ইনসাইড গ্রাউন্ড

টাইব্রেকে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিলো ব্রাজিল


প্রকাশ: 09/12/2022


Thumbnail

কাতারের অনুষ্ঠিত হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসের শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে ধরা হয়েছিলো ব্রাজিলকে। একগাদা তারকা ফুটবলার নিয়ে কাতারে পা রাখে সেলেসাওরা। বিশ্বকাপে স্কোয়াডে থাকা দলের প্রতিটি ফুটবলারও ছিলেন দারুণ ছন্দে। কাতার বিশ্বকাপকে যদি বলা হয়, "অঘটনের বিশ্বকাপ" সেটা খুব একতটা অত্যুক্তিড করা হবে না। কেননা দোহার আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে আগত দর্শকরা সাক্ষী ঞলেন তেমন কিছুরই। দুর্দান্ত ব্রাজিলকে টাইব্রেকে রুখে দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত সেমিফাইনালে উঠে গেলো বলকান দেশটি। আর একবুক স্বপ্ন নিয়ে কাতারে পা রাখলেও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই দেশে ফিরতে হলো পাঁচবারের বিম্ব চ্যাম্পিয়নদের। শিরোপা স্বপ্ন আরো দীর্ঘাীযত হলো লাতিন আমেরিকার পরাশক্তিদের।

শুরু থেকেই বলের দখল রাখার চেষ্টা করেন দুই দলের ফুটবলাররা। ম্যাচের ৪ মিনিটেই ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগে ভীতি ছড়ান ভিনিসিউস। দারুণ গতিতে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যান তিনি। তবে তার নেয়া শটটি গ্লাভসে জমা করেন লিভাকোভিচ। নিজেদের মধ্যে বল দেয়া নেয়া করে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে দুই দলই। ১০ মিনিটে আবারো ক্রোয়েটদের পেনাল্টি বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন ভিনি। তবে সেখান থেকে গোলের সুযোগ তৈরি হয়নি।

তবে ম্যাচের ১৩ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সহজ সুযোগ নষ্ট করে ক্রোয়েশিয়া। ডান প্রান্ত থেকে পাসালিচের ক্রস থেকে বল পায়ে লাগাতে পারেনি জুরানোভিচ ও পেরিসিচ। সম্ভাব্য বিপদ থেকে বেঁচে যায় ব্রাজিল। দুই মিনিট পর লুকা মদরিচ গোলের চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। তার নেয়া শট হেডে ক্লিয়ার করেন এদার মিলিতাও।

১৯ মিনিটে ক্রামারিচও গোলের সুযোগ তৈরিতে ব্যর্থ হন। পরের মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নেইমারকে বল দেন ভিনি। ফিরতি পাস থেকে শট করলেও সোসা বল ক্লিয়ার করে দেয়। আবার বল পেয়ে সেখান থেকে গোলমুখে শট নেন নেইমার। তবে তা আটকাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ক্রোয়েট গোলরক্ষকে। ২৩ মিনিটে কাসেমিরোর শট লভরেনের গায়ে লেগে চলে গেলে নিজেদের প্রথম কর্নার পায় ব্রাজিল।

২৫ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে লং পাসে বল পান জুরানোভিচ। ব্রাজিলের রক্ষণভাগ অনেকটাই অরক্ষিত ছিলো। তবে দ্রুত গতিতে উঠে এসে জুরানোভিচের মাথার কাছ থেকে বল ক্লিয়ার করেন দানিলো। এসময় ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকারকে ফাউল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন দানিলো। টানা দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড পাওয়ায় ব্রাজিলের হয়ে পরের প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে পারবেন না এই ডিফেন্ডার।

২৯ মিনিটে নেইমারের ফ্রি-কিক থেকে গোলমুখ খুলতে পারেনি ব্রাজিল। সেখান থেকে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে ক্রোয়েশিয়া। তবে এলোমেলো শটে বল গ্যালারিতে পাঠান পেরিসিচ। দুই মিনিট পর নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ব্রজোভিচ। এরপরও দুই দল বেশ কয়েকবার আক্রমণে উঠার সুযোগ পেলেও, কাঙ্খিত গোলের দেখা পায়নি দুই দলের কেউই।

ম্যাচে বল পজেশন থেকে শুরু করে আক্রমণে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমানে সমানে লড়েছে দুই দল। ৪১ ভিনিসিউসকে ফাউল করায় মিনিটে ডি-বক্সের একদম বাইরে থেকে ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল। তবে সেখান থেকে নেয়া নেইমারের শট আবারো গ্লাভসবন্দী করেন লিভাকোভিচ। দুই মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে উঠার চেষ্টা করে ক্রোয়েশিয়া। তবে পেরিসিচের কাছ থেকে বল বিপদমুক্ত করেন থিয়াগো সিলভা। পরের মিনিটে আবার ক্রামারিচকেও শট নেয়ার সুযোগ দেননি সিলভা। নির্ধারিত সময়ে কোন দলই গোল না পেলে সমতায় শেষ হয় ম্যাচের প্রথমার্ধ।

বিরতির পর দারুণ দুটি সুযোগ হাতছাড়া করে ব্রাজিল। ৪৮মিনিটে বক্সের ভেতরে পাঠানো মিলিতার ক্রস থেকে ক্রোয়েট ডিফেন্ডার গাভারদিয়োলের পা থেকে বল জাচ্ছিলো জালের দিকে। তবে বিপদ হতে দেননি লিভাকোভিচ। সেখান থেকে আবারো আক্রমণের সুযোগ তৈরি করে সেলেসাওরা। নেইমারের কাছ থেকে বল পেয়ে শট করেন ভিনিসিউস। এবারো ক্রোয়েশিয়ার ত্রাতা হয়ে উঠেন লিভাকোভিচ। এ যাত্রাতেও বাঁচিয়ে দেন ক্রোয়েশিয়াকে। যদিও অফসাইডের বাঁশি বাজান লাইন্সম্যান। ডি-বক্সে হ্যান্ডবলের আবেদন করে ব্রাজিলের ফুটবলাররা। তবে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি। ৫৩ মিনিটে নেইমারের শট ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ। হতাশা বাড়ে ব্রাজিলের।

৫৬ মিনিটে দলে প্রথম পরিবর্তন আনেন তিতে। রাফিনিয়াকে উঠিয়ে অ্যান্তোনিওকে মাঠে নামান তিনি। ৬৪ মিনিটে আবারো একাদশে বদলি ফুটবলার নামান ব্রাজিল কোচ। এবার ভিনিসিউসের বদলি হিসেবে মাঠে আসে রদ্রিগো। ৬৬ মিনিটে ডি-বক্সে গোলকিপারকে পরাস্ত করতে পারেন নি লুকাস পাকুয়েতা। পোষ্টে নেয়া তার শটটি বুক দিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে আরো একবার ক্রোয়েশিয়াকে রক্ষা করেন লিভাকোভিচ।

৬৮ মিনিটে ক্রামারিচকে ফাউল করে ব্রাজিলের হয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন কাসেমিরো।  পরেরে মিনিটে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেন নি ক্রামারিচ। তবে বেশ কয়েকটি টানা আক্রমণে ব্রাজিলের রক্ষণে ভালই চাপ সৃষ্টি করে ক্রোয়েশিয়া। ৭১ মিনিটে দলকে এগিয়ে দিতে ব্যর্থ হন ক্রামারিচ। পরের মিনিটে ক্রামারিচ-পাসালিচকে উঠিয়ে পেতকোভিচ এবং ভ্লাসিচকে মাঠে নামাস ক্রোয়েশিয়ার কোচ।

৭৬ মিনিটে নেইমারকেও আটকে দেন লিভাকোভিচ। তার নেয়া শট দারুণ রিফ্লেক্সে পা দিয়ে ক্লিয়ার করেন ক্রোয়েট গোলকিপার। পুরো ম্যাচেই ক্রোয়েশিয়ার গোলবারের দ্বায়িত্ব সামলে ক্রোয়েশিয়ার ত্রাতা হয়ে ওঠেন তিনি। মদরিচকে ফাউল করে কার্ড দেখেন মার্ককুইনোস। ৭৯ মিনিটে পাকুয়েতার শটও আটকে দেন লিভাকোভিচ।

৮৪ মিনিটে রিচার্লিসনের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন পেদ্রো। দুই মিনিট পর এদার মিলিতাও পোষ্ট লক্ষ্য করে শট নিলেও তা অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়।  বাকি সময়েও গোলের দরজা খুলতে পারেনি ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়ার কেউই। ম্যাচের অন্তিম মুহুর্তে অ্যান্তোনিও'র শট আটকে দিতে বেগ পেতে হয়নি ক্রোয়েট গোলরক্ষক লিভাকোভিচকে। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। 

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই ক্রোয়েশিয়ার অর্ধে ব্যস্ত সময় কাটায় ব্রাজিলের ফুটবলাররা। তবে সেখান থেকে কোন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। ৯২ মিনিটে পেদ্রোের শট প্রতিহত হয়। ৫ মিনিট পর পেদ্রোর আরো একটি আক্রমণ নসাৎ হয়ে যায়। ১০৩ মিনিটে পেতকোভিচকে গোল করেত দেয়নি ব্রাজিল। ১০৫ মিনিটে দানিলোর শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়। 

তবে পরের মিনিটেই ব্রাজিলকে স্বস্তি এনে দেন নেইমার। গোল করে এগিয়ে দেন সেলেসাওদের। প্রথমাবারের মতো সাফল্য পায় কোন দল। এই গোল করে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের পাশে নাম লেখালেন নেইমার। ৭৭ গোল করে ব্রাজিলের জার্সিতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলে এবং নেইমার। বিশ্বকাপে এটি নেইমারের ৮ম গোল।

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। তবে তেমন কোন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বলকান দেশটি।  রক্ষণভাগ সামলে খেলতে থাকে সেলেসাওরা। তবে ম্যাচের ১১৭ মিনিটে পেতকোভিচ গোল করে সমতায় এনে দেন ক্রোয়েশিয়াকে। ম্যাচের একদম শেষ মুহুর্তে কাসেমিরোর শট আটকে দেন লিভাকোভিচ। ফল নিষ্পত্তির জন্য খেলা গড়ায় টাইব্রেকে।

স্পট কিডকি থেকে প্রথম শটে গোলো করে ভ্লাসিচ। তবে রদ্রিগোর নেয়া প্রথম শটটি ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ। দ্বিতীয় শট থেকে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে গোল করেন রোভরো মাজের। তবে পরের শটে গোল করে ব্রাজিলের আশা বাঁচিয়ে রাখেন কাসেমিরো। তুতীয় শট থেকে বেকারকে পরাস্ত করেন লুকা মদরিচ। ব্রাজিলের হয়ে তৃতীয় শটেও গোল করেন পেদ্রো। চতুর্থ শটে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ওরসিচ। তবে ব্রাজিলের হয়ে মার্ককুইনোসের নেয়া চতুর্থ শট বারে লেগে ফিরে আসে। ৪-২ গোলে টাইব্রেকে জয় তুলে নেয় গতবারের রানার্সআপরা।

আরো একবার অঘটনের সাক্ষী হলো ফুটবল বিশ্ব। দুর্দান্ত প্রতাপে থাকা ব্রাজিল এবারো বিদায় নিলো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। হতাশায় ভেঙে পড়েন নেইমার-অ্যান্তোনিওরা। আর উল্লাসে মেতে উঠেন ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা।

এতে আরো একবার শিরোপা স্বপ্ন দীর্ঘায়িত হলো সেলেসাওদের। আর প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালের টিকিট পেলো গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭