ইনসাইড থট

রাষ্ট্র পরিচালনা ও আন্দোলন উভয়ক্ষেত্রেই প্রয়োজন দেশপ্রেমিক, দূরদর্শীনেতা ও গণতান্ত্রিক সংগঠন


প্রকাশ: 15/12/2022


Thumbnail

ফেইসবুকে একটি ভিডিওক্লিপ দেখছিলাম। একটি লম্বা শূয়া জাতীয় হেঁটে যাচ্ছে। একটি পাখির ছানা পোকাটিকে অনুসরণ করছে। দেখে মনে হচ্ছিল পাখির ছানাটি খুব ক্ষুধার্ত, খাবারের খোঁজে বের হয়েছে। পাখির ছানাটি পোকাটির সামনে গিয়ে মুখ হা করে দাড়ায়, পোকাটি এগিয়ে যায়, পাখির ছানাটিও এগিয়ে গিয়ে আবারও মুখ হা করে দাড়ায়। কিন্তু ক্ষুধা নিবারণ হচ্ছে না। কারণ খাবারতো মুখের মধ্যে প্রবেশ করছে না। ভিডিওটির ধারা বর্ণনায় বলা হয়েছে, পাখির ছানাটি মা হারা হয়েছে। মা থাকতে ছানাটি বাসায়ই থাকতো, মা বিভিন্ন ধরনের পোকা শিকার করে মুখে করে নিয়ে বাচ্চাদের কাছে ফিরে আসলে ছানাটি হা করতো, অমনি মা ছানার মুখে পোকাগুলো প্রবেশ করিয়ে দিলে সে খেয়ে নিত। কিন্তু এখানেতো মা নেই। এছাড়া সে তো এখনও পোকা শিকার করা শিখে নাই। তাই ভাবছে হয়তো হা করলেই খাবার মুখে প্রবেশ করবে। কিন্তু বাস্তবতা এত সোজা নয়।

বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির অবস্থা হয়েছে পাখির ছানাটির মতো। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে, ক্যান্টনমেন্টের মত সুরক্ষিত জায়গায় অবস্থান করে গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বিভিন্ন দল থেকে নীতিভ্রষ্ট, অর্থ ও ক্ষমতালোভী দলছুট নেতাদের নিয়ে দলটি গঠিত হয় । অবৈধভাবে দখল করা ক্ষমতা বৈধ করতে হ্যাঁ/না ভোটের নাটক মঞ্চস্থ করে। তারা মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ব্যক্তি -সকলকে প্রশাসন থেকে বিদায় করে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের শাসন কায়েম করেছিল। চিহ্নিত রাজাকারের গাড়িতে শহীদের রক্তে বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা উড়ানোর সুযোগ দিয়েছিল। ‘বিশেষ ভবন’ এর মাধ্যমে লুটপাট করে দেশকে পরপর পাঁচবার শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করেছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। শেষ পর্যন্ত দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে জনসমর্থনহীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সর্বশান্ত হয়ে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত  জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও তার দুই পুত্র দুর্নীতির অপরাধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক গ্রেফতার ও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে মা‘সহ একপুত্র কারাগারে, অপরজন রাজনীতি করবেনা বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এসবই নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা ও অনঅভিজ্ঞতার ফসল। দেশপ্রেমহীন নেতাদের এই পরিনামই প্রাপ্য।

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ থেকে  ব্রিটিশরা বিতাড়িত হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের  শোষণ, বঞ্চনার কষাঘাতে এ দেশের জনগণের দারিদ্রতা আরো প্রকট হতে থাকে। এ দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য বাঙ্গালি জাতি তৎকালীন ছাত্রনেতা, পরবর্তিতে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়। তিনি ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ এবং  ১৯৪৯ সালের ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধিকারের দাবিতে দীর্ঘ ২৩ বছর গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙ্গালী জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করে।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে  কতিপয় পথভ্রষ্ট সামরিক কর্মকর্তা  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলংকময় অধ্যায় যশোর সূচনা করে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও তাদের দোসররা স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের উপর নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে তাঁর জেষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর বাংলার মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে হাজার হাজার নেতাকর্মী আত্মাহুতির মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনা আত্মনিয়োগ করেন, যে কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

বাংলাদেশের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও তাদের দোসর বিএনপি-জামায়াত সম্প্রতি সরকার উৎখাত আন্দোলনে রাজপথে বিভিন্ন ধরনের সরকার বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে, নানা কর্মসূচি পালন করছে। জনগণের ন্যায্য দাবী নিয়ে বিরোধীদল সরকার বিরোধী আন্দোলনে করবে এটাই স্বাভাবিক, এটাই গণতন্ত্রের চর্চা ও গণতান্ত্রিক অধিকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলের আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারীদের গণভবনে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন) ‘চা পান’ করার জন্য দাওয়াত দিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা যেন নির্বিঘ্নে সমাবেশসহ সকল কর্মসূচি পালন করতে পারে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অনুরোধ করেছেন কোনরকম ধর্মঘট বা এ জাতীয় কর্মসূচি বর্জন করার জন্য। সরকারীদল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন কোন প্রকার বাঁধা না দেওয়ার জন্য। এর ফলে তারা বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছে, সরকারের সমালোচনা করেছেন, সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রদান করেছেন, হুমকি দিয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াত কর্তৃক সরকারের বিরুদ্ধে  সমালোচনাসমূহ বিবেচনায় নিয়ে সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করে জনসমর্থন বৃদ্ধি করে।

অথচ বিরোধীদলের অদূরদর্শী নেতারা নিজেদের জনপ্রিয়তার মাত্রা না বুঝে, স্বাধীনতা বিরোধীদের যোগসাজশে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতা বদলের একমাত্র উপায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা না করে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে এবং তা প্রতিহত করার নামে সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে বিধায় বিএনপি-জামায়াত জোট জনগণের আস্থা হারিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উপরোক্ত কর্মকান্ডের ফলে ২০১৮ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে  তারা মাত্র ৭ আসনে জয়ী হয়ে সারাদেশে পরাজিত হয়েছে।

নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির ঘোষণা দিলে আসন্ন নির্বাচনে ভরাডুবির আশংকায় বিএনপি ও তাদের দোসররা আন্দোলনের নামে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিভাগে নির্বিঘ্নে সমাবেশ করে। কিন্তু তারা ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে সামনে রেখে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। নগরবাসীর নিত্য চলাচলের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বিবেচনায় রেখে বিরোধীদলের সমাবেশ নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয় এবং অনুরোধ করে। কিন্তু অদূরদর্শী ও অনভিজ্ঞ আন্দোলনকারী সংগঠনটি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিপক্ষ মনে করে তাদের পরামর্শ ও অনুরোধ উপেক্ষা করে রাজপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সমাবেশ করার গো ধরে থাকে। নগরবাসী সকলেই নিশ্চয়ই একমত পোষণ করবে যে, ঢাকা মহানগরের রাজপথগুলোর যে কোন একটিতে কয়েকঘন্টা গাড়ী চলাচল বন্ধ করলে পুরো শহরে রাত পর্যন্ত যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ বিএনপি সাধারণ মানুষের অসুবিধা বিবেচনায় না নিয়ে ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত সমাবেশ করার জন্য ৭ ডিসেম্বর থেকে শহরের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে গরু জবাই করে রান্নাবান্নার আয়োজন করে। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নিলে তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সেই সংঘর্ষে একজন মানুষ নিহত হন। পুলিশ আন্দোলনকারী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশী করে তাজা বোমাসহ ১৬০ বস্তা চাউল, ১৬ টি গরু উদ্ধার করে। আন্দোলন করার অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা এহেন অরাজনৈতিক হটকারী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছিল। নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই ভেবে তারা আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। পরবর্তিতে পুলিশের নির্দেশ মোতাবেক গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের আয়োজন করলেও আন্দোলনকারীদের এহেন কর্মকাণ্ড ও দাবি-দাওয়ায় সাধারণ মানুষের কথা না থাকায় ঢাকাবাসী বিরক্ত হয়ে আন্দোলনকারীদের প্রত্যাখ্যান করে।

যে কোন আন্দোলনে কর্মসূচি প্রনয়নে দুরদর্শীতা ও অভিজ্ঞতা খুবই জরুরি। আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততার জন্য তাদের সুবিধা-অসুবিধা, দাবি দাওয়ার কথা থাকা জরুরি। একটি সফল আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন একজন দক্ষ, দূরদর্শী, দেশপ্রেমিক নেতা ও গনতান্ত্রিকভাবে গঠিত একটি সংগঠন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭