ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির আন্দোলনের কী জনসমর্থন আছে?


প্রকাশ: 08/01/2023


Thumbnail

আগামী ১১ জানুয়ারি বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান। হঠাৎ করেই বিএনপির এই গণঅবস্থান কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করাটা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তাঁরা বলছেন জনসমর্থনের অভাবে বিএনপি একের পর এক বিভিন্ন সভা-সমাবেশের তারিখ এবং সময় পরিবর্তন করছে। 

এদিকে রবিবার (৮ জানুয়ারি) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানিয়েছেন, ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচির সময় সকাল ১০টার পরিবর্তে বেলা ১১টায় করা হয়েছে। বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, আবাহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় অর্থাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সকালের কর্মসূচি এক ঘণ্টা পিছিয়ে সকাল ১০ টার পরিবর্তে বেলা ১১ টায় দেওয়া হয়েছে। 

কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলছেন, বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিতে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারছে না বিএনপি। যে কারণেই বিএনপি ঢাকা মহানগরের গণসমাবেশ ২৪ ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করেছিল। এবার গণঅবস্থান কর্মসূচিতেও একই ঘটনা হয়েছে। শীতের তীব্রতার কারণে যদি বিএনপি গণঅবস্থান কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করে থাকে, তাহলে এই শীতে বিএনপির কর্মসূচিও শীতের অতলে তলিয়ে ঠান্ডা বরফে রূপান্তরিত হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই শীতে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনও কি ঠান্ডা হয়ে যাবে? প্রসঙ্গতই প্রশ্ন উঠছে, বিএনপির এসব আন্দোলনের কী জনসমর্থন আছে?   

অন্যদিকে, গত বছরের শেষ দিক থেকে শুরু করে চলতি বছরের মধ্যেই পর পর বিএনপি এবং এর সমমনা বেশ কয়েকটি জোটের আত্মপ্রকাশ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব জোটগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১১ দলীয় জোট, ১২ দলীয় জোট, ১৭ দল নিয়ে নতুন জোট ‘গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ’। এ ছাড়াও, সর্বশেষ আজ (৮ জানুয়ারি) ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’ নামে আরও একটি নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করেছে। এসব জোটগুলোসহ ৩২টি দল সরকার পতনের উদ্দেশে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই এসব জোটগেুলো গণমিছিল কর্মসূচিও করেছে। 

কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষরা বলছেন, বিএনপি এবং ৩২ দল, বা জোট -যাই বলা হোক না কেন, রাজনীতিতে জনসমর্থন অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। আন্দোলনে এজেন্ডা দেওয়া খুবই সহজ। কিন্তু জনসম্পৃক্ততা, জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এজেন্ডা ছাড়া জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কোনো আন্দোলনেই সম্ভব হবে না। বিএনপির বিগত দিনের কর্মসূচিকে ঘিরেও জনসাধারণের মহা ঢল বা এ ধরনের কিছু চোখে পড়েনি। ইতিমধ্যে বিএনপি সাতটি বিভাগীয় সমাবেশও সফল করেছে। রাজধানী ঢাকার সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কিছু সহিংসতা ঘটলেও শেষ পর্যন্ত সমাবেশ সফল করতে সক্ষম হয়েছিল বিএনপি। কিন্তু গোলাপবাগের ছোট্ট একটি মাঠে বিএনপির সমাবেশে জনসাধারণের ঢল নামেনি। বিএনপির প্রতি সত্যিই যদি জনসমর্থন থাকতো,তাহলে অন্ততপক্ষে রাজধানী ঢাকার সমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এ ছাড়াও, বিএনপি ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচিতেও জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তাই প্রসঙ্গতই প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপির এসব আন্দোলনের কী জনসমর্থন আছে? 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষরা আরও বলছেন, মূলত বিএনপি এতোগুলো জোট গঠন করেও জনসমর্থন অর্জন করতে পারছে না। নাম সর্বস্ব এসব জোট, দল গঠন করেও জনসমর্থন পাচ্ছে না দলটি। কেননা বিএনপির আন্দোলনের ইস্যুগুলোর সাথে কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। জনগণের জন্য এই আন্দোলন নয়। বিএনপির এসব আন্দোলন কেবলমাত্র বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা। খালেদা এবং তারেকের নামে যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করা ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব ইস্যুগুলো কেবলই পরিবার কেন্দ্রিক। মূলত, বিএনপি এসব পরিবার কেন্দ্রিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে সব ১০ দফা বা ২৭ দফা ঘোষণা করছে এবং সরকার পতনের যে আন্দোলন করছে, তাতে জনসমর্থন পাচ্ছে না বিএনপি।       

সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দলটি - ‘এই সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি’- এই অবস্থানে রয়েছে। সেখানে ওই দলটিরই নেতা কর্মীরা দল বেঁধে ভোট দিয়েছেন। বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেয়নি দলটি। চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র হয়েও বিএনপির কেউ নির্বাচনে অংশ নেননি। কিন্তু সেই নির্বাচনেই ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত জনপ্রতিনিধিরা দল বেঁধে ভোট দিয়েছেন। দল যখন আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, তখন জেলা পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়ে সহায়তা করছেন। তবে ভোট দেওয়া বিএনপির জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই তাঁদের ভোট দেওয়া হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, বিএনপির নেতারাও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করছেন। 

এসব একাধিক ঘটনার উদাহরণ দিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দলের বিভিন্ন সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে বিএনপির তৃণমূলের নেতারাসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতাদেরই সমর্থন নেই। যেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরই সমর্থন নেই, সেখানে জনসমর্থন ঠিক কতটুকু আশা করা যায়? তাই প্রসঙ্গতই প্রশ্ন উঠছে, বিএনপির এসব আন্দোলনের কী জনসমর্থন আছে?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭