ইনসাইড পলিটিক্স

ডিসেম্বর ঝড়ে লন্ডভন্ড বিএনপি: কি করবে?


প্রকাশ: 10/12/2022


Thumbnail

‘যত গর্জে তত বর্ষে না’ বিএনপির দুই মাসব্যাপী মহাসমাবেশ শেষ পর্যন্ত পর্বতের মূষিক প্রসবে পরিণত হলো। বিএনপি বলেছিল যে, ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে সরকারের কথায় দেশ চলবে না, খালেদা জিয়ার কথা দেশ চলবে। ১০ ডিসেম্বর সরকারকে লাল কার্ড দেখানো হবে ইত্যাদি বহু উত্তেজক বক্তব্য বিএনপির বিভিন্ন নেতারা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ বিএনপি শেষ পর্যন্ত যে মহাসমাবেশ করলো সেই মহাসমাবেশে নামমাত্র কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ৬টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে বিএনপি যে অর্জন করেছিল গত তিন দিনে ঢাকায় সেই অর্জন বিসর্জন দিলো। একাধিক কারণে ঢাকা সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি লন্ডভন্ড হয়ে গেলো বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। গত কয়েক মাস ধরে বিএনপি আস্তে আস্তে নিজেদেরকে সংগঠিত করেছিল, নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ছিল এবং তাদের সংগঠন ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। এরকম পরিস্থিতিতে সংগঠনকে আরও গুছিয়ে ধীরে সুস্থে আন্দোলন করাটাই ছিল রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয়। কিন্তু বিএনপি সেটি না করে ৬টি মহাসমাবেশ সফল হওয়ায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে এবং সরকার পতনের জন্য ঢাকার মহাসমাবেশকেই বেছে নেয়। কিন্তু ঢাকা মহাসমাবেশে আগে কৌশলের খেলায় সরকারের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে যায়। ডিসেম্বর ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিএনপি। 

প্রথমত, এই সমাবেশের আগে বিএনপি বলেছিল যে, নয়াপল্টন ছাড়া কোথাও তারা সমাবেশ করবে না। শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টন থেকে তারা গোলাপবাগে যেতে বাধ্য হলো। এটি তাদের নৈতিক পরাজয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো এখনো সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার মতো পরিস্থিতি বিএনপির হয়নি। 

দ্বিতীয়ত, সমাবেশ করতে যেয়ে বিএনপির অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিশেষ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ যে নেতারা মূলত মাঠে কাজ করতেন তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর ফলে সংগঠনের জন্য নতুন করে আন্দোলন তৈরি করা এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। আর এই প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। 

তৃতীয়ত, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কর্মীরা হতাশ হবে, তাদের মনোবল কমে যাবে। তারা বুঝতে পারলো যে, বিএনপি নেতারা আসলে এখনও সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলন করার জন্য প্রস্তুত নয়। এর ফলে কর্মীদের মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচি গুলোর ব্যাপারে দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকবে।

চতুর্থত, পরবর্তী কর্মসূচিগুলোতে কর্মীদের উপস্থিতি কমে যাবে। কারণ এখনই ইতোমধ্যে বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হয়েছে। তারা এখন মোটামুটি পলাতক জীবনযাপন করছে। এরকম পরিস্থিতিতে তাদের জন্য আবার নতুন করে মাঠে নামাটা দুরূহ হয়ে পড়বে। 

পঞ্চমত, আন্তর্জাতিক মহলও দেখবে যে, বিএনপির এখনও সামর্থের ঘাটতি রয়েছে এবং এই সামর্থ্যের ঘাটতি থেকে বিএনপি আর যাই হোক সরকার ফেলে দেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করেনি। 

ষষ্ঠত, বিএনপির মধ্যে যারা নির্বাচনের পক্ষে, যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায়, তারা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তারা আস্তে আস্তে দলকে নির্বাচন মূখী করার ক্ষেত্রে সাহস পাবে এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। কারণ তারা এখন বলতে পারবে যে, বিএনপি তো আন্দোলনের পথে গিয়েছিল তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। কাজেই আমরা এখন নির্বাচনে যাই। নির্বাচনের যে কয়টি আসনই পায় না কেন তা দিয়ে আস্তে আস্তে আমরা সংগঠনটিকে গুছিয়ে ফেলি। এরকম একটি চিন্তা-ভাবনা, মানসিকতা থেকেই বিএনপিকে সামনের দিকে এগোতে হবে। আর এ কারণেই ডিসেম্বর ঝড়ে বিএনপি লন্ডভন্ড হয়ে গেল। এখন আবার ২০১৪ পরবর্তী সময়ের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপিকে দল গোছাতে হবে। ততক্ষণে নির্বাচন তো এসে যাবে। বিএনপি কি করবে? 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭