কালার ইনসাইড

দেশীয় আত্মপরিচয়ের মূল্যবোধ থেকে সৃষ্টি ‘বিশ্বরঙ’র ২৮ বছর


প্রকাশ: 20/12/2022


Thumbnail

দেশের অন্যতম প্রধান ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘বিশ্বরঙ’ দেখতে দেখতে সাফল্যের ২৮ বছরে পদার্পণ করলো। আজকে যে বিশ্বরঙ তার শুরুটা বলতে গেলে মর্মে লাগার মতোই। কালক্রমে সেই রঙ ছড়িয়েছে এর বিভিন্ন কর্মে। একদিন শখের বসেই দেশীয় আত্মপরিচয়ের মূল্যবোধ থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয়েছিল বিশ্বরঙয়ের। 

নারায়ণগঞ্জ শহরে শুরু হয় ১৯৯৪ সালে মাত্র ১০০ স্কয়ার ফুটের একটা ছোট দোকান নিয়ে। রাতারাতি সাফল্য যে আসে তা কিন্তু নয়। কিন্তু ক্রমেই নামটা ছড়িয়ে যায় মানুষের মুখে মুখে। ওই সময়ের চারুকলার শিক্ষক মরণ চাঁদ পালের কাছ থেকে তার তৈরী সিরামিকসের সামগ্রী নিয়ে এসে বিক্রি হলে দাম পরিশোধ করে আবার নতুন সামগ্রী কিনে আনা হতো। এভাবেই চলতে থাকে এই সিরামিকসের আর্ট পিসগুলো, সাথে বিয়ে বাড়ীর ষ্টেজ ও আল্পনার কাজ। ক্রমেই বাড়ে এর চাহিদা। তখনও দোকানে কাপড়ের প্রবেশ ঘটেনি। সেটা আসতে সময় নেয় আরও কিছু দিন। ১৯৯৫ সালে শাড়ি স্থান পায় সিরামিকসের আর্ট পিসগুলোর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান পন্যের তালিকায়।

ঈদের সময় অত কাপড় কেনা, তাতে কাজ করার মতো প্রয়োজনীয় পুঁজি থাকতো না। তখন পরিচিত কাছের মানুষরাই যুগিয়েছেন পুঁজি। তাই দিয়ে ঈদের সময় বিক্রির জন্য কাপড় তোলা হতো। মজার ব্যাপার হলো ক্রমে ক্রমে পন্যের তালিকায় প্রাথমিক সাফল্য আসে পাঞ্জাবীতে। এতদিন যেটা ছিলো আবেগ বা শখ, সেটাই নতুন এক বোধের তৈরি করে আমার মধ্যে। এতদিন যেটা ছিল আবেগ ও শখ সেটাই রূপ নেয় দায়িত্ববোধে। কারণ, ততদিনে সরাসরি শত শত মানুষ জড়িয়ে গেছে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডের সঙ্গে। জড়িত হয়েছে শত শত তাঁতী পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। আমার শিল্পবোধ আর রুচির বাস্তবায়নের প্রধান কারিগর এরাই।

প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে বিপ্লব সাহা আপাদমস্তক শিল্পস্বত্ত্বায় পরিপূর্ণ হতে চেয়েছেন বারংবার।

বিশ্বরঙয়ের কর্ণধার ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বিশ্বরঙয়ের সূচনা পর্ব সম্পর্কে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ১ম বিভাগে এম এফ এ সম্পন্ন করে শিল্পস্বত্ত্বাকে দেশ ও জাতির কল্যানে ব্যবহারের প্রচেষ্টায় আত্মমগ্ন করি অবিরাম। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই অস্থির সময়েও নিজস্ব শেকড়ের সন্ধান করতে গিয়েই ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে দেশীয় তাঁত কাপড়কে প্রাধান্য দিয়েছি সবসময়। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের বিশ্বব্যাপী মূল্যায়নে বিশ্বরঙ এর পথচলা সুদীর্ঘ ২৮ বছরের।

তিনি জানান, বিশ্বরঙ ১৯৯৪ সাল থেকে ভিন্নধর্মী কাজের জন্যই ফ্যাশন সচেতনদের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত। বিগত সময়ে বাংলাদেশের ফ্যাশন জগতে ফ্যাশন সচেতনদের জন্য অন্তঃপ্রান প্রচেষ্টার ফসল আমাদের নিরীক্ষামূলক কাজ। এদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য – শখের হাড়ি, মুখোশ, নকঁশী পাখা, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলার পটচিত্র, বাংলা পঞ্জিকা, ঐতিহ্যে বাংলা সিনেমা, পানাম নগর, কান্তজী মন্দিরের টেরাকোটা, রিকশা মোটিফ সহ আল্পনার মত মহামূল্যবান মোটিফকে পোশাকের অলংকরন হিসেবে ব্যবহার করে দেশীয় ফ্যাশনকে ইতিহাস ঐতিহ্যের মিশেলে নিয়ে যেতে চেয়েছি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমৃদ্ধির শিখড়ে।

বিপ্লব সাহা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশীয় ফ্যাশনকে ইতিহাস ঐতিহ্যের মিশেলে প্রদর্শন করেছি আমেরিকা, ভারত, মালয়েশিয়া, কানাডার মত ফ্যাশন সচেতনদের দেশে। আমরা উপহার দিয়েছি পোশাকে অতি উজ্জ্বল রঙের অনুভবকে, যা বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রিকে আরো রাঙ্গিয়েছে অনুকরনীয় ভাবে। টাঙ্গাইলের মলিন তাঁতের শাড়ীকে আধুনিক ফ্যাশনের অনুষঙ্গ করতে নিরলস প্রচেষ্টার ফলাফল বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রিতে বিদ্যমান। বিভিন্ন দিবসে পোষাকের বর্নিলতা আমাদের মাধ্যমেই শুরু হয়, যা আজ অভিন্ন এক রীতিতে সামগ্রিক ভাবে প্রচলিত।

তিনি আরও বলেন, শুধু পোষাকে সীমাবদ্ধ না থেকে সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকেই ২০১০ সালে জাতীয় যাদুঘরে প্রথম বারের মত “আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে রঙের উপস্থিতি” শীর্ষক এক যুগান্তকারী প্রদর্শনীর আয়োজন করি, যা সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে বোদ্ধা মহলেও ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। সময়ের প্রয়োজনে দেশীয় বুটিক শিল্পকে রক্ষায় রাজ পথেও ছিলাম সরব।

শিশুদের মেধাবিকাশের লক্ষ্যে আয়োজন করি “মা” দিবসে “আমার রঙে আমার মা” শীর্ষক এক ব্যাতিক্রমধর্মী প্রতিযোগীতা ও প্রদর্শনীর। শিশুদের আকাঁ প্রানবন্ত চিত্রকলাকে ফ্যাশনের উপাত্ত হিসেবে ব্যাবহার করে দিয়েছি ভিন্ন মাত্রা। ২০ বছর পূর্তীতে ‘আর টিভির সাথে যৌথ আয়োজনে করি ‘টোয়েন্টি- টোয়েন্টি কালার্স’ নামক প্রতিযোগীতা। সারাদেশের টিনএজদের মধ্য থেকে প্রতিভাবানদের বাছাই করে উন্নত প্রশিক্ষনের মধ্য দিয়ে এদেশের মিডিয়াকে উপহার দিয়েছি একঝাক নতুন মুখ। যাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করছে এখন।

বিশ্বরঙ সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার আবর্তে করোনার সময়ে বিশ্বব্যাপী মানুষ যখন ঘরবন্দী, তখন দেশীয় তাঁতশিল্প রক্ষায় তাঁতীদের পাশে দাড়ানোটা ছিলো জীবন বিপন্নময় চ্যালেঞ্জ তবুও তাঁত শিল্প ও তাঁতীদের কথা চিন্তা করে তাদের তৈরী পণ্য অনলাইন এর মাধ্যমে ক্রেতাদের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়ে আপ্রান ভাবে চেষ্টা করেছে তাঁতীদের পাশে দাঁড়াবার। এছাড়াও ফ্যাশনের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রচার, প্রচারনার যে প্রচলন শুরু হয়েছে তা এদেশের চলচ্চিত্র এবং ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রীতে আমরাই পথিকৃত।

বিশ্ব রঙ এর সৃষ্টিশীলতা সবসময়ই সুস্পষ্ট এবং স্বতন্ত্র। আমরা আমাদের স্থানীয় কারিগর, তাঁতি, সূচীশিল্পী, কারুশিল্পীদের সাথে কাজ করি এবং বিস্ময়কর ভাবে প্রাণবন্ত সংগ্রহের পরিসীমা অতিক্রম করি ফ্যাশন প্রেমীদের অভিন্ন নিরবচ্ছিন্ন চাহিদাকে। আমাদের নকশাগুলি আমাদের লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত যা ঐতিহাসিক ভাবে দক্ষতার উৎস হিসাবে একটি নির্ধারিত ভূমিকা পালন করে আসছে সুদীর্ঘ ২৮ বছর ধরে। সর্বপরি এদেশের সাধারন মানুষরাই আমাদের সৃষ্টির এক মহান অনুপ্রেরনা। এই সুদীর্ঘ সময়ের পথচলায় বিশ্বরঙ এর পাশে ছিলেন সাংবাদিক বন্ধুরা, বিভিন্ন মিডিয়া কর্মীরা, মিডিয়া তারকারা, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মডেল সহ নানা শ্রেণির সাধারণ শুভানুধ্যায়ীরা। তাদের প্রতি অকৃত্রিম অশেষ কৃতজ্ঞতা। ‘বিশ্বরঙ পরিবার সবসময় কৃতজ্ঞতার


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭