ইনসাইড গ্রাউন্ড

আটলাস লায়ন্সদের কাঁদিয়ে ফাইনালে ফ্রান্স


প্রকাশ: 15/12/2022


Thumbnail

"চ্যাম্পিয়ন্স কার্স" ইংরেজি এই কথাটি ভুল প্রমাণের পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো ফ্রান্স। কারণ ১৯৬২ সালের পর কোন দলই আগের আসরে শিরোপা জেতার পর পরের আসরে তা ধরে রাখতে পারেনি। তবে সে ধারা ভাঙতে বদ্ধ পরিকর ফরাসিরা। ইতালি ও ব্রাজিলের পর তৃতীয় দল হিসেবে শিরোপা ধরে রাখার সুযোগ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সামনে। ১৯৩৪-৩৮ সালে ইতালির পর ১৯৫৮-৬২ টানা দুটি আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখায় ব্রাজিল। দাপুটে ফুটবল খেলে মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালের মঞ্চে পা রাখলো এমবাপ্পে-গ্রিজম্যানরা।

আর আল বাইত স্টেডিয়াম আটলাস লায়ন্সদের অসাধারণ বিশ্বকাপ যাত্রার শেষের সাক্ষী হলো। এদিন ৪০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়াম জুড়ে ছিলেন মরক্কোর সমর্থকরাই। আফ্রিকার দলটি নিজেদের রূপকথা নতুন করে লেখার যে চেষ্টা করেছিলেন, এ যাত্রায় তা সফল হলো না। আফ্রিকার ও আরবের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সেমিফাইনালেই থামলো তাদের গল্পগাঁথা।

ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণাত্নক ফুটবল খেলার চেস্টা করে ফ্রান্স। তার ফলশ্রুতিতে ৫ মিনিটেই এগিয়ে যায় ফরাসিরা। দারুণ এক আক্রমণে মরক্কোর ডি-বক্সে ভীতি ছড়ায় ফরাসিরা। এমবাপ্পের নেয়া শট প্রতিহত হলেও সেখান থেকে ফিরতি বল পেয়ে দারুণ এক অ্যাক্রোবেটিক শটে বোনোকে পরাস্ত করেন থিও হার্নান্দেজ। ১-০ তে এগিয়ে যায় দলটি। আর টুর্নামেন্টে প্রথম গোল খেলো মরক্কো।

১০ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। তবে উনাহির নেয়া শট প্রতিহত করে দেন হুগো লরিস। সাত মিনিট পর সোফিয়ান বোফাল ভাল একটি থ্রু দিয়েছিলেন হাকিম জিয়েশকে। তবে জিয়েশের নেয়া শট বারের বাইরে দিয়ে চলে যায়। উল্টো প্রতি আক্রমণে উঠে ব্যবধান বাড়ানোর সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে অলিভার জিরু। দুর্দান্তে রানে ডি-বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে নেয়া তার শট বাইরের পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। দুই মিনিট পর জিয়েশের নেয়া কিক সরাসরি গ্লাভসে জমা করেন লরিস।

ইনজুরির কারণে এ ম্যাচে একাদশে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে ফরাসিরা। ডিফেন্ডার উপামেকানো ও মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান রাবিয়োতকে ছাড়াই খেলতে হবে দিদিয়ের দেশমের দলকে। তাদের পরিবর্তে মাঠে নেমেছে ইব্রাহিম কোনাটে এবং ফোফানা।

আর ম্যাচের আগে মূল একাদশে নাম থাকলেও চোটের কারণে মাঠে নামতে পারেন নি নায়েফ আগুয়ের্ড। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন আশরাফ দারি। আর ম্যাচের ২১ মিনিটেই হ্যামস্ট্রিং চোটের কারণে মাঠ থেকে উঠে যেতে হয় মরক্কো অধিনায়ক রোমান সাইসকে। তার পরিবর্তে মাঠে আসেন সেলিম আমাল্লাহ।

২৭ মিনিটে থিও হার্নান্দেজকে ফাউল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন সোফিয়ান বোফাল। ৩২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে এক ডিফেন্স চেরা থ্রু দিয়েছিলেন আমাল্লাহ। তবে এন নেসিরি তা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন নি। ৩৪ মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্নার পায় ফ্রান্স। গ্রিজম্যানের নেয়া শট থেকে বল পেয়ে বারের উপর দিয়ে পাঠান ফোফানা।

দুই মিনিট পর দারুণ গতিতে বল নিয়ে মরক্কোর ডি-বক্সে ঢুকে যান এমবাপ্পে। তার নেয়া শট বোনো আটকাতে না পারলেও পোষ্টের ঢোকার আগেই তা ক্লিয়ার করে দেন মরক্কো ডিফেন্ডার। ফিরতি বলে নেয়া জিরুর শট বারের বাইরে দিয়ে চলে গেলে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি ফরাসিরা। ৪০ মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া বলে রাপায়েল ভারান হেড নিলেও সেটি লক্ষ্যে থাকেনি।

৪৩ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করেছিলেন হাকিমি। তবে দারুণ ক্ষিপ্রতায় তা কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করে দেন ইব্রাহিমা কোনাতে। তবে সমতায় ফেরার সবচেয়ে সহজ সুযোগটি মরক্কোর হাতছাড়া হয় তখনই। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে দারুণ এক বাইসাইকেল কিক নিয়েছিলেন জাওয়াদ ইয়ামিক। তবে সেটি বারে লেগে ফিরে আসলে হতাশা বাড়ে আটলান্স লায়ন্সদের।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে ফ্রি-কিক পায় মরক্কো। জিয়েশের নেয়া কিকটি লাফিয়ে উঠে ক্লিয়ার করে দেন লরিস। থিও হার্নান্দেজের দেয়া শুরুর গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্রান্স।

বিরতির দুই মিনিট পর প্রথম আক্রমণে যায় ফ্রান্স। তবে জুলস কুন্দে সেখার থেকে গোলের সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হন। ৫৩ মিনিটে আতিয়াত আলাহ দলকে সমতায় ফেরাতে পারেন নি। পরের মিনিটে আরেকটি সম্ভাবনা সলিল সমাধি ঘটান আমরাবাত। কোনাতের ডিফেন্ডিংয়ে বিপদ হয়নি ফ্রান্সের। ৬০ মিনিটে গ্রিজম্যানের একটি প্রচেষ্টা নসাৎ হয়ে যায়। ৬৩ মিনিটে বোফালের ক্রস ক্লিয়ার করেন গ্রিজম্যান। ৬৫ মিনিটে অলিভার জিরুর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মার্কাস থুরাম। এক মিনিট পর জোড়া পরিবর্তন আনে মরক্কোও।

৬৯ মিনিটে আরো একটি সুযোগ হারায় ফ্রান্স। এমবাপ্পের নেয়া শট রক্ষণে প্রতিহত হলেও অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। পরের মিনিটে মরক্কানদের মনে ভং ধরিয়ে দিয়েছিলেন থুরাম। তবে দারি তাকে বিপদসীমায় ঢোকার আগেই ফেলে দেন। প্রি-কিক থেকে আসা বলে হেড করেছিলেন থুরাম। তবে তা পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।

৭৪ মিনিটে ফোফানার এলোমেলো শট চলে যায় গ্যালারীতে। তবে পরের মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে ফরাসিদের ডি-বক্সে প্রবেশ করলেও শট নিতে পারেন নি হামদালাহ। আবারো সমতায় ফেরার ভাল সুযোগ নষ্ট করে আফ্রিকার দলটি। ৭৮ মিনিটে দেম্বেলেকে উঠিয়ে নেন দেশম। বদলি হিসেবে নামেন কোলো মুয়ানি। মাঠে নেমেই দারুণ এক গোলে দলের হয়ে ব্যবধান বাড়ান মুয়ানি। থুরামের কাছ থেকে বল পেয়ে চারজনকে কাটিয়ে অপর প্রান্তে থাকা মুয়ানির উদ্দেশ্যে বল বাড়ান এমবাপ্পে। ঠান্ডা মাথায় তা জালে জড়ান মুয়ানি। এর মাত্র ৪৪ সেকেন্ড আগে মাঠে প্রবেশ করেছিলেন তিনি।

খেলায় ফিরতে মরিয়া হয়ে গোলের সন্ধান করতে থাকে মরক্কো। ৮৬ মিনিটে উনাহি গোল করতে ব্যর্থ হন। দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে ইজাজৌলাি ও উনাহির যৌথ প্রচেষ্টা নসাৎ করে দেন জুলস কুন্দে। 

রেফারির শেষ বাঁশি বাঁজতেই ফাইনালে উঠার আনন্দে মেতে উঠে ফরাসিরা। আর দুর্দান্ত খেললেও, সেমিফাইনালেই ইতি পড়ে মরক্কোর এবারের বিশ্বকাপ মিশন। মাঠেই হতাশায় ভেঙে পড়েন হাকিম জিয়েশরা। তবে ফাইনালে যেয়ে ইতিহাস গড়তে না পারলেও তাদের লড়াকু ফুটবল মানসিকতার জন্য অগণিত দর্শকের মনে আসীন হয়ে থাকবেন মরক্কান ফুটবলাররা।

১৮ নভেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা। দুই দলের সামনে তাদের ইতিহাসে তৃতীয় শিরোপা ঘরে তোলার হাতছানি। দুই দলের সাথে সে লড়াই হবে দুই ক্লাব সতীর্থ লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পেরও। এখন দেখার অপেক্ষা মেসি না এমবাপ্পে শিরোপা উঠে কার হাতে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭