ইনসাইড পলিটিক্স

কবির বিন আনোয়ার কি এইচ টি ইমাম হতে পারবেন?


প্রকাশ: 06/01/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। গতকাল এ ব্যাপারে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে অবসরে যাচ্ছেন কবির বিন আনোয়ার। কবির বিন আনোয়ার আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতাও ছিলেন। 

আওয়ামী লীগ ঘরোনার এই আমলা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। চাকরির মেয়াদ শেষ হবার আগে আগে গত ১১ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে তিনি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন এবং তার নেতৃত্বে ২০২৪ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে দুইজন মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল। তাই কবির বিন আনোয়ার এর ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ১৯ দিনের মাথায় কবির বিন আনোয়ারকে অবসরে পাঠানো হয়। 

গত ৩ জানুয়ারি ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ার কারণে স্বাভাবিক নিয়মে তিনি অবসরে চলে যান। এটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। কিন্তু তখনও চমকের অনেকখানি বাকি ছিল। বুধবার তিনি সপরিবারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলেও বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ সাক্ষাতের পর পরই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হচ্ছেন এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হচ্ছেন। এই গুঞ্জনে ঘি ঢালে তার আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে  যাওয়ার পর। তিনি গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান এবং সেখানে আওয়ামী লীগের দুইজন তরুণ নেতা ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও ড. সেলিম মাহমুদ তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। এরপর তাকে এইচ টি ইমামের পক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তিনি এইচ টি ইমামের চেয়ারে বসেন। এরপরই গুঞ্জন পল্লবিত হয়।

ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি এইচ টি ইমামের জায়গায় বসবেন এবং তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী নির্বাচন পরিচালনা করবেন। ১৯৯৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনায় আওয়ামী লীগ কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। প্রথমে প্রয়াত শাহ এম এস কিবরিয়া, এরপর এইচ পি ইমাম এই দায়িত্ব পালন করেন। আমলাদের ওপর নির্ভরতার একটা বড় কারণ ছিল নির্বাচনের সময় প্রশাসনের ব্যাপক ক্ষমতা থাকে বিশেষ 

করে মাঠ প্রশাসন নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের বিপর্যয়ের পর আওয়ামী লীগের মধ্যে এই উপলদ্ধি ঘটে যে আমলাদের ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা করা অসম্ভব ব্যাপার। এজন্য নির্বাচন পরিচালনায় কো- চেয়ারম্যান পদে একজন আমলাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। যে আমলা নিজে নির্বাচন করবেন না বরং নির্বাচনকালীন সময়ে সারা দেশের পরিস্থিতি দেখভাল করবেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করবেন। সে বিবেচনায় থেকেই প্রথমে শাহ এম এস কিবরিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দুটি নির্বাচনে কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং এই দুটি নির্বাচনের মধ্যে ১৯৯৬ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এবং ২১ বছর পর ক্ষমতা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে শাহ এম এস কিবরিয়া নিজেই নির্বাচন করেন এবং ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে বিরোধী দলের আসনে বসতে বাধ্য হয়। আর এরপর এস এম এস কিবরিয়ার মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। তখন দায়িত্ব দেওয়া হয় এইচ টি ইমামকে। 

এইচ টি ইমাম মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। পচাঁত্তর পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। খুনি মোশতাককে তিনি শপথ পাঠ করান। এরপর তাকে কারাগারে হয় এবং তার পদাবনতি হয়। যুগ্নসচিব থেকে আবার ধাপে ধাপে তিনি সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত হন এবং যোগাযোগ সচিব হিসেবে শেষ পর্যন্ত তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান।  কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এইচ টি ইমাম বা  শাহ এম এস কিবরিয়ার স্থান কি কবির বিন আনোয়ার পূরণ করতে পারবেন?  শাহ এম এস কিবরিয়া অত্যন্ত মেধাবী আমলা ছিলেন এবং জাতীয় রাজনীতির পরিসীমা থেকে ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তার ভূমিকা ছিল প্রশংসিত এবং পরিচ্ছন্ন। তিনি আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রশাসনের দূরত্বই শুধু কমান নাই, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা বিষয়গুলোকে একটি পরিকল্পিত বিন্যস্ত আকার দিতে সক্ষম হয়েছেন। সেই ধারা অনুসরণ করেছিলেন এইচ টি ইমাম। 

এইচ টি ইমামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক সমালোচনা থাকলেও তিনি অত্যন্ত গোছানো মানুষ ছিলেন এবং প্রত্যেকটি কাগজপত্র, আইন বিধি ইত্যাদি তিনি মুখস্ত রাখতেন এবং যেকোন সময়, যেকোন  কাগজপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে তার বিকল্প ছিল না। সেদিন থেকে কবির বিন আনোয়ার একজন খোলা মনের মানুষ। তিনি তাঁর কর্মজীবনের সব সময় স্পষ্ট বাদী এবং দিল খোলা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গোছানোর ক্ষেত্রে তিনি অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতেন। আমলা মহলে তার যেমন জনপ্রিয়তা রয়েছে তেমনি তার শক্রর সংখ্যাও কম নয়। প্রশাসনে তিনি মেধাবী আমলা হিসেবে পরিচিত হলেও তাকে অনেক গুছানো বলতে নারাজ। এখন দেখার বিষয় এইচ টি ইমামের জায়গায় তিনি কিভাবে কাজ করেন। তবে কোনো মানুষই একজন আরেক জনের মত নয়। কবির বিন আনোয়ার কখনই এইচ টি ইমাম হবেন না। আর এইচ টি ইমামের মতো করেও তিনি যে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন না এটা বলাই বাহুল্য। তিনি তার নিজস্ব স্টাইলে, নিজস্ব ধরনের এই কাজটা করবেন। যদি না তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন দেখার বিষয় কবির বিন আনোয়ারকে শেষ পর্যন্ত এই দায়িত্ব দেয়া হয় কিনা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭