ইনসাইড থট

আমার স্মৃতিতে শামসুল আলম বীর উত্তম


প্রকাশ: 10/12/2022


Thumbnail

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বেশ কিছু ছোট ভাই পেয়েছিলাম। যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ থেকে যুদ্ধ করেছে এবং তখন যুদ্ধের সময়ও কয়েক জন প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেকেই গাজী হিসাবে দেশে ফিরে এসেছে এবং তারা দেশ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এরা অনেকেই না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে। যেমন, গতকাল ফ্লাইট লেঃ শামসুল আলম আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। এই শামসুল আলম আমার খুবই আদরের ছোট ভাই এবং কিছুদিন আগে পর্যন্ত তার সাথে যোগাযোগ হয়েছে। বিশেষ করে সে না হলে তার সহধর্মিণী যে আমার নিজের ছোট বোনই বলা চলে, তাদের সাথে সবসময় যোগাযোগ হয়। সে যে পরিবারে বিয়ে করে তাদের তিনটি মেয়ে, তিনটি মেয়েই আমাকে আপন বড় ভাই মনে করত। মুক্তিযুদ্ধের সময় শামসুল আলম জানত যে, আমি এই পরিবারের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ এবং তিনটি বোনের আমি বড় ভাই বা মুরব্বি। এই কারণে আমার সাথে সে ওই বাড়িতে গিয়েছে এবং তিন বোনের বড় বোনের সাথে তার বিয়ে হয়। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত শামসুল আলমের সাথে বা ঐ পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের যোগাযোগ কখনো বিচ্ছিন্ন হয়নি। এমনকি আমার বিয়ের সময় আমার বড় ভাইয়ের সাথে শামসুল আলমের শশুর এবং অধ্যাপক মতিন এরা যান আমার মুরব্বী হিসাবে। 

তখনকার থিয়েটার রোড এখন শেক্সপিয়র সরণি সেখানে মেজর ওসমান সমস্ত লজিস্টিক সাপোর্ট ছিলেন এবং খন্দকার সাহেব যিনি আমাদের পরবর্তীতে মন্ত্রী ছিলেন এদের সকলের সাথেই আমার একটা ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং আমি দুপুরের সাধারণত থাকলে ওখানেই খেতাম, উনাদের উনাদের মেহমান হিসেবে। উনার আমার সাথে অনেক ব্যাপারে আলাপ করতেন। যেমন, কতজন রেগুলার সৈন্য রাখা যাবে, কতজন মুক্তিযুদ্ধ হবে এই নিয়ে ভারত সরকারের সাথে টেকনিক্যাল পয়েন্টে একমত হতে পারছিল না তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করতেছিল যদিও আমি এই ব্যাপারে টেকনিক্যাল বিষয় খুব একটা সাহায্য করতে পারিনি। কিন্তু এতে ঘনিষ্টতা বুঝায়। এই শামসুল আলমকে বিএনপি সরকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। বরখাস্ত করলে তার র্যাঙ্ক থাকে না এবং তিনি যে সুযোগ সুবিধা পান একজন রিটার্ড অফিসার হিসেবে তিনি কিছুই পেতেন না। শুধুমাত্র আমার জানামতে সম্ভবত আইনে হয় না দেখে তার বীর উত্তমটা নিতে পারেনি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তার সমস্ত সুযোগ সুবিধা এবং তার যথাযথ সম্মান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ফেরত দেন। 

শামসুল আলম বহুবার এ কথা বলতেন যে, ভাই, নেত্রীর মতো এরকম বড় মনের মানুষ হয়না। আর্মিতে একবার এরকম চলে যাওয়ার পর অনেকদিন পরে এসে আবার সমস্ত কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল না। এই ব্যবস্থা প্রচলন করেছেন এই দার্শনিক শেখ হাসিনা। কারণ তার একটা দূরদর্শিতা আছে। ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধাদের প্রয়োজন হবে এটা তিনি অনুভব করেছেন। সেই কারণে তাকে এই সম্মান দিয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমত যার জন্য তার মৃত্যুর পরে আর্মি, নেভী, এয়ার ফর্স সবার প্রধান অথবা প্রধানের পক্ষ থেকে এসে তাকে কিন্তু সম্মান জানানো হয়েছে। কিন্তু দেশ এমন একজন আকাশ যোদ্ধাকে হারালো যে পাকিস্তান বাহিনীকে বিশেষ করে তাদের এয়ারপোর্টে একদম শেষ করে দিয়েছিলন এই শামসুল আলাম।  শামসুল আলামের অবদান খুবই মনে রাখার মত। শুধু তাই নয়, তিনি ম্যাপ রিডিং ব্যাপারে খুবই ভালো বুঝবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে হারালাম একজন ছোট ভাইকে, দেশ হারালো একজন সত্যিকারের দেশ প্রেমিক এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর উত্তমকে। যার অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে চিরকালই যারা জানেন তাদের মনে রাখতে হবে। যারা জানেন না তাদের জানা প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ যেন আমার এই ছোট ভাই আলমকে স্বর্গে স্থান দেন এবং এদেশের জনগণ যেন এই মুক্তিযুদ্ধাকে ভুলে না যায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭