ইনসাইড থট

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ঘিরে এসব কি হচ্ছে


প্রকাশ: 10/12/2022


Thumbnail

আজ ১০ ডিসেম্বর ২০২২। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দিনটি অত্যন্ত গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন লড়াই করে গেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে তিনি সেই মানবাধিকারকে তৃতীয় ভাগে ২৬-৪৪ ধারা পর্যন্ত স্থান দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলটি বিশ্ব শান্তি ও সংহতি বজায় রাখতে অসামান্য অবদান রেখে আসছে। এমন একটি মর্যাদার দিনে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নীল নকশা করেছিল! সেই দিনটিকে যথাযথভাবে পালনের পরিবর্তে, আজ সারাদেশ আতংক ও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে কাটাবে! কি ভয়ানক কথা- খেলা হবে জনগণের ভাগ্য নিয়ে, নিরাপত্তা নিয়ে, শান্তি নিয়ে! আমাদের বোধ-শক্তি দিন দিন লোপ পেয়ে  যাচ্ছে কি? 

যখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন দিনটি পালনের জন্য আমার সংগঠন রোটারাক্ট ক্লাব অফ ঢাকা কসমোপলিটানকে ব্যবহার করেছি। সংসদ ভবনের সামনে মানবাধিকারের পোষ্টার প্রদর্শন আয়োজন করেছি। ১৯৮৭ সালে সেমিনার আয়োজন করে, সেখানে তৎকালীন বিশ্ব মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বিচারপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জনাব আবু আবু সাঈদ চৌধুরীকে প্রধান অতিথি করে আলোচনা অনুষ্ঠান করেছি। ১৯৮৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোটারাক্ট ছাত্রদেরকে নিয়ে শাহবাগ থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত মিছিল করেছি, যখন এরশাদ সাহেব সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছিলেন। মানবাধিকার বিষয়টি আমাকে এতটা ভাবায় যে ২০২০ সালে করোনার মাঝে “ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স” আন্দোলনে লক্ষ মানুষের সঙ্গে রাজপথে শরীক হয়েছি। এবার  গবেষণা পাশাপাশি বিভাগের  সিলেবাসে দুটি কোর্স সংযুক্ত করেছি। ইনশাল্লাহ আগামীতে আমার বিভাগের ছাত্রদেরকে আমি মানবাধিকার শেখাবো। ঠিক সেই সময়ে আমার দেশে একটি সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে খুবই পরিকল্পিতভাবে। এই সংকট থেকে কাদের কি লাভ হবে জানিনা, তবে মানবাধিকার বাস্তবায়নের দাবি আরও জোরালো হবে। আমাদের নেতারা কি বোঝেন এভাবে সংকট সৃষ্টি করা মানবাধিকার লঙ্ঘন? 

মানুষ রাজনীতিবিদের কাছে কেবল  উন্নয়ন নয় তারা চায় শান্তি , মর্যাদার জীবন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ও প্রচেষ্টা, সর্বস্তরে স্বাধীনতার  ভোগের সুযোগ এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার।  এবং এই চিরাচরিত প্রত্যাশা থেকেই রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয়  প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব। আর সেখানে একজন রাজনীতিবিদ প্রভাবক। যখন আমাদের সমাজ জীবন যুদ্ধের কারণে এক বিপন্ন অধ্যায় পার করছে, সে সময়ে কেন নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির পায়তারা?

মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এক বাণীতে বলেছেন, "আমরা গর্বিত জাতি এজন্য যে আমাদের সংবিধান জাতিসংঘের ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকারের সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ।" মানবাধিকার ঘোষণার  ৭৫ বছর পূর্তিতে মহামান্যর এই বক্তব্য খুবই অর্থবহ।  আমার কাছে মনে হয়, মহামান্য উদ্ভুত সংকট নিরসনে মানবাধিকারকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান দিয়ে আলোচনার দুয়ার খুলতে পারেন।দেশের উন্নয়নের সুফল সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি না করে যদি সকলের সমান অধিকারকে গুরুত্ব দেয় হয় তবে বিদ্যমান মানবাধিকার সংকটগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। 

রাজনৈতিক সহমর্মিতার অভাব যেমন অতীতে ছিল এখনো তেমনি পরিস্থিতি বিরাজমান। সরকার পরিবর্তনের উপায় হিসেবে টেনে হিছড়ে নামানোর চেষ্টা যেমন শুভ নয়, তেমনি বিরোধীদলকে বন্দিদশায় নিয়ে যাওয়া আগামী দিনগুলোকে জটিল করে তোলে। দীর্ঘদিন একটি দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের ভুলত্রুটিগুলো বেশি চোখে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা সেই ভুল ত্রুটিগুলোকে পুঁজি করে চর দখলের মতো ক্ষমতা দখল করবার পথে নেমেছেন তার পরিণতি সম্পর্কে যেটা জানেন তার ব্যতিক্রম হতে পারে। ২০০৬ সালের ৩০ অক্টোবর যেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল সেরকম একটি সংকটময় পরিস্থিতির উপর জোরারোপ অতীতের মতো না হয়ে আরও কঠিন এবং কষ্টকর হতে পারে। আর সেজন্য সাবধানতার প্ৰয়োজন। আন্দোলন করবার অধিকারকে সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত করলে কি পরিনাম হয় তা আমাদের অজানা নয়। সহানুভূতির রাজনীতি হোক আজকের দিনের প্রত্যয়। বিজয়ের মাসকে যেন আমরা কোনোভাবেই কলংকিত না করি, সেই দাবি সরকার ও বিরোধীদলের কাছে জনগণের পক্ষ থেকে পৌঁছাতে আমার আজকের লেখা। যারা জনগণের নিরাপত্তা দানে নিয়োজিত আছেন, তারা যেন নিজেদেরকে ঠিক পথে রাখেন সেটাই সকলের কাম্য।  

বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের এবারকার প্রতিপাদ্য  হচ্ছে- ‘Dignity, freedom, and justice for all’ (ডিগনিটি, ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল)। অর্থাৎ ‘মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং ন্যায় বিচার সবার জন্য’। আমরা কি স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে নাগরিকের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার দিতে পারছি? আমাদেরকে বিচারের জন্য আজও যুগের পর যুগ দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি গতকাল দুর্নীতি কমিশনে দেয়া এক রেকর্ডকৃত ভাষণে বলেছেন টাকা যার ক্ষমতা তার। এইরকম বক্তব্য আমাদেরকে যেমন প্রতিবাদী করে দেয় তেমনি দুর্নীতির একটি ভয়াবহ চিত্র সকলের সামনে ফুটে উঠে।  এটা থেকে বোঝা যায়, আমাদের স্বাধীনতা , মর্যাদা ও ন্যায়বিচার কতটুকু পাওয়ার আশা করা যায়। দুর্নীতির একটি সংবাদ ছাপতেও নাকি টাকা লাগে। সংবাদপত্রও নাকি টাকা ছাড়া আজকের সংবাদ ছাপতে চায় না, তেমনি টাকা দিয়ে মিথ্যা সংবাদও ছাপা যায়। মানুষের ভরসার জায়গাটা একসময় শিক্ষক -ছাত্রদের কাছে ছিল।  সেখানেও ঘুণ পোকা ধরেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের বিরুদ্ধে তাই দিনই দিন ক্ষোভ ঘনীভূত হচ্ছে।  সমাজে বিদ্রোহ যে কোনো সময়ে দেখা দিতে পারে। বিরোধীদলের জনসমাবেশে জনতার উপস্থিতি, সেই ইঙ্গিত বহন করে কিনা জানি না, তবে মানুষ শংকিত! এখন বিশ্বাসের জায়গাটা সংকুচিত হয়ে গেছে। আর সেগুলোর জানার যে সূচক আমাদের কাছে আছে তা সত্যতা প্রতিপাদন করে কি? মহামান্যর সমাবর্তন ভাষণ কিংবা দুর্নীতি কমিশনের ভাষণ আমাদেরকে এটাই বলে যে নাগরিকের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার পাবার অধিকার সংকুচিত হয়ে গেছে টাকার কাছে।  টাকা দিয়ে নীলক্ষেত থেকে গবেষণা কেনা যায় যখন, টাকা থাকলে কিছু একটা লিখে পত্রিকায় বা পুস্তক আকারে প্রকাশ করা যায় যখন, সুতরাং টাকার সঙ্গে বসবাস একপ্রকার অমর্যাদার জীবন , স্বাধীনতাহীনতা ও ন্যায়বিচারের অভাব। এখান থেকে মুক্তি কোথায়? আমরা সেটা জানি না অথবা জানলে বলতে ভয় পাই, অথবা যেটা জানি সেটাও ভুল হয়তো। তবে বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের এবারকার প্রতিপাদ্য বিষয় বাংলাদেশের নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।  


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭