প্রকাশ: 27/12/2022
পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির
মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে সৃষ্ট বিক্ষোভের ১০০ দিন পার হয়েছে। গতকাল সোমবার শততম
দিন পার হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের ।
এর আগে ইরানে ২০১৭ সালের
শেষ দিকে একবার বিক্ষোভ হয়েছিল। ২০১৯ সালের নভেম্বরেও দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। তবে
এবারের আন্দোলন অনন্য কারণ, বিক্ষোভের নেতৃত্বও দিয়েছেন নারীরা।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৭৯
সালের ইসলামি বিপ্লবের পর দীর্ঘ সময় ধরে চলা সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভ ইরানের শাসনব্যবস্থাকে
নাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এর জন্য বিক্ষোভকারীদের চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে।
বিক্ষোভে ৬৯ শিশুসহ ৫০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী
নিহত হয়েছে। দুজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২৬ জনকে বিক্ষোভের সাজা
হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এবারের বিক্ষোভে ইরানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের
তারকারাও সমর্থন দিয়েছেন। এতে অনেকেই গ্রেফতার বা নির্বাসিত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীর ফাঁসিতে
নিন্দা জানানোয় ইরানের প্রখ্যাত তারকা তারানেহ আলীদুস্তিকে কুখ্যাত এভিন কারাগারে নেওয়া
হয়েছে। অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র দ্য সেলসম্যান–এর পরিচালক আসগার ফারহাদি বলেন, ‘আমি তারানেহর
সঙ্গে চারটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। কিন্তু তিনি এখন দেশের মানুষকে সমর্থন করায় কারাগারে
রয়েছেন। এ ধরনের সমর্থন যদি অপরাধ হয়, তবে এ দেশের লাখো মানুষ অপরাধী।’
ইরানের আরেক বিখ্যাত অভিনেত্রী পেগাগ
আহানগারানি দেশ ছেড়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইরান মাসা–পূর্ববর্তী যুগে আর ফিরতে পারে না।’
ইরানের বিখ্যাত ফুটবলার আলী কারিমিও
এই বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছে। তিনি দুবাইয়ে বাস করেন। আলী কারিমি বলেন, ইরানের গোয়েন্দা
সংস্থার লোকজনের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছেন তিনি। ইরানের আরেক ফুটবলার আলী দায়ী
বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ায় তার দোকান ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির বিচার বিভাগ।
ইরানে এবার যারা বিক্ষোভ করছেন, তারা
মূলত জেনারেশন জেড বা জেড প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত। তারা বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ইরানের
কট্টর শাসনের বিধি ভেঙে হিজাব পুড়িয়েছেন। ইরানে তরুণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পাগড়ি
খুলে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। সম্প্রতি ১৬ বছর বয়সী আর্শিয়া ইমামগোলিবজাদেহ নামের এক
কিশোরের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়। তাকে ১০ দিন কারাগারে রাখা হয়। এর দুই দিনের
মাথায় সে আত্মহত্যা করে। আর্শিয়ার পরিবার এর জন্য কারাগারে তার সঙ্গে আচরণকে দায়ী করে।
ইরানের কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত কঠোরভাবে
এই বিক্ষোভ দমন করছে। এর জন্য তারা বিক্ষোভকারীদের মৃতদেহকেও ব্যবহার করতে দ্বিধা
করছে না। বিক্ষোভকারীর পরিবারকে চুপ করাতে মৃতদেহ দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করছে কর্তৃপক্ষ।
এ পর্যন্ত বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগ
এনে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এর নিন্দা জানিয়েছে। বেসরকারি
সংস্থা কুর্দিস্তান হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কুর্দি-ইরানি
র্যাপার সামান ইয়াসিন মঙ্গলবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। ইয়াসিনকে এর আগে কারাগারে
নির্যাতন করা হয়েছে। ইরানের সুপ্রিম কোর্ট শনিবার তার মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল
বহাল রেখেছে এবং আবার বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস গত রোববার
বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে
যুক্তরাজ্য ও ইরানের যৌথ নাগরিকত্ব রয়েছে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে
প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা সাম্প্রতিক বিক্ষোভের
সাত নেতাকে আটক করা করেছে রেভল্যুশনারি গার্ডস।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে,
যেসব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক থাকায় সাম্প্রতিক
এ বিক্ষোভে লন্ডনের ধ্বংসাত্মক ভূমিকা সামনে এসেছে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭