ইনসাইড গ্রাউন্ড

গ্যারেথ বেল: এক রঙিন অধ্যায়ের সমাপ্তি


প্রকাশ: 10/01/2023


Thumbnail

নিজেদের অর্ধ থেকে বল নিয়ে বা-প্রান্ত ধরে ছুটে চলেছেন, ক্ষিপ্র গতিতে প্রতিপক্ষের ফুটবলারকে বলের দখল নিতে দিচ্ছেন না, শেষমেষ ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে গোলরক্ষকের দু পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জড়ালেন জালে। কোপা দেল রের ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে এমনই অনিন্দ্য সুন্দর গোল এসেছিল গ্যারেথ বেলের পা থেকে। ফ্রি-কিক এবং বাইসাইকেল কিক থেকে চোখ ধাধাঁনো সব গোলের কারিগর এই ফুটবলার।

গতি আর ফুটবলীয় প্রতিভার মেলবন্ধনে এই প্রজন্মের সেরা ফুটবলারদের একজন হয়ে উঠেছেন গ্যারেথ বেল। আচমকাই সে যাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন এই তারকা ফরোয়ার্ড। ৩৩ বছর বয়সেই নিজের বুটজোড়া তুলে রাখলেন তিনি। পৃথক দুটি টুইট বার্তায়, জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবল থেকে নিজের অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানান এই ওয়েলশ ফুটবলার।

সাউদাম্পটনের বয়সভিত্তিক প্রকল্প থেকে উঠে এসেছে বেল। ২০০৬ সালে ক্লাবটির মূল দলে অভিষেক। থিও ওয়ালকোটের পর তিনিই সাউদাম্পটনের হয়ে মূল দলে খেলা সবচেয়ে তরুণ ফুটবলার। দলটির হয়ে ৪৫ ম্যাচ খেলে করেন ৫টি গোল। সে বছরই জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় তার। ২০০৭ সালে চার বছরের জন্য বেলকে দলে ভেড়ায় টটেনহাম হটস্পার্স। মূলত এরপরই পাদপদ্রীপের আলো নিজের দিকে টেনে নেন এই ওয়েলশ তারকা।

৭ বছর স্পার্সদের সাথে কাটিয়ে ২০১৩ সালে দলবদলের বাজারে বিশ্বরেকর্ড গড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন এই উইঙ্গার। ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তার সাথে ৬ বছরের চুক্তি করে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। রিয়ালে খেলেয়াড়ি জীবনের সাফল্যের চূড়ায় উঠেছেন বেল। রিয়ালের হয়ে ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩টি লা লিগা ও ১টি কোপা দেল রে জিতেছেন গ্যারেথ বেল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও করিম বেনজেমার সাথে বেলের আক্রমণভাগকে ডাকা হতো 'বিবিসি'। প্রতিপক্ষের জন্য এই ত্রিফলা যে কত ভয়ংঙ্কর ছিলো তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ঠ। ৬৫৮ ম্যাচ থেকে ৪৪২টি গোল এসেছে এই 'বিবিসি'র কাছ থেকে। ২০১৮ সালে রোনালদো জুভেন্টাসে যোগ দিলে ভেঙে যায় এই দুর্দান্ত কম্বিনেশন।

আবার তবে ইনজুরির সাথে যুদ্ধ করতে করতে মাঠে অনেকটাই ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ক্লাবের সাথেও তৈরি হয়েছিলো নানা টানাপোঁড়ন। মাঝে ২০২০-২১ মৌসুমে ধারে টটেনহামে খেলেছেন। তবে রিয়াল ছেড়ে সবশেষ গত বছর জুনে নাম লেখান যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের দল লস অ্যাঞ্জেলস এফসিতে। পরিস্থিতি ছিলো এমন- ক্লাব ছেড়ে হাফ ছেড়ে বাঁচালেন বেল। সেই সাথে রিয়ালও যেন তাকে ছাড়তে পেরে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

সবশেষ কাতার বিশ্বকাপেও খেলেছন বেল। জাতীয় দলের হয়ে কোন শিরোপার নেই তার ঝুঁলিতে। তবে তর্ক ছাড়াই ওয়েলশের ফুটবল ইতিহাসের কিংবদন্তি গ্যারেথ বেল। তার হাত ধরে ১৯৫৮ সালের পর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ওয়েলশ। দলকে দুটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে নিতে সহায়তা করেছেন বেল। ২০১৬ ইউরোর সেমিফাইনালেও উঠেছিলো। ওয়েলশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ ও গোলের রেকর্ডও বেলের দখলে। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ১১১ ম্যাচ খেলে ৪১ গোল করেছেন এই ফুটবলার। ফলে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিও আনুষ্ঠানিকভাবে বেলের সবশেষ ম্যাচ হয়ে থাকলো। দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ৫৫৪ ম্যাচ থেকে ১৮৬ গোল করেছেন বেল। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৬ গোল রিয়ালের হয়ে। বিদায় বেলায় সতীর্থ, কোচ, বন্ধু ও সমর্থকদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বেল।

বিদায় সবসময়ই কঠিন। গ্যারেথ বেলেরও সেটি অজানা নয়। যার হাত ধরে পুনর্জন্ম হলো ওয়েলশের ফুটবলের, তার বিদায় বেলায় বীণার করুণ সুর বাজছে সেখানকার প্রতিটি ঘরে। তবুও সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় বাস্তবতা। তাই গ্রেটদের বিদায় যেমন কষ্ট দেয়, তেমন এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণাও দেয়। আর এ সকল কিংবদন্তিদের দেখানো পথ বা তাদের গল্প থেকে শিখেই বিকশিত হয় পরবর্তী প্রজন্ম। গ্যারেথ বেলে অনুপ্রাণিত হয়ে কেউ একদিন মাঠ দাপিয়ে বেড়াবেন। যার দৌড় বা বলের উপর দখলের চিত্র মনে করিয়ে দেবে বেলকে। বর্ণিল ক্যারিয়ারের সকল সুন্দর মুহূর্তের জন্য বিদায় বেলায় ধন্যবাদ প্রাপ্য বেলের। ধন্যবাদ, গ্যারেথ বেল।

গ্যারেথ বেল, অবসর, ফুটবল, ওয়েলশ, রিয়াল মাদ্রিদ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭