ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির সভা-সমাবেশ, জনসাধারণের ভোগান্তি!


প্রকাশ: 01/01/2023


Thumbnail

রাজধানীর নয়াপল্টনে এক পাশের সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনটির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ সমাবেশ করেছে ছাত্র সংগঠনটি। রবিবার (১ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটায় এ সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতির কারণে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয় জনসাধারণ এবং ওই পথে চলাচলকারীদের। 

এদিকে, নয়া পল্টনে বিএনপি, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন  অঙ্গ-সংগঠনের সমাবেশ মানেই রাজধানী ঢাকার মানুষের ভোগান্তি বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। তারা বলছেন, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করেও রাজধানীতে বসবাসরত প্রায় দুই কোটি মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএনপির সকল কর্মকাণ্ড জনগণের জন্য হয়রানিমূলক, জনভোগান্তির কারণ।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, নয়া পল্টনের প্রধান সড়কের পাশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবস্থিত হওয়ায়, বিএনপি বা এর অঙ্গ-সংগঠনের কোনো সভা-সমাবেশ মানেই রাজধানীতে গাড়ি চলাচল বন্ধ, যানজট, জনসাধারণের ভোগান্তি। এ কারণে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তা মেনে নেয়নি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া পল্টনেই রাস্তার উপরে সমাবেশ করতে অনঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। যে কারণে, ৭ ডিসেম্বর অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়  এবং এই দিন একজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে বাধ্য হয়ে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট প্রমাণ হয়, বিএনপি জনভোগান্তি সৃষ্টি করতেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশ নয়া পল্টনে আয়োজন করে থাকে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানান, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, বেলা দুইটা থেকে ছাত্রদলের এ সমাবেশ শুরুর কথা ছিল। তবে বেলা পৌনে একটা থেকেই বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন। ছাত্র সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে একটি পিকআপ ভ্যানে। সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের বসার ব্যবস্থা করতে সড়কে বিছানো হয়েছিল কার্পেট। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতির কারণে বেলা দেড়টা থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই ধরনের কোনো সভা-সমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়া হলেই বিএনপি বা এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কেন রাস্তা বন্ধ করবেন? কেন কোনো উদ্যান বা উন্মুক্ত  স্থানে সভা-সমাবেশে করবে না বিএনপি? -এসব বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, আজ বছরের প্রথম দিন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নয়া পল্টনে। রবিবার (১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব আবুল হোসেন এই জানাজা পরিচালনা করেন। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাজাহান ওমর, উপদেষ্টা পরিষদের হাবিবুর রহমান হাবিব, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ, আবেদ রাজা, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির একজন বয়জেষ্ঠ্য নেতা এবং প্রখ্যাত একজন আইনজীবির জানাজার নামাজও বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নয়া পল্টনের রাস্তা দখল করে, রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রেখে অনুষ্ঠিত করেছে বিএনপি। বিএনপির সকল কার্যক্রম, যেমন খিচুড়ি খাওয়া, জানাজার নামাজ, সভা-সমাবেশ সবই কি রাস্তা বন্ধ করেই করতে হয়?-প্রশ্ন রাখেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, বস্তুত, বিএনপির সকল কর্মকাণ্ড জনগণের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড। বিএনপির কোন সভা-সমাবেশ মানেই আতঙ্ক, সন্ত্রাস, ভয়-ভীতি আর জনভোগান্তি। জনভোগান্তি সৃষ্টি করতেই বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা, বিএনপি এবং বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের সভা-সমাবেশ নয়া পল্টনেই দিয়ে থাকেন। যার ফলে নয়া পল্টনসহ এর আশে-পাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। জনভোগান্তির শিকার হন রাজধানীতে চলাচলরত পথচারীরা। এখন দেখার বিষয়, আর কতদিন বিএনপি এভাবে নয়া পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, পল্টনসহ বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে সভা-সমাবেশ চালায়?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭