ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

পরাজিত ট্রাম্প কি আবার ফিরছেন?


প্রকাশ: 06/12/2022


Thumbnail

গত ১৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, আগামী ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। অথচ এই ঘোষণার সপ্তাহখানেক আগেই অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে চরমভাবে ব্যর্থ হয় পছন্দেরপ্রার্থীরা।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচারে ট্রাম্প তাঁর নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের ‘লাল ঢেউ’ তোলার আহ্বান জানান। তবে বাস্তবে তা ফলেনি। বিপরীতে নির্বাচনী ফলাফলে ফুটে উঠেছে তাঁর হতাশা ও কপটতার প্রতিচ্ছবি; যদিও কিছু প্রার্থীর পক্ষে জোরেশোরেই প্রচারে নেমেছিলেন তিনি।

দীর্ঘ ও সামান্যই উদ্দীপক ওই ঘোষণায় ট্রাম্প নিজ কর্মকাণ্ড ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানির মজুত ও বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন, সেসব ছিল মিথ্যা, অর্ধসত্য ও বিকৃতিতে ভরা। যদিও এটি সত্য, ট্রাম্প নতুন করে বড় যুদ্ধ বাধাননি; যেটি কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য কৃতিত্বই। তবে তাঁর অতি জাতীয়তাবাদী চেতনায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ট্রাম্পের ঘোষণায় ছিল তাঁর গতানুগতিক কৌশলের ছাপ; পুরোটাই ছিল অসার ও তিক্ততাপূর্ণ। মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা সামান্য ব্যবধানে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠের আসনে ফিরলেও এর জন্য নিজের কৃতিত্ব দাবি করেছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বাইডেন কতটা সামাল দিতে পেরেছেন, তার একটি পরীক্ষা ছিল মধ্যবর্তী নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তির দিকে থাকা মূল্যস্ফীতি ও বাইডেনের পড়তির দিকে থাকা জনপ্রিয়তার ঘাড়ে চেপে এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা বড় জয় পাবেন বলেই ধরা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যে ফলাফল এসেছে, তা দলটির জন্য হতাশাজনক। আরও একবার ট্রাম্প প্রমাণ করলেন, রিপাবলিকান দলে তিনি যতটা না সম্পদ, তার চেয়ে বেশি বোঝা হিসেবেই রয়েছেন।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের এত সাফল্য দেখতে পাবে যে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তবে রিপাবলিকান দল ও নিজ দেশের জন্য এত ব্যর্থতা ডেকে এনেছিলেন যে মার্কিনরা একপ্রকার বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন।

পরে ট্রাম্পের নেতৃত্বে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান রিপাবলিকানরা। ২০২০ সালে গিয়ে সিনেট এমনকি হোয়াইট হাউসেও পতন হয় তাঁদের। গত মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের পছন্দের অনেক প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এতে করে ‘লাল ঢেউ’ তোলার বিপরীতে চরম অপমানের মুখে পড়েছে দলটি। সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে বিফল হয়েছে তারা।

২০২০ সালের নির্বাচনে হারের পর ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। ওই দাবি যে মার্কিনরা আমলে নেননি, তা মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রার্থীদের পরাজয়ের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প যেন ঘূর্ণিঝড়ের মতো যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সুনাম তছনছ করে দিয়েছেন। দেশটির গণতন্ত্রের ভিত্তিও নড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এখন এটা পরিষ্কার যে ট্রাম্প পরীক্ষিতভাবে একজন পরাজিত মানুষ।  

এরপরও ট্রাম্প বিভীষিকার শেষ দেখা যাচ্ছে না। অনেক মামলা-মোকদ্দমা ঘাড়ে নিয়ে রিপাবলিকান দলে অনেকের বিরোধিতার মুখে পড়েও তিনি জানিয়েছেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন। তবে গত তিন নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে দলটি থেকে নির্বাচিত গভর্নর ল্যারি হোগানের ভাষ্য, এবার ট্রাম্পের সরে দাঁড়ানো উচিত।

রাজনৈতিক জীবনে গণতন্ত্রের বেশির ভাগ মূলনীতি ও ভিত্তিগুলো এড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় থাকাকালে স্বাধীন গণমাধ্যম ও বিচারব্যবস্থার গলা চেপে ধরেছিলেন তিনি। তিনি যদি ২০২০ সালের নির্বাচনে জয় পেতেন অথবা তাঁর পছন্দের প্রার্থীরা যদি এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সফল হতেন, তাহলে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে আরও কিছুটা সময়ের জন্য উদ্ধার করা সম্ভব হতো না।

ভালো দিকটা হচ্ছে, ট্রাম্পের দল ও তাঁর পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত না করার মধ্য দিয়ে খাদের কিনার থেকে ফিরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প রিপাবলিকান দলকে নতুন করে খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে পারেন। দলের প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। আর এটাই তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। আত্মবিশ্বাসী ট্রাম্প বলতে পারছেন, ‘আমাকে মনোনীত করুন, নতুবা ঝুঁকি নিন।’

রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প লড়বেন, কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা এখনো সম্ভাব্য প্রার্থীর বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি। এটা ট্রাম্পকে এগিয়ে রেখেছে।

যদিও নির্বাচনের এখনো প্রায় দুই বছর বাকি। তাই চূড়ান্তভাবে কিছু বলার সময় আসেনি। তবে, যদি ডেমোক্র্যাট দল থেকে জো বাইডেন আবার লড়তে চান, তাহলেও ট্রাম্প বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। কেননা, বাইডেনের বয়স ৮২ বছর। এই বয়সী একজন ব্যক্তির বিপরীতে নির্বাচনে ট্রাম্প তুখোড় অবস্থান নেবেন, এটা অনুমেয়।

ট্রাম্প যদি আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারেন, তবে তা হবে নজিরবিহীন। কিছু বিষয় স্পষ্ট যে ট্রাম্পের ফিরে আসার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রবিরোধী উগ্র ডানপন্থীদের জয়জয়কার দেখা যাবে। বিশেষত, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডব চালানোর পর। ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ঘৃণা ও বর্ণবাদের বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকেই ট্রাম্প সফলভাবে পরাজিত হয়ে আসছেন। এখন সময় এসেছে তাঁকে আরেকবার পরাজিত করার ও সেটা সবার স্বার্থেই।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭