ইনসাইড পলিটিক্স

তবে কি পিছু হটলো জামায়াত, নাকি অন্য কৌশল?


প্রকাশ: 11/01/2023


Thumbnail

গত বছরের ডিসেম্বরে জামায়াত বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এর অংশ হিসেবে বিএনপি এবং এর সমমনা দলগুলোর প্রথম কর্মসূচি ছিল ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিল। ওই দিন জামায়াতও ঢাকায় একই কর্মসূচি পালন করেছিল। সেদিন রাজধানীর পল্টন, মালিবাগসহ কয়েকটি এলাকায় জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

কিন্তু বুধবার (১১ জানুয়ারি) সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করাসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকে গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি জামায়াত। এ কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে জামায়াত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করেছে। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় একটি আলোচনা সভাও করেছে দলটি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি জামায়াত পিছু হটলো? 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১৩ ডিসেম্বর জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জামায়াতের কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না খতিয়ে দেখতেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের সিটিটিসি শাখা। শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত চৌধুরী নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সিলেট আঞ্চলের সমন্বয়ক বলে প্রমাণ পায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে জানা গেছে, তার ছেলে রাফাত চৌধুরীসহ আরও বেশ কয়েকজনের জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার পেছনে ডা. শফিকুর রহমানের প্রত্যক্ষ ইন্দন রয়েছে। এ ছাড়াও, তিনি এই সংগঠনকে পৃষ্ঠপোশকতা করছেন। যে কারণেই জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এখন জেলে রয়েছেন। এসব কারণেই হয়তো বিএনপি এবং এর সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন থেকে পিছু হটছে জামায়াত।      

সূত্র জানায়, বুধবার (১১ জানুয়ারি) বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচির দিনে প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচি না দিয়ে সভার আয়োজন করেছে জামায়াত। জামায়াতের গণমিছিলে প্রতিবন্ধকতার প্রতিবাদ ও দলের আমিরসহ গ্রেপ্তার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আলোচনা সভাটির আয়োজন করা হয়। সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির এবং সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত জামায়াতের আন্দোলন চলবে। যারা গণতন্ত্র মানতে চায় না, তাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করবে জামায়াত। মুজিবুর রহমান দাবি করেন, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান গত ১০ ডিসেম্বর ১০ দফা ঘোষণা করার পর তাঁকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৩ সালে হাইকোর্টের রায় অনুসারে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধীকরণ অবৈধ বলে ঘোষিত হয়। জামায়াতের প্রায় সব শীর্ষনেতাই যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত। অনেকের ইতোমধ্যেই বিচার পর্বের শেষে ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে। এখন দাবি উঠছে জামায়াতকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষিত করার। এখন কেবলই গোপন বৈঠক বা গোপনে সভা-সমাবেশ করছে জামায়াত। আজকের গণ-অবস্থান কর্মসূচি থেকেও সরে গেছে জামায়াত।    

তাঁরা জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর পরই  বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। কিন্তু দেশের প্রথম সেনা প্রশাসক জিয়াউর রহমান তার প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্যই জামায়াতকে ফের মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ করে দেন। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তানপন্থীদের রমরমা অবস্থা ফের শুরু হয় জেনারেল জিয়ার হাত ধরে। নিজের রাজনৈতিক আকাঙ্খা মেটাতে স্বাধীনতার শত্রুদের সঙ্গেও হাত মেলান জেনারেল জিয়া। 

অন্যদিকে, জিয়ার মতোই সামরিক উত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের প্রশ্রয় দিতে শুরু করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও। আর জিয়ার সহধর্মিণী খালেদা জিয়া জামায়াতকে সঙ্গী করেই বাংলাদেশে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়ার কল্যাণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে অসম্মান করে পাকিস্তানপন্থী জামায়াতের নেতারাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ করতে থাকে। জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হলেও বিএনপির কল্যাণে দেশবিরোধী এ শক্তি বার বার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। কিন্তু সেই সময়টা এখন পাল্টে গেছে। নিষিদ্ধ জামায়াতের মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশও নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে। এসব কারণেই হয়তো জামায়াত বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে ভিন্ন কোনো কৌশল অবলম্বন করছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নিষিদ্ধ জামায়াত এখনও কিভাবে এই দেশে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে? 

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করার পর, ভোটে অংশ নেওয়ার নিবন্ধন পেতে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে নতুন দল গঠন করে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করে জামায়াত। ভোটের রাজনীতির কারণে সরকার জামায়াতকে পুরোপুরি নিষিদ্ধও করতে পারছে না। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতাদের সাজা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীরা অনেকবার বলেছেন, জামায়াতেরও বিচার হবে। এর জন্য শিগগিরই আইন সংশোধন হবে। ২০১৩ সালের আগস্ট থেকে আট মাস জামায়াতের বিষয়ে তদন্ত করে ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। এতে দলটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটি ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত এবং সে অভিযোগ প্রমাণিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল বা সংগঠনের বিচার ও শাস্তির বিধান না থাকায় আইন সংশোধনের উদ্যাগ নেয় আইন মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে আইনটির খসড়াও হয়ে গেছে। দেশের জনসাধারণের চোখে দলটি ইতিমধ্যেই যুদ্ধাপরাধী এবং মানবাধিকার বিরোধী বলে চিহ্নিত হয়েছে। এসব কারণেই হয়তো পিছু হঠছে জামায়াত। কিন্তু এখন দেখার বিষয় জামায়াত কি সত্যিই পিছু হটছে, নাকি অন্য কোনো কৌশল?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭