ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রিজার্ভ ৫৬০ কোটি ডলার, ২৪% মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ঝুলে আছে পাকিস্তান


প্রকাশ: 11/01/2023


Thumbnail

৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৫৬০ কোটি ডলার যা দিয়ে মাত্র এক মাসের আমদানি ব্যয়ও ঠিক মতো মেটানো সম্ভব না। অর্থসংকটের মুখে দেউলিয়ার ঝুঁকিতে এখন দেশটি। 

গত কয়েক ব্ছর ধরেই অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মুখে পাকিস্তান। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় নেট বৈদেশিক রিজার্ভ এখন ৫.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দেশের মোট তরল বৈদেশিক রিজার্ভ এখন ১২ বিলিয়ন ডলার।

 টানা রাজনৈতিক সংকট, তার ওপর এ বছরে দেশটিতে ভয়াবহ বন্যার আঘাত- পাকিস্তানকে নিয়ে গেছে দেউলিয়ার একেবারেই দ্বারপ্রান্তে। বিশ্বমন্দার এই সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকেও নতুন কোন তহবিল পাওয়ার আশ্বাস পায়নি দেশটি।

প্রবল আর্থিক সংকটে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানে বাজেটে বড় ধরনের ঘাটতি ও দুর্বল মুদ্রানীতি ব্যবস্থা আগে থেকেই ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি, বৈদেশিক মুদ্রার হ্রাস ও সরকারি ঋণ। এ ছাড়া কাঠামোর দুর্বলতা, কর অব্যবস্থাপনা ও ব্যবসার প্রতিকূল পরিবেশ তো আছেই।

রিজার্ভ কমার কারণ হিসেবে এক বিশেষ প্রতিবেদনে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বর্তমান সরকার ২০২২ -২৩ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির দিকে খুব একটা নজর দেয়নি। এমনকি দেশটিতে আর্থিক স্থিতিশীলতা ছাড়াও দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসে দেশটির রিজার্ভ কমেছে এক হাজার একশ ৬০ কোটি ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল এক হাজার ৭৭০ কোটি ডলার যা এখন ৬১০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ অর্থ দিয়ে এক মাসের আমদানি করতে পারবে পাকিস্তান।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নেট বৈদেশিক রিজার্ভ এখন ৫৯০ কোটি ডলার। তার অর্থ দেশের মোট তরল বৈদেশিক রিজার্ভ এখন মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৩ বছরের কিস্তিতে ৬০০ কোটি ডলারের সম্প্রসারণযোগ্য ঋণ দিতে সম্মত হয় আইএমএফ। তবে এ বছরের শুরুতে শর্ত মানতে না পারায় কিস্তির অর্থ দেয়া বন্ধ রাখে সংস্থাটি। তবে কৃষিখাত ও রপ্তানিমুখী খাতে রেয়াতপ্রাপ্ত বিদ্যুতের জন্য ভর্তুকিতে বড় ধরনের সংরক্ষণ না করতে চাইলে ঋণের অর্থ দিতে ত্বরান্বিত করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কখন নবম পর্যালোচনা শেষ করে পাকিস্তানকে অর্থ সহায়তা দেবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইলসহ বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, এখনও দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পাকিস্তান।

ডলার–সংকটের কারণে জ্বালানিসহ নিত্যপণ্য আমদানি করতে পারছে না পাকিস্তান। এমনকি জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী আমদানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার যে মজুত রয়েছে, তা দিয়ে বড়জোর তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। এ পরিস্থিতি জ্বালানি সাশ্রয়ে উদ্যোগী হয়েছে দেশটি। গত সপ্তাহে রাত আটটার পর সব বিপণিবিতান, দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তান সরকার দুটি এলএনজি-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দোহা নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এর মধ্যে পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা। দেশটিকে ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা। গত বছর ভয়াবহ বন্যা আঘাত হানে দেশটিতে। তাতে ১ হাজার ৭০০ মানুষের প্রাণহানি হয়। বাস্তুচ্যুত হয় ৮০ লাখের বেশি মানুষ। পাশাপাশি দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা দেশটির অর্থনীতিও চরম সংকটে পড়ে।

তাই দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে সহায়তা চায় দেশটি। তারই ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থা ৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও দেশটির সংকট মোকাবিলায় প্রায় ১ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চলমান অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে পাকিস্তান জাতিসংঘের সঙ্গে যৌথভাবে জেনেভায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেছে। এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নেওয়া। এ সম্মেলনের বৈঠকের এক ফাঁকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী আইএমএফের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যে কয়টি দাতা সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), বিশ্বব্যাংক এবং সৌদি আরব। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ফ্রান্সও এ সহায়তায় অংশ নেবে। জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি। বেশ কয়েকটি সংস্থার কাছ থেকে বড় অঙ্কের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘এমন প্রতিশ্রুতি আমাদের আশাবাদী করেছে। আমরা এ–ও মনে করি যারাই দুর্যোগে পড়বে, বিশ্ব তাদের পাশে দাঁড়াবে।’

এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পাকিস্তানকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে পুনরুদ্ধারে বড় বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান বিশ্ববাসীর প্রতি। জাতিসংঘ মহাসচিবের এ আহ্বানের পর বেশ কয়েকটি সংস্থা ও দেশ এগিয়ে আসে। তারা পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭