস্টবিন দিয়েছিলো তখন মাননীয় উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল
মান্নান। উপাচার্য মান্নান স্যার ছাত্রদের
দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে উপাচার্য হয়ে মিছিল করেছেন স্বৈরাচারী
এরশাদের নিপীড়ন নির্যাতনকে সহ্য না করতে পেরে।আজকের উপাচার্যরা সেই অবস্থান নিতে
চাইলে কি হবে জানিনা , তবে এরশাদ
আব্দুল মান্নান স্যারকে সরিয়ে দিয়েছিলো।
কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রোটারাক্ট ক্লাবের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল
ইসলামকে , যিনি এখন
বাংলাদেশ প্রতিদিন এর বার্তা সম্পাদক , বলেছিলাম অনুরূপ একটি ব্যবস্থা নিতে।
গতকাল পত্রিকায় দেখলাম তার প্রতিষ্ঠান বসুন্ধারা গ্রুপ সামর্থ্যহীনদেরকে
হজে পাঠাচ্ছে। আশা করি তিনি তার প্রতিষ্ঠান বসুন্ধারা
গ্রুপকে অনুরোধ করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে।এভাবে যদি দেশের
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ায়, তবে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয় পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উপরে উঠে আসবে।
ফুটপাথ , রিকশার আলাদা লেন ছাড়া গতিমাত্রা
নিয়ন্ত্রণ সাইন ও ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা থাকা দরকার আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক
হারে মোটর সাইকেল ব্যবহার করছে। সেগুলোকে
নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। সেজন্য ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।যে কথা আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বলছি, সেই কথা গুলো সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত
জরুরি।
আমাদের ছাত্র -ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক
পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে চায় বলে তারা র্যাংকিংয়ের কথা বলে। সুতরাং সিঙ্গারা সমুসার যুগ থেকে উত্তরণে
উপাচার্যদেরকেই আগে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
আপনাদেরকে অনেকেই পরামর্শ দেন নিয়োগের ৪ বছর যাতে সম্পন্ন করতে পারেন
সেদিকে মনোযোগ দিতে। দোহাই , আপনারা সেই মেয়াদ পূরণের সংস্কৃতি থেকে
মুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মুক্তির বার্তা দেন। জনগণ এখন শিক্ষক -শিক্ষার্থীদের মুখে তাকিয়ে
আছে।
আগামী কয়েকদিন পরে মুক্তির সংগ্রাম ও
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জনে অনন্য ভূমিকা রেখে যে সংগঠন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে সেই
সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন।
আপনাদের সম্মেলনে শিক্ষার উন্নয়নের ভাবনাগুলো স্থান পাবে বলে আমার আশা।
" আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে "- কবির এই ছন্দ মিলিয়ে বলতে চাই
- "ছাত্রলীগ যদি না জাগে আপা কেমনে
মুক্তি আসবে ?"
ছাত্রলীগের লক্ষ লক্ষ কর্মী সরকারের
পাশে আছেন। আপনাদের একটু সমাজ ভাবনা
জাতিকে উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে শান্তির সৈকতে নিয়ে যাবে। ক্যাম্পাস নিরাপত্তা যাতে সম্ভব হয় , সড়কে নিরাপত্তা ও শৃংখলা যাতে থাকে
সেজন্য আপনাদের একটু দায়িত্ব নিতে হবে।
আপনারা আপনার ক্যাম্পাসে সেচ্ছাসেবক হিসেবে যদি কাজ করেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃংখলার দৃষ্টান্ত
সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে এবং সেটা নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করবে। জনগণ এখন একটু
শান্তি চায়।আপনার কি শান্তির পায়রা মুক্ত করে সম্মেলন শেষে শান্তির দূতের
ভূমিকায় একটু সময় দেবেন কি?
সারা দেশেই পথে নিরাপত্তা নেই পরিবহন
শ্রমিক , মালিক ও
তাদের সহযোগীদের কারণে। উন্নয়নের সুফল যাতে মানুষ আরও সুন্দরভাবে ভোগ করতে পারে
সেজন্য সরকারের মনোযোগ আরও বেশি কাম্য। আর যেন সড়ক পথে কিংবা ক্যাম্পাসে নির্মমতার
শিকার না হয় সেজন্য আমাদের জাগরণ প্রয়োজন।
১০ তারিখ যারা সরকার পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন তাদের জন্য বলছি - সরকারকে
চাপে না ফেলে দেশের জনগণ যাতে একটু শান্তি পায় সেজন্য দলকে কাজে লাগান। লক্ষ লক্ষ লোক দেখিয়ে পাকিস্তানে বেনজির বা
নওয়াজ শরীফ কিছুই করতে পারেনি। বরং,
নিজ নিজ এলাকায়
কিছু করলে জনগণের কাছে প্রিয় হতে পারবেন।
যেদিন জনসভার সংষ্কৃতি থেকে রাজনীতি মুক্ত হবে, সেদিন কেবল গণতন্ত্রই নয় সব ধরনের
মুক্তি আসবে। জনসভা এখন জনগণকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে। সড়কের নিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়ছে। এখন জনসমাবেশ নয়
জনগণের পাশে দাঁড়ানোর সময়।শৃংখলা রক্ষায় আমাদের পুলিশ কর্তৃপক্ষ এমনিতেই হিমশিম
খাচ্ছে - সেই সময়ে জনসভার রাজনীতি তাদের সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে এবং তাতে আমাদের
সকলের নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করছে।
পরিণামে আমরা এক দুর্যোগের দিকে ধাবিত হচ্ছি। প্লিজ - আমাদেরকে দুর্যোগ থেকে মুক্তি দিতে
জনসভার রাজনীতি থেকে সরে আসুন।জনগণ এবার
তাকেই ভোট দেবে যারা জনগণের শান্তির কথা ভাবে -জনসভা দেখে নয়!
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭