ইনসাইড বাংলাদেশ

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত বাঙালি জাতি


প্রকাশ: 13/12/2022


Thumbnail

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন। বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় যখন নিশ্চিত, ঠিক তখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়।

১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাদের গলিত ও ক্ষত বিক্ষত লাশ খুঁজে পায়। বুদ্ধিজীবীদের লাশে ছিল আঘাতের চিহ্ন। চোখ, হাত-পা ছিল বাঁধা। কারো কারো শরীরে ছিল একাধিক গুলি। অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকেই প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি।

১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্কলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন।

১৯৭১ সালের এই দিনে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে এক শ্রেণির দালাল এ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার এই নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্বপাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদের ছত্রচ্ছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এ বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এ পরিকল্পনা করে হানাদার বাহিনী।

তাই এ শোকের দিন স্মরণে প্রতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে আসছে বাঙালি জাতি। এ দিনে স্মৃতিসৌধের রক্তে রাঙা লাল বেদিতে ফুল দিয়ে জাতির সূর্যসন্তানদের সম্মান জানানো হয়। 

তারই ধারাবহিকতায়, যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে প্রস্তুত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ একেবারেই শেষপর্যায়ে।


সারাবছর অনেকটা অবহেলায় পড়ে থাকলেও ১৪ ডিসেম্বরের আগে সাজানো-গোছানো হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘিরে এখন চলছে যাবতীয় সাজগোজ।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে প্রবেশপথ ধুয়ে-মুছে সাফ করা হচ্ছে। কয়েকজন নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করছে। পরিষ্কার করছেন মূল বেদি ও বেদির আশপাশ। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১২টার দিকে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে।

দিবসটি ঘিরে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকার নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিয়েছে। এলাকায় সীমিত করা হয়েছে যানবাহন চলাচল। স্মৃতিসৌধের ভেতরে শুধু নিয়োজিত শ্রমিক, সিটি করপোরেশনকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকতে পারছেন।


গত তিনদিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন শকিফুল ইসলাম। তিনি বাংলা ইনসাইডার প্রতিবেদককে জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে আমরা ৫০-৬০ জন শ্রমিক তিনদিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। কাজ প্রায় শেষের দিকে।

মঙ্গলবার রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমিতে ঘুরতে আসেন কয়েকজন কলেজশিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখানে প্রায় সময় ঘুরতে আসি। কিন্তু আজকে ঘুরতে এসে একটু ব্যতিক্রম দৃশ্য চোখে পড়লো। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে একেবারে পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সারাবছর ধরে যদি এ জায়গাটিকে এমন পরিপাটি করে রাখা যায়, তাহলে স্মৃতিসৌধ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা খুশি হবেন।’

নিরাপত্তার ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর ঘিরে রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখানে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশসহ বাহিনীর একাধিক ইউনিট কাজ করছে। রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।’

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। স্মৃতিসৌধের ভেতরে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দিয়ে প্রতি বছর পরিষ্কার ও সাজ-সজ্জার কাজ করা হয়। স্মৃতিসৌধের বাইরে সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে পড়েছে। আমরা সবকাজ শেষ করেছি।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি:

যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আগামী ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। এদিন সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

দিনটি উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসানালয়ে বিশেষ মোনাজাত করা হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউড স্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। 




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭