ইনসাইড গ্রাউন্ড

মেসি-আলভারেজ নৈপূর্নে ফাইনালে আর্জেন্টিনা


প্রকাশ: 14/12/2022


Thumbnail

ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতেই দোহার লুসাইল স্টেডিয়াম যেন হয়ে ওঠে এক টুকরো বুয়েন্স এইরেস। গ্যালারী ভর্তি আকাশি-নীল সমর্থকেদর উল্লাস ধ্বনিই বলে দিচ্ছিলো ম্যাচের চিত্র। ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠে গেলো লিওনেল মেসিরা। বিশ্বকাপ শিরোপার আরো কাছাকাছি পৌঁছে গেল আর্জেন্টিনা। গত আসরে একই প্রতিপক্ষের গ্রুপ পর্বে হারের প্রতিশোধ নিলে সেই একই ব্যবধানে ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামতেই অনন্য এক রেকর্ড গড়েন লিওনেল মেসি। জার্মান কিংবদন্তি লোথার ম্যাথিউসের সাথে বিশ্বকাপে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েন তিনি। রেকর্ডের ম্যাচটিতে পুরো আলো যেন নিজের দিকে টেনে নিলেন মেসি। দি পলের দারুণ এক ক্রস থেকে গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন জুলিয়ান আলভারেজ। সেখান থেকে পাওয়া পেনাল্টি থেকে ম্যাচের প্রথম গোলটিও করেন মেসি। সেখানেও রেকর্ড মেসির। বাতিস্তুতাকে টপকে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১১টি গোলের মালিক এখন লিওনেল মেসি। যা চলতি আসরে তার পঞ্চম গোল।

ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটের খেলায় আধিপত্য দেখায় ক্রোয়েশিয়া। ৫৪ শতাংশ বল দখলে রেখে আর্জেন্টিনার রক্ষণে বারবার আক্রমণের চেষ্টা করতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ১৩ মিনিটে ডি-বক্সের লাইনে মেসিকে ধাক্কা দিয়ে ফেল দেন গভারদিয়োল। তবে আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের আবেদনে সাড়া দেননি ইতালিয়ান রেফারি দানিয়েল অরসাতো।

দারুণ প্রেসিং ফুটবল খেলে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেন লুকা মদরিচরা। ২২ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় দারুণ এক সুযোগ তৈরি করেছিলেন লিওনেল মেসি। তবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারেদের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ২৫ মিনিটে আরো একটি সুযোগ কাজেল লাগাতে ব্যর্থ হন জুলিয়ান আলভারেজ। পরের মিনিটে ফার্নান্দেজের নেয়া দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ।

দুই মিনিট পর আর্জেন্টাইন রক্ষণে সুবিধাজনক স্থানে ফ্রি-কিক পেয়েও কাজে লাগাতে পারেন নি লুকা মদরিচ। ৩১ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন পেরিসিচ। তবে তার নেয়া বাঁকানো শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়। ৩২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে জুলিয়ান আলভারেজ ঢুকে পড়েন ডি-বক্সের মধ্যে। বিপদ বুঝতে পেরে এসে তাকে চার্জ করেন লিভাকোভিচ। পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা।

৩৪ মিনিটে সেখান থেকে গোল করে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন লিওনেল মেসি। এতে ১১ গোল নিয়ে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে টপকে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন মেসি।

পাঁচ মিনিট পরই আবারো উল্লাসে মাতে আকাশি-নীলরা। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে একাই আবারো ক্রোয়েশিয়ার ডি-বক্সে প্রবেশ করেন আলভারেজ। দুই ডিফেন্ডারের সাথে বলের দখল নিয়ে লড়াই শেষে ঠান্ডা মাথায় লিভাকোভিচকে পরাস্ত করেন আলভারেজ। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আলবিসিলেস্তারা। ৪৩ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে পোষ্টে হেড নিয়েছিলেন তাগলিয়াফিকো। তবে বামে ঝাঁপিয়ে তা ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ।

প্রথমার্ধের একদম শেষ মুহুর্তে ক্রোয়েশিয়ার ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিলো। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মদরিচের নেয়া শট ওতামেন্দির মুখে লাগে। সেখান থেকে জুরানোভিচের নেয়া শট কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করেন এমি মার্টিনেজ। শেষ দিকে মেসি একাই আবার ভীতি ধরিয়ে দিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ানদের মনে। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

বিরতি থেকে ফিরেই দলে দুটি পরিবর্তন আনেন জ্লাতকো দালিচ। বর্না সোসা-পাসালিচকে উঠিয়ে নিয়ে অরিসিচ ও ভ্লাসিচকে নামান তিনি। গোলের আশায় মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে লুকা মদরিচরা। উল্টো ৪৯ মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারতো আর্জেন্টিনা। আলভারেজের কাছ থেকে সুবিধাজনক জায়গায় বল পেলেও শট নিতে পারেন নি এনজো। সেখান থেকে ফিরতি বল পেয়ে লিয়ান্দ্রো পারেদেস সোজাসুজি শট নেন পোস্টে। তা সরাসরি গ্লাভসে জমা করেন লিভাকোভিচ।

৫০ মিনিটে ব্রজোভিচের বদলি হিসেবে মাঠে নামান আগের ম্যাচের গোলদাতা পেতকোভিচকে। ৫৮ মিনিটে আবারো মেসি ম্যাজিক। ড্রিবলিংয়ে ক্রোয়েশিয়ানদের খাবি খাইয়ে ঢুকে পরেন ডি-বক্সে। তবে তার নেয় শট আটকে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক। ৬২ মিনিটে প্রথম বদলি ফুটবলার নামায় আর্জেন্টিনা। লিয়ান্দ্রো পারেদেসের পরিবর্তে মাঠে ঢোকেন লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। সে সময় আরেকটি ভাল সুযোগ তৈরি করেছিলো ক্রোয়েশিয়া। ওতামন্দির ব্লকের পর তা ক্লিয়ার করেন এমি মার্টিনেজ।

দুই মিনিট পর আবারো মেসির জাদু। একের পর এক ডিফেন্ডারদের ঘোল খাইয়ে বিপদ সীমায় চলে যান তিনি। তবে সেখান থেকেও গোল আদায় করতে পারেন নি এলএম টেন। তবে ৬৯ মিনিটে একাই থমকে দেন ক্রোয়েশিয়াকে। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ছুটতে থাকেন ডি-বক্সের দিকে। তবে তাকে কড়া পাহারায় রেখেছিলেন গভারদিয়োল। খানিকটা সময় নিয়ে ক্রোয়েট ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে তার পায়ের নিচ দিয়ে বল দেন আলভারেজকে। কোণ ভুল করেননি এই তরুণ স্ট্রাইকার। বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন তিনি। ম্যাচে এটি তার দ্বিতীয় গোল। ৭৪ মিনিটে দলে দুটি পরিবর্তন আনেন স্কালোনি। চলতি বিশ্বকাপে প্রথমবার মাঠে নামে পাওলো দিবালা এবং পালাসিয়োস।

৭৫ ও ৭৮ মিনিটে পেরিসিচ ও ওরিসিচের দুটি সুযোগ প্রতিহত করেন আর্জেন্টাইন বাজপাখি এমি। ৮৩ মিনিটে ম্যাকঅ্যালিস্টার গোল রকরতে পারেন নি। দুই মিনিট পর গোল হাতছাড়া করে হতাশা বাড়ান লভরেন। ৮৬ মিনিটে আবারো চমক দেখান স্কালোনি। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলাতে মাঠে নামান হুয়ান ফয়েথ, আনহেল কোররেয়াকে। ৮৯ মিনিটে মদরিচের বদলি হিসেবে মাঠে নামা মায়ার সম্ভাবনা জাগালেও এমি মার্টিনেজকে ফাঁকি দিতে পারেন নি।

ম্যাচের বাকি সময়েও  বেশ কয়েকবার আক্রমণের চেষ্টা করে গত আসরের রানার্সআপরা। তবে কাঙ্খিত গোলের দেখা পায়নি দলটি। তাতে এবারের বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয় ক্রোয়েশিয়াকে। একবুক হতাশা নিয়ে সেমিফাইনালে থেকে বিদায় নিলো তারা। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপে বর্ণিল ক্যারিয়ারে ইতি ঘটলো ক্রোয়েশিয়ান গ্রেট লুকা মদরিচের। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে পারবে কি না তা জানতে অপেক্ষে করতে হবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭