এডিটর’স মাইন্ড

রাজনৈতিক সমঝোতা: ভারতকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশ: 07/01/2023


Thumbnail

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকর্তা একের পর এক বাংলাদেশ সফর করছেন। আজ ঢাকায় এসেছেন জো বাইডেনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা এবং হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার। তিনি চার দিনের সফরে তিনি ঢাকায় আসছেন। এরপর পরই ঢাকায় আসবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিযা বিষযক অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। এ সফরগুলো প্রত্যেকটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা এবং চিন্তাগুলো নিয়ে ধারণা দেওয়ার জন্যে এইসব সফর হচ্ছে বলে জানা গেছে। যদিও প্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচন সম্পর্কে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং জনগণের মতামত যেন তাতে প্রতিফলিত হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর এ লক্ষ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই মনোভাব যেন রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপালন করে, সেটির জন্যই ঘন ঘন মার্কিন কূটনীতিকদের বাংলাদেশ সফর বলেও বিভিন্ন মহল মনে করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, কার অধীনে হবে - ইত্যাদি বিষয়গুলো একান্তই বাংলাদেশের ব্যক্তিগত বিষয়। এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আহবানকে বাংলাদেশ খুব একটা আমলে নিচ্ছে বলেও মনে হয় না। কারণ, বাংলাদেশ এখন আগের অবস্থানে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা এখন অনেক কমে গেছে। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির জন্য বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বিরাট বাজার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপে রেখে বাজার দখলের কৌশল নিয়েছেন বলেও কোনো কোনো মহল মনে করে। এবং এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আহবানগুলোকে একেবারে নিরপেক্ষ এবং আন্তরিক মনে করে না বাংলাদেশের রাজনীতির কোনো কোনা মহল। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব সর্বজনবিদিত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালো মতোই জানে যে, বাংলাদেশকে খুব বড় ধরনের চাপ দেওয়ার অবস্থানে তারা নেই। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র যেটি চায়, সেই বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সহযোগিতা চাইছে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই দেশটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে যে, ভারতকে পাশে পেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ মিশন বাস্তবায়ন করা দুরূহ এবং কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভারত যদি শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং কৌশলকে সমর্থন না করে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেটি করতে চায় সেটি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কি চায়? আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশে তিনটি বিষয় হতে পারে -

১. সরকার আগের মতোই ২০১৪ বা ২০১৮ এর মতোই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে। এবং নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন তত্ত্বাবধান করবে। 

২.শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলের আন্দোলনের তীব্র চাপে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছাকাছি একটি নির্বাচনী ব্যবস্থায় রাজি হবে। 

৩. শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতা, গোলোযোগে একটি অসাংবিধানিক শক্তি ১/১১ এর মতো আবার ক্ষমতায় আসবে। 

এই তিনটি মতামতের মধ্যে কোন মতামতটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতামত, সেটিই দেখার বিষয়। তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির সঙ্গে ভারত তো নয়ই, অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশই একমত নয়। তাছাড়া, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের বিষয়টি রাশিয়া এবং চীনও ভালোভাবে নিচ্ছে না। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যা খুশি করবে - এমন সুযোগ আপাতত নেই। আর অন্যদিকে, ভারতও তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিদমন ইত্যাদি নানা বাস্তবতায় এ মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের বিরোধীতা করবে না। সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ মিশন কতটুকু সফল হবে সেটিই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭