ময়মনসিংহের অষ্টধার গ্রামের সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অপহরণের ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও অপ্রাপ্তবয়স্ক ওই শিক্ষার্থীর এখনও খোঁজ মিলছে না।
এদিকে এই অপহরণের ঘটনায় জড়িত বখাটেকে মো.সাকিব সহ চারজনকে আসামি করে গত ১৩ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন অপহৃত শিক্ষার্থীর মা।
সদ্য এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় জড়িত বখাটে মো. সাবিক কোতোয়ালী থানার চরশশা মশিউরনগর গ্রামের মো.সাইদুল ইসলামের ছেলে।
মেয়ের সন্ধান চেয়ে রবিবার দুপুরে ময়মনসিংহের একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছাত্রীর মা ও তার স্বজনেরা।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়ের সন্ধান চেয়ে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে অপহৃত মেয়ের মা মোছা.জোস্না খাতুন বলেন,গত ১১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে তার মেয়ে (১৪) প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় কোতোয়ালী থানার কাউনিয়া চাঁনপুর মসজিদের কাছে আমার মেয়ে পৌছানো মাত্র বখাটে সাকিব (১৯) তার সহযোগী মো.সাইদুল ইসলাম (৪৬),রায়হান মিয়া (২৫),মো.রাকিব মিয়া (২৮),শেখ সাহেব ফরাজী (৪৫) ও অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজন মিলে আমার মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
জোস্না খাতুন আরো বলেন,মেয়েকে অপহরণ করার পরদিন এলাকার প্রভাবশালী রুবেল,হারুন ও মনিরের মাধ্যমে মেয়েকে জীবিত ফিরে পেতে আমাদের কাছে ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। তা না হলে মেয়কে হত্যার হুমকি দেই তারা। মেয়েকে জীবিত ফিরে পেতে তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে নিজেদের জমি অন্যের কাছে বন্ধক রেখে নগদ ৩ লক্ষ টাকা দিই তাদের কাছে। নগদ ৩ লক্ষ টাকা টাকা তারা হাতে পেয়ে তারা আরো ২ লক্ষ টাকা দাবি করে। বাকি টাকা না দিলে তারা আমার মেয়েকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এর মধ্যে আমার মেয়ে ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১ টায়(০১৮৮৩৩৯৬৩১৪) নাম্বার থেকে আমার মোবাইল কল করে "মা আমাকে বাঁচাও" বলার সাথে সাথে কল কেটে যায়। ওই নাম্বার বারবার চেষ্টা করেও আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। বতর্মানে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে । ওই মোবাইল নাম্বারটি পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় আমি নিরুপায় হয়ে পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সাহায্য কামনা করছি। নিখোঁজের ৮ দিন পেরিয়ে গেছে আজও আমার মেয়েকে ফিরে পাইনি। জানিনা আমার মেয়ে কোথায় কেমন আছে? আপনাদের মাধ্যমে আমি আমার মেয়েকে জীবিত ফেতর পেতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অপহৃত শিক্ষার্থীর নানা শাজাহান বলেন,তার অপ্রাপ্তবয়স্ক নাতনী কাউনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পাশ করেছে। স্কুলে পড়াশোনার সময় আমাদের নাতনীকে বিভিন্ন সময় প্রেম ও কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল বখাটে সাকিব। প্রেম প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্কুলে যাওয়ার পথরোধ করে বিভিন্ন হুমকি ধামকি ও তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সাকিব। প্রায় দুইমাস ধরে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল বখাটে সাকিব। তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক অপহরণ করা হয়েছে আমাদের নাতনীকে।
তিনি আরও বলেন,অপহরণের পর স্বজনদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হুমকি ও মুক্তিপন দাবি করছে তারা। মেয়ের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে জন্য আমরা তাদেরকে ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছি। জানতে পেরেছি আমাদের মেয়ের সর্বনাশ ঘটিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে বখাটে সাকিব বিদেশ পাড়ি দেবে। তাই পুলিশের কাছে আমাদের অনুরোধ দ্রুত আমার মেয়েকে উদ্ধার এবং বখাটে সাকিব ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
মেয়ের বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী জয়নাল সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,দেশের জন্য এবং আমার একমাত্র মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করতে দীর্ঘদিন প্রবাসে রয়েছি। মেয়ের অপহরণের খবর পেয়ে আমি ঠিকমত কাজ করতে পারছি না। মেয়ের চিন্তায় আমার খাওয়া ঘুম শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের পুলিশের উপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তারাই আমার মেয়েকে উদ্ধার করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় চেয়ারম্যান আরমান হোসেন জানান,মেয়ের এক চাচা আমাকে জানান,তাদের মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছে না। সেই সাথে শুনেছি মেয়ের অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি-শাহ কামাল আকন্দ বলেন, অপহরণের ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন বখাটে সাকিব ও অন্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।