ইনসাইড পলিটিক্স

চাপে রেখে বিএনপিকে নির্বাচনে নেয়ার চিন্তা


প্রকাশ: 09/12/2022


Thumbnail

সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ নয়াপল্টনে করার লক্ষ্যে বিএনপি ৭ ডিসেম্বর জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করেছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানেই তাদের অবস্থান গ্রহণের পরিকল্পনা ছিল। আর তিন দিন যেন সেখানে অবস্থান করে সেজন্য রশদ পাতিও দলীয় কার্যালয়ে মজুদ করা হয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই উদ্যোগ ভেস্তে দিয়েছে। স্পষ্টতই বিএনপির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে সরকার। বিএনপিকে আর আন্দোলনে না দাঁড়াতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সামনে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে বক্তব্য রেখেছেন এবং বিএনপির আন্দোলনের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদেরকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তারা আগুন লাগালে তাদের হাত সেই আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো কঠোর উচ্চারণ প্রধানমন্ত্রী করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, বিএনপিকে আর মাঠে দাঁড়াতে দেবে না সরকার, তাদেরকে চাপে রাখবে।

নির্বাচনের এক বছর আগে থেকে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে। সর্বশেষ আগামীকাল ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই মহাসমাবেশে বিএনপি নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার স্পষ্টতই নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ করার ব্যাপারে বাধা প্রদান করেছে। বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কৌশল ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে। বিএনপিকে চাপে রেখে তাদেরকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এখন দেখার বিষয় সেই কৌশল কতটুকু সফল হবে। বিএনপি প্রধান নেতা বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত। তিনি দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। এখন সরকারের কৃপায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বলে তিনি বাড়িতে অবস্থান করছেন। তবে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। 

বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক। তিনিও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। মানিলন্ডারিং মামলায় তাকে হাইকোর্ট সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে বাকি যে নেতারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই মামলাগুলোকে সচল করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টন থেকে বিএনপির একাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সরকারি সূত্রগুলো বলছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অভিযান অব্যাহত থাকবে। এই গ্রেফতারের মাধ্যমে বিএনপির উপর চাপ সৃষ্টি করা হবে যেন বিএনপি আগামী এক বছর বড় ধরনের আন্দোলন না করতে পারে। বিএনপিতে হতাশা সৃষ্টি করে যেন না শেষ বিকল্প হিসেবে তারা নির্বাচনে যায় সেরকম একটি কৌশল ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। 

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত আন্দোলন করতে না পারে এবং ধরপাকড়ের মধ্য দিয়ে কোণঠাসা অবস্থায় যায় তাহলে তাদের সামনে নির্বাচন ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকবেনা। অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই তারা নির্বাচনে যাবে। তাছাড়া বিএনপির মধ্যে একটি বড় অংশ আছে যারা নির্বাচন করতে চায় তারা এখন দলের ভেতরে কোণঠাসা। যখন রুহুল কবির রিজভীর মতো নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। তখন নির্বাচনের পক্ষে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সামনে আসবেন এবং নিজেদেরকে রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এখন দেখার বিষয় যে, সরকার নির্বাচনে  এক বছর আগে থেকে বিএনপির উপর যে চাপ সৃষ্টি করেছে সেই চাপের কাছে বিএনপি কতটুকু নতি স্বীকার করে এবং শেষ পর্যন্ত ২০২৪ এর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে কিনা। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭