ইনসাইড বাংলাদেশ

অরক্ষিত ও পরিত্যক্ত ঐতিহাসিক মুসা খান মসজিদ


প্রকাশ: 02/01/2023


Thumbnail

রাজধানী ঢাকা শহরের ঐতিহাসিক মসজিদ মুসা খান মসজিদ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্থাপনাটি। মসজিদের সামনে এলে প্রথমইে চোখে পড়বে একটি সাইনবোর্ড। তাতে মসজিদটির পরিচিতির বিষয়ে লেখা রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকার পশ্চিমাংশ বাগ-ই-মুসা খান নামে পরিচিত।

মুসা খান বারো ভূঁইয়া খ্যাত ঈসা খাঁ’র পুত্র। মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু স্থাপত্যশিল্পে এটি শায়েস্তা খান আমলের রীতিতে নির্মিত এবং সম্ভবত মুসা খানের পুত্র মনোয়ার খান, শায়েস্তা খানের আমলে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করছেন অনেক ঐতিহাসিক। দেয়ালের গায়ে শিলালিপি না থাকলেও সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে নির্মিত এ ধরনের বহু মসজিদের অস্তিত্ব এ দেশে এখনো বিদ্যমান। স্থাপত্যিক দৃষ্টিতে মসজিদটি খাজা শাহবাজ মসজিদের ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দের অনুরূপ। মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মুসা খানের কবর রয়েছে।

মুসা খানের কবর। ফাইল ছবি

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল যেখানে অবস্থিত সেখানে মুসা খানের নির্মিত অসংখ্য দালানকোঠা ছিল বলে ঐতিহাসিকদের মত রয়েছে। এসব স্থাপত্য নির্মাণকালে তিনি এখানে একটি মসজিদও নির্মাণ করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। মুসা খানের এই সমগ্র এলাকাটিকে তখন বলা হতো ‘বাগ-ই-মুসা’ বা মুসার বাগান।

বর্তমান লালবাগ, সদরঘাট, পুরান ঢাকা, কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শাহবাগ তথা সমগ্র পুরান ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল নিয়ে এই ‘বাগ-ই-মুসা’ গঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়। মুসা খানের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘বাগ-ই-মুসা’। তখনকার সময়ে এই সমগ্র এলাকাটি মুসা খানের ব্যক্তিগত জমি হিসেবেই বিবেচিত হতো। মুসা খান মসজিদটির নির্মাণ-কৌশল বিবেচনায় মসজিদটির সঙ্গে রমনার তিন নেতার মাজারের পেছনে অবস্থিত খাজা শাহবাজের মসজিদের সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

মসজিদটি মাটি থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে অবস্থিত। সমতল থেকে ৩.০৫ মিটার উঁচু খিলান ছাদবিশিষ্ট ভিতের ওপর স্থাপিত মসজিদটি বাইরের দিকে উত্তর-দক্ষিণে এর পরিমাপ ১৭.৬৪ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৪.০২ মিটার। এ উঁচু ভিতের তলদেশে কয়েক সারি কক্ষ রয়েছে; বর্তমানে যা অরক্ষিত ও পরিত্যক্ত। এসব কক্ষে দেয়ালের মাঝখানে একটি করে বুকশেলফ রয়েছে। কক্ষগুলোর গঠনশৈলী প্রমাণ করে, এখানে একটি মাদরাসা ছিল। মোগল আমলের অন্যান্য মসজিদের মতো একসময় এখানেও ধর্মীয় শিক্ষার কার্যক্রম চালু ছিল বলে মনে করেন অনেক ইতিহাস গবেষক।

এই ভিতের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের সিঁড়ি বেয়েই ওপরের মূল অংশে উঠতে হয়। পশ্চিমাংশে মসজিদ কাঠামো, পূর্বাংশে খালি বারান্দা এবং বারান্দার দক্ষিণাংশে অজুখানা। পূর্ব দিকের তিনটি দরজার মাঝের দরজাটি নান্দনিক কারুকার্য শোভিত হয়ে প্রধান দরজার প্রতিনিধিত্ব করছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালেও রয়েছে একটি করে দরজা, যা বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে।

মসজিদের ওপরের অংশে তিনটি গম্বুজ অষ্ট কোণাকার ড্রামের ওপর স্থাপিত; মধ্যবর্তী গম্বুজটি তুলনামূলক বড়। গম্বুজগুলোর ভেতরের অংশ সম্পূর্ণ খালি হওয়ায় মসজিদের ছাদ অনেক উঁচু ও সুদৃশ্য মনে হয়। মসজিদের ভেতরে সামনের দেয়ালে তিনটি খিলানবিশিষ্ট অর্ধ অষ্টভুজাকৃতির মিহরাব। মধ্যখানের মিহরাবটি তুলনামূলক বড় এবং সেটিতেই ইমাম দাঁড়িয়ে ইমামতি করেন। মসজিদের উত্তর পাশে ভিতের সঙ্গে লাগোয়া একটি কক্ষ। সেই কক্ষে রয়েছে নারীদের জন্য নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭