ইনসাইড থট

আমার দেখা এক/এগারো


প্রকাশ: 11/01/2023


Thumbnail

আজ আবারও সেই এক/এগারো। আমার ধারণা মতে এক/এগারোর গুরুত্ব এখনও অনেকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। আমি সাধারণত নিজেকে নিয়ে লিখি না। কিন্তু আজকের লেখায় আমি এক/এগারোর সময় আমার কি ভূমিকা ছিল তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবো।

মনে রাখতে হবে এক/এগারো আসার আগে থেকেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং তিনি আমাকে সবসময় মোদাচ্ছের ভাই বলেই ডাকেন। একদিন আমি দার্শনিক শেখ হাসিনার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি সেখানে তোফায়েল ভাই, মোকাম্মেল সাহেব এবং আমু ভাই আছেন। উনারা নিচে নামার জন্য দাঁড়িয়েছেন এবং আমি মাত্র আসলাম। এর আগে কি নিয়ে কথা হয়েছে আমার জানা নেই। তবে বুঝতে পারলাম দার্শনিক শেখ হাসিনা বলছেন যে, বিএনপি চাচ্ছে অসাংবিধানিক পথে একটি সরকার ক্ষমতায় আসুক এবং তাদের মাধ্যমে তারা নিজেরা ক্ষমতায় আসবে। এটা নিয়ে অনেক নেতাই তার সাথে দ্বিমত পোষণ করছে এবং তিনি বেশ মেজাজ খারাপ করেই নিচে নামলেন। নিচে নেমে আসার পর তিনি বললেন যে, আমাদের আন্দোলন আরও জোরদার করতে হবে এবং একটি দেশ যাতে অসাংবিধানিক পথে চলে না যায় সেটি ঠেকাবার জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে।

এর কিছুদিন পর আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি জামাত সকলে মিলে রাজপথে তান্ডব শুরু করল, মানুষ হত্যা শুরু করল, তখন এই সুযোগ গ্রহণ করল যারা অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। এর আগে দেশের রাজনীতিবিদরা দেশ চালাতে পারছে না এ সম্বন্ধে জনমত প্রতিষ্ঠা করতে অনবরত সংগ্রাম করে যাচ্ছিল দেশের মূলধারার দুটি গণমাধ্যম প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার। এমন একটি বাস্তবতায় এক/এগারো আসলো। আর্মি দেশের শাসনভার গ্রহণ করল। কিন্তু তারা দেখলো বিশ্বে যে রাজনৈতিক অবস্থা তাতে তারা নিজেরা সরাসরি এসে দেশ পরিচালনা করতে পারবে না। সুতরাং তারা একটি ভিন্ন পন্থা গ্রহণ করল। আমার এক ছোট ভাই মুমিন খান। সে রাজনীতির সাথে যুক্ত নয় কিন্তু অনেকের সাথে তার মেলামেশা আসে। সে আমাকে একদিন বলল যে, ড. ইউনুস এ দেশের শাসনভার পাচ্ছেন। আমি তাকে এক প্রকার বকা দিয়েই বললাম, রাজনীতিতো করো না তাই এমন আহাম্মকের মত কথা বল। কোথায় দেশ পরিচালনা আর কোথায় ড. ইউনুস। কিন্তু পরে এক/এগারো যখন এলো তখন নিশ্চিত হলাম যে ড. ইউনুসকে অনুরোধ করা হয়েছিল কিন্তু তিনি রাজি না হওয়াতে তখন তারা ইউনুসের অনুরোধেই ফখরুদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে।

কিছুদিন পর নেত্রী শেখ হাসিনা আমার কাছে চোখ দেখাতে আসলেন এবং বললেন, আমি কিন্তু কোনো মিডিয়াকে ফেস করতে চাই না। কিন্তু আমি ঠিক তার উল্টোটা করলাম। আমার পরিচিত যত মিডিয়া আছে সবাইকে বললাম চলে আসতে। কাজ শেষে নেত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন এবং সেখানে তিনি খুব কঠিনভাবে আর্মিকে টার্গেট করে জবাব দিলেন। এবং যারা অসাংবিধানিক পথে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের টার্গেট করে অনেকটা প্রোভোকেটিভ ভাবেই কথা বললেন। যাতে দেশবাসী জাগ্রত হয়। এর ২-৩ দিন পর তিনি আবারও সাংবাদিকদের সম্মুখীন হন এবং এবার আরও কঠিনভাবে আর্মির সমালোচনা করলেন। যাতে সাধারণ জনগণ বিক্ষিপ্ত হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরে।

এর কিছুদিন পরই তাকে গ্রেফতার করা হল। কারাবন্দী থাকা অবস্থায় আমি কয়েকবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তার সাথে দেখা করতে যাই এবং বের হয়েই প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের জানাই যে, নেত্রী খুব অসুস্থ এবং তাকে সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে তিনি তার শ্রবণ শক্তি এবং দৃষ্টি শক্তি উভয়ই হারাতে পারেন। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা আম্র সুবিধার মনে হচ্ছে না। তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। মিডিয়াতে এটা অনেক প্রচার করা হল। এরপর দ্বিতীয়বার নেত্রীর সাথে দেখা করে এসে আবারও প্রেস কনফারেন্স করি। এতে করে তারা বেশ চাপে পরে যায় এবং আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়। 

একবার নেত্রী অনেক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অন্য ডাক্তার দেখানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু তিনি তখন বলেছিলেন, মোদাচ্ছের আলী ছাড়া আমি অন্য কাওকে দেখাবো না। এরপর ঠিকই তারা আমাকে অনুরোধ করে নেত্রীকে দেখতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তখন তাদেরকে চাপে ফেলার জন্যই আমি বলি যে, আমি যাবো না। এটা আমার ডিপার্ট্মেন্ট না। ওরা অনেক ঘাবড়ে যায়। আমি তাদের বললাম প্রফেসার আবদুল্লাহ আসুক। পরে আমি এবং আবদুল্লাহ মিলে তাকে দেখতে গেলাম। একদিন রিটায়ার্ড মেজর জেনারেল মতিন আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, উনিতো আওয়ামী লীগের ডাক্তার। আমি সাথে সাথে মিডিয়াতে বললাম, তাকে প্রমাণ করতে বলুন আমি আওয়ামী লীগের ডাক্তার। উনার তো কোন বুদ্ধি নেই। উনার বুদ্ধি হাটুর সমান। এটাও টেলিভিশনে প্রচার হল। বলা যায় ওরা আমাকে নিয়ে অনেক বিপদে পরে গেল। এমন কড়া ভাবে আমি কথা বলতে শুরু করলাম যে সমস্ত বাংলাদেশে আমি এক প্রকার হিরোর মত। তার একটিই কারণ যে আমি দার্শনিক শেখ হাসিনাকে সমর্থন করি। বলা যায় শেখ হাসিনার দ্বারা আমি দেশে পরিচিতি পেলাম এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করলাম।

কিছুদিন পর নেত্রীর শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিল। তখন আমি একটা টিম নিয়ে গেলাম। একজন স্কিন স্পেশালিষ্ট হাবিব এ মিল্লাত, মেডিসিনের স্পেশালিষ্ট এবিএম আবদুল্লাহ, একজন কার্ডিয়াক স্পেশালিষ্ট এবং প্রান গোপাল দত্ত। আর্মিদের সেদিন উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে স্কয়ার হাসপাতালে আনা। সেটা আমরা বুঝিনি তখন। আমিও দেখলাম স্কয়ার হাসপাতালে নিলে ভাল হয়। এ ঘটনার পরও আমি প্রেস কনফারেন্স করি এবং পরবর্তীতে চাপে পরে তারা তারা নেত্রীকে প্যারোলে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭