ইনসাইড পলিটিক্স

আবার কি অন্ধকার টানেলে প্রবেশ করছে বিএনপি?


প্রকাশ: 08/12/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বিএনপি একা যতবার সহিংস পথে আন্দোলন করতে চেয়ে ততবার তারা অন্ধকার টানেলে প্রবেশ করেছে। দল সংকুচিত হয়েছে, দলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছে এবং দলের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে। বিএনপি কখনোই  এককভাবে জ্বালাপোড়াও আন্দোলন করে বিজয়ী হতে পারেনি। ১৯৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে আওয়ামী লীগ আন্দোলন শুরু করে। তারপর আওয়ামী লীগের হাত ধরে বিএনপি সাত দলীয় জোটের মাধ্যমে হাটি হাটি পা পা করে পেছন থেকে আন্দোলন করে। এরশাদের পতনের পর বিএনপি ক্ষমতায় আসে। সে সময় আওয়ামী লীগের আন্দোলন প্রতিহত করতে পারেনি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেও বিএনপি একক শক্তিতে আন্দোলন করতে পারেনি। বরং সেই সমস্ত আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর হাওয়া ভবন গড়ে ওঠে। দুর্নীতি-লুটপাটের এক স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় বিএনপি-জামায়াতের দৌঁড়াত্বে। দেশের জনগণ অস্থির হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে যখন বিএনপি ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয় তখন রাজনীতিতে এক সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়। এরপর নানা রকম আন্দোলন-সংগ্রাম, সহিংসতার পর আসে সেনা সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার। ওয়ান-ইলেভেন আসার পর বিএনপি কোনো রকম আন্দোলন করতে পারেনি এবং আন্দোলনের চেষ্টাও করতে পারেনি। বিএনপি প্রথম সহিংস আন্দোলনের চেষ্টা শুরু করে ২০১৩ সালে। ওই সময় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দেয় বিএনপি। সারাদেশে শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল, অবরোধ। বাসে আগুন দেওয়া সহ নানা রকম সহিংস কর্মসূচি। কিন্তু ওই সহিংস কর্মসূচিতে বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরকারের পতন ঘটেনি। এরপর বিএনপির মধ্যে একরাশ হতাশা তৈরি হয়। এখনও বিএনপির মধ্যে অনেকেই মনে করেন ২০১৩ সালের নির্বাচনের না যেয়ে আন্দোলন করাটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। পরের বছর ২০১৪-তে আবার বিএনপির আন্দোলন শুরু করে। এবার আন্দোলন শুরু করে সংসদ বাতিলের দাবিতে। সেই আন্দোলনে লাগাতার অবরোধ ডাকে, গানপাউডার দিয়ে গাড়ি পোড়ানো হয়, বহু মানুষ হত্যা করা হয়। কিন্তু সেই আন্দোলনেও শেষ পর্যন্ত হতাশা নেমে আসে। বিএনপি সেই আন্দোলনে তো বিজয়ী হতে পারেই নি বরং এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি তার শেষ শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলে। মোটামুটি কোমায় চলে আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রধান এই রাজনৈতিক দলটি। 

এরপর দীর্ঘ আট বছর কোনো আন্দোলন করতে পারেনি বিএনপি। আট বছর পর এখন বিএনপি আবার নতুন করে আন্দোলন করছিল। আর ২০১৩ ও ২০১৪ অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে বিএনপি সহিংস পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ভালোই সমাবেশ করছিল। কিন্তু ঢাকায় এসে যখন বিএনপি কিছুটা উজ্জীবিত হলো, তারা মনে করলো যে, সরকারকে চাপ দিয়ে নতি স্বীকার করানো যাবে। সেই প্রেক্ষাপটেই তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে থাকল এবং সমাবেশের তিনদিন আগে থেকেই নয়াপল্টনে তারা অবস্থান গ্রহণ করলো যেন পুলিশ তাদেরকে বাধা দিতে না পারে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে যা ঘটলো তা হতাশাজনক। বিএনপির এখন ঢাকা মহাসমাবেশ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন ২০১৩ ও ২০১৪ মতো আবার হতাশার অন্ধকার টানেলে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির ভবিষ্য আসলে কি হবে তা বোঝা যাবে ১০ ডিসেম্বরে তারা শেষ পর্যন্ত কি করে তার ওপর।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭