লিভিং ইনসাইড

মাইগ্রেন প্রতিরোধে করণীয়


প্রকাশ: 12/01/2023


Thumbnail

ঋতু হিসেবে শীতকাল কার না পছন্দের? প্রতিটি ঋতুর মতই শীতকাল ও তার নিজস্ব রূপ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয় আমাদের মাঝে। শীত এলে অনিবার্য ভাবেই প্রকৃতিতে ঘটে কিছু পরিবর্তন। একদিকে শীত যেমন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে, অন্যদিকে পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার কারণে ভোগান্তিও পোহাতে হয় আমাদের মধ্যে অনেককে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শীতকালে সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি লেগেই থাকে তবে এগুলো ছাড়াও অনেকে তীব্রভাবে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। 

মাইগ্রেন কি? 

মাইগ্রেন হলো মস্তিষ্কের একধরনের নিউরোলজিক্যাল পেইন বা যন্ত্রণা। এই ব্যথা সাধারণত কপালের একপাশে হয়ে থাকে। তবে ধীরে ধীরে এই ব্যথা ছড়িয়েও পড়তে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে বমি ভাব কিংবা বমি, তীব্র আলো বা শব্দে খারাপ লাগা। ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে এই ব্যথা। মাইগ্রেন হলে মস্তিষ্কে একধরনের নিউরোকেমিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়। এই নিউরোকেমিক্যাল সমস্যার কারণে মাইগ্রেন হওয়ার আগেই কিছু প্রি-সিম্পটম দেখা যায়। অবস্থাটিকে বলে Aura। এমন হলে চোখে কম দেখতে থাকে, জিগজ্যাগ লাইন দেখতে থাকে, অথবা ফ্লাশিং লাইট দেখতে থাকে। তখনো মাথার যন্ত্রণা শুরু হয় না।

মাইগ্রেনের ব্যথা কেন হয়?

যদিও মাইগ্রেনের কারণ এখনও যথাযথভাবে জানা যায়নি। তবে অধিকাংশের মতে এটি ব্রেইনের অ্যাবনরমাল অ্যাকটিভিটির ফলাফল যার কারণে ব্রেইনের নার্ভ ও ব্লাড ভেসেল আক্রান্ত হয়। ব্রেইনের এই সাময়িক পরিবর্তন এর কারণ স্পষ্ট করা যায়নি। তবে জেনেটিক্যাল কারণের পাশাপাশি কিছু ট্রিগার বা ফ্যাক্টর থাকে যেগুলো মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। যেমন-

অতি উজ্জ্বল আলো

হরমোনাল ইস্যু

ইমোশনাল ও ফিজিক্যাল স্ট্রেস

ক্লান্তি বা অতিরিক্ত কাজের চাপ

কিছু খাবার বা ড্রিংকস যেমন- চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া

অতিরিক্ত ঘোরাঘুরি

অপর্যাপ্ত ঘুম

দীর্ঘসময় ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ করা বা টিভি দেখা ইত্যাদি

মাইগ্রেনের স্টেজ

মাইগ্রেনের চারটি স্টেজ এবং প্রত্যেকটি স্টেজের লক্ষন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রায় ৪-৭২ ঘন্টা লাগে এই চারটি স্টেজ শেষ হতে। একেকজনের ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতা, সময় ও ধরন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। একদম শুরুর পর্যায়, এ সময়ে কনসেনট্রেশনে সমস্যা হয়, কথা বলা ও পড়তে কষ্ট হয়, মাসল স্টিফনেস, বমি, লাইট, সাউন্ড সেনসিটিভিটি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। সময়কাল ৩ ঘন্টা থেকে কয়েকদিনও থাকতে পারে।

Aura

লাইটের ফ্ল্যাশ দেখা, ভিশনে ব্লাইন্ড স্পট, স্পিচে চেঞ্জ, কানের কাছে শব্দ অনুভূত হওয়া, জিগজ্যাগ লাইন দেখা, গন্ধ ও স্বাদে পরিবর্তন আসা ইত্যাদি সিম্পটমস দেখা দেয়। সময়কাল ৫-৬০ মিনিট হয়ে থাকে।

Attack 

লাইট, সাউন্ড এবং স্মেল সেনসিটিভিটি, ক্ষুধামন্দা, মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া ইত্যাদি। সময়কাল ৪-৭২ ঘন্টা হয়ে থাকে।

Post-drome

কনসেনট্রেশনের সমস্যা, ডিপ্রেশনে থাকা, কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি। এই স্টেজকে মাইগ্রেন হ্যাংওভার বলে এবং ৮০% মানুষ এই স্টেজ এক্সপেরিয়েন্স করে থাকে। সময়কাল ১-২ দিন হতে পারে।

প্রতিরোধের কোনো উপায় আছে কি?

ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ওষুধ সেবন করতে হবে।এছাড়াও জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে উপকার পাওয়া সম্ভব। দেখে নিন সেগুলো কী কী-

১) ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখুন ডায়েটে

বলা হয়ে থাকে ডায়েটে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের সূচনা করে থাকে। তাই, ডায়েটে রাখতে পারেন মিক্সড নাট অ্যান্ড সিড, কলা, ডার্ক চকলেট, ওটমিল ইত্যাদি সেই সাথে আদাও বেশ উপকারী, কারণ বমি বমি ভাব কমাতে আদা বেশ ভালো কাজ করে।

২) পর্যাপ্ত হাইড্রেশন ও সাউন্ডস্লিপ

কাজের চাপে পানি খেতে ভুলে যান অনেকেই! হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে,সরাসরি কড়া রোদ থেকে দূরে থাকতে হবে। সেই সাথে রাতে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। মাইগ্রেনের ব্যথায় ঠান্ডা পানি দিয়ে জলপট্টি দিলে সাময়িক ভাবে বেশ আরাম পাওয়া যায়।

৩) চা, কফি ও কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন

পরিমিত ভাবে চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অতিরিক্ত কোমল পানীয় পান করার অভ্যাস থাকলে সেটাও বাদ দিতে হবে।

৪) অ্যাসেনশিয়াল অয়েল থেরাপি-

যেকোনো ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে ২/৩ ড্রপ ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিক্স করে মাথার তালুতে আলতো হাতে মালিশ করলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। স্ট্রেস কমাতে ও ভালো ঘুমের জন্য ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল সাজেস্ট করা হয়। পেপারমিন্ট অ্যাসেনশিয়াল অয়েলও ব্যবহার করা যেতে পারে, এতে করে একইভাবে উপকৃত হওয়া সম্ভব। 

৫) মেডিটেশন বা ইয়োগা

দিনের শুরুটা করুন কিছু এক্সারসাইজ, মেডিটেশন বা ইয়োগা দিয়ে। শরীর ভালো থাকার পাশাপাশি মাইগ্রেনের সমস্যাও অনেক খানি কমে আসবে। আপনিযতটারিল্যাক্স ও ফ্রেশথাকবেন, মাইগ্রেনততটাইকমেযাবে। মেডিটেশন স্ট্রেস কমাতে দারুণ হেল্পফুল।

৬) ডায়েরি মেনটেইন করুন

আমরা প্রতিদিনই টুকটাক নোট করে থাকি, মাইগ্রেনের ব্যাপারেও তাই করুন। নোট রাখুন ব্যথাটা কবে কবে ও কতদিন পরপর হচ্ছে! ঐ দিন কী কী কাজ করা হয়েছিলো বা কী খেয়েছেন, সেটাও টুকে রাখুন। এতে করে আপনি ট্রিগ্রার ফ্যাক্টর গুলো জানতে পারবেন। ডাক্তার কে হিস্ট্রি দিতেও সুবিধা হবে।

৭) চশমা ব্যবহার করুন

যাদের মাইগ্রেন এর সমস্যা আছে, তারা ল্যাপটপে একটা না কাজ করলে বা রোদে গেলে অবশ্যই ফটোসান চশমা বা পাওয়ার চশমা যদি থাকে সেটা ব্যবহার করুন। তবে চেষ্টা করবেন একটা না যেন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ না করতে হয়। একটু বিরতি দিয়ে কাজ করুন।

সর্বপরি একজন মাইগ্রেনের পেশেন্ট কিন্তু অবশ্যই জানেন যে তার মাইগ্রেনের ব্যথা কখন কখন হয়। সে অনুযায়ী জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করতেহ বে। সবসময়ই মনে রাখতে হবে যে নিজের শরীরের চেয়ে গুরত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই, সুস্থতা সবার আগে। তাই হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলুন, নিজের যত্ন নিন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭