ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

তাইওয়ান ইস্যুতে উদ্বেগ, বলা হচ্ছে এশিয়ার ইউক্রেন


প্রকাশ: 20/12/2022


Thumbnail

আগামী দশকে চীন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মত এশিয়াইয় এক নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি করবে তাইওয়ানের ওপর হামলা করে বলে ধারণা করেন অনেক মার্কিন কিছু জেনারেল। তাদের এই ধারণার কারণ অবশ্য সহজেওই বোঝা যায়। ১৯৪৯ সালের পর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে হামলার ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিনিয়তই অঞ্চলটিতে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে নতুন নতুন কৌশল থেকে শুরু করে সামরিক মহরা চালাচ্ছে চীন। যুদ্ধের মাধ্যমে জয় পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

মাওসেতুংয়ের পর আর কোনো নেতা তাইওয়ানের একত্রিকরণে এত জোর দেয়নি যতটা শি জিং পিং  দিয়েছেন। তাইওয়ানে আক্রমণ করার জন্য সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়নের পাশাপাশি অস্ত্রে সুসজ্জিত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে,২০২৭ সালের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে চীনের সেনাবাহিনী। ততদিনে শি জিনপিংয়ের ক্ষমতায় তৃতীয় মেয়াদ শেষ হবে। যদিও তিনি জানিয়েছেন, একত্রিকরণের কার্যক্রম কোনো অবস্থতেই থামানো হবে না।

২০২২ সালেই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাওয়ান সফরকে কেন্দ্র নতুন উদ্বেগ দেখা যায়। চীনের হুমকি ও কঠোর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে পেলোসির তাইওয়ান সফর ভালোভাবের নেয়নি চীন। আর  এতেই ভেঙে যায় ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা।

তাইওয়ানের ওপর চীনের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেনা যুক্তরাষ্ট্র, আবার দেশটিকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতিও দেয়না তারা। তাইওয়ানকে অস্ত্র সরবরাহ করা সত্ত্বেও চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে চীনের। গত কয়েক দশকের রীতি ভেঙে মার্কিন সর্বোচ্চ কর্মকর্তা তাইওয়ান ভ্রমণ করছেন। তবে মার্কিন এই শীর্ষ কর্মকর্তা তাইওয়ান ছাড়ার পর নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালায় চীন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, দ্বীপটির চারপাশে যুদ্ধ জাহাজ ও প্লেন পাঠানো। মূলত বেশ কয়েক দিন ধরে লাইভ সামরিক মহড়া চালায় চীন।

প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন ও তার স্বাধীনতাপন্থি ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির নেতৃত্বে তাইওয়ানে এখন প্রাণবন্ত গণতন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে। মূল ভূখণ্ড চীনের চেয়ে তাইওয়ানের মাথাপিছু জিডিপি তিনগুণ বেশি। তাইওয়ানের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি স্বৈরতান্ত্রিক চীনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হংকং ও তাইওয়ানের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা মানছে না চীন। জরিপে দেখা গেছে, সাত শতাংশেরও কম তাইওয়ানবাসী চীনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। তাইওয়ানের সঙ্গে দেশটির কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই। ১৯৭০ এর দশকে রিচার্ড নিক্সনও স্বৈরাচারী কেএমটি নেতাকে পরিত্যাগ করার কথা ভেবেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও কৌশলগত নীতি অবলম্বন করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সব দিক থেকে উসকানি বন্ধ করা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তাওয়ানে সামরিক সহায়তা বাড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কারণ তাইওয়ানের রুপান্তুর সম্ভাব্য হয়ে উঠেছে।

কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, যুদ্ধ কেবল তখনই শুরু হতে পারে যখন চীন মনে করবে তারা জয়ী হবে। কারণ চীন ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। এরই মধ্যে চীনের নৌবাহিনীর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে। চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি সব দিক থেকেই বাড়ছে। তবে বলা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ সব পক্ষের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে আশা ও আস্থা পেতে পারে তাইওয়ান। নিজেদের রক্ষায় পেতে পারে উৎসাহ। এরই মধ্যে তাইওয়ান প্রতিরক্ষা কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করছে। তাছাড়া সামরিকখাতে বাজেটও বাড়াতে পারে স্বায়ত্ত্বশাসিত দ্বীপটি।

এদিকে তাইওয়ানের সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছে বেইজিং। এক্ষেত্রে বিকল্প বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করছে তারা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, মূল ভূখণ্ডের বিকল্প কমে আসছে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান না হলে সামরিক পথে হাঁটবে দেশটি। তবে ইউক্রেনে রাশিয়া যেভাবে সংগ্রাম করছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে থেমে যেতে পারে চীন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭