ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

দুর্দশায় পাকিস্তান, দানের টাকা আসলেও সামনে বড় বিপদ


প্রকাশ: 12/01/2023


Thumbnail

গত বছরের পুরো সময়টা মোটেই পাকিস্তানের জন্য সুখকর ছিল না। দেশজুড়ে ভরাবহ বন্যা, রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট-সব মিলিয়ে যবুথবু অবস্থায় ছিল পাকিস্তান। তবে নতুন বছর ২০২৩ দেশটির জন্য যে মঙ্গলকর হতে যাচ্ছে না-ইতোমধ্যে তারই আভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

একদিকে সন্ত্রাসী হামলা উদ্বেগজনকহারে বেড়ে যাওয়া-অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শনির দশায় দেশটি বিপর্যস্ত। গত বছরের নভেম্বরে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) দেশটির সঙ্গে যুদ্ধবিরতি থেকে বেরিয়ে গেছে। নিষিদ্ধ এই গোষ্ঠী পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ব্যাপকহারে হামলার পরিমাণ বাড়িয়েছে। অনেক দেশই তাদের নাগরিকদের পাকিস্তান ভ্রমণে নিষেধ করেছে।

নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই সশস্ত্র গোষ্ঠী টিটিপি পাকিস্তানের শীর্ষ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ‘শক্ত পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে কড়া হুঁশিয়ার বার্তা দেয় দলটি।

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (সিআরএসএস) জানিয়েছে, গত বছর পাকিস্তানে ৩৭৬টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার বেশির ভাগের দায় স্বীকার করেছে টিটিপি, দায়েশ এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। চলতি বছরে হামলার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী আফগানিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে না পাকিস্তানের। সীমান্ত নিয়ে ঝামেলা, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান ভূখণ্ডে হামলার কারণে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা তলানিতে ঠেকেছে।

সম্প্রতি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ খান আফগানিস্তানে টিটিপি গোষ্ঠীর আস্তানার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত দেন। এর জবাবে গত ২ জানুয়ারি পাকিস্তানকে ব্যঙ্গ ও কড়া হুঁশিয়ারি দেয় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান কর্তৃপক্ষ।

তালেবান নেতা ও আফগানিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আহমেদ ইয়াসির পাকিস্তানকে খোঁচা দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণের ছবি পোস্ট করেন। টুইটারে ওই ছবি শেয়ার করে পাকিস্তানকে কড়া ভাষায় হুমকি দেন তিনি।

এদিকে একটি দেশের অন্যতম প্রধান যে হাতিয়ার অর্থনীতি-সেটি ক্রমেই অন্ধকারের পথে নিমজ্জিত হচ্ছে পাকিস্তানে। ক্রমবর্ধমান ঋণ, জ্বালানি আমদানি ব্যয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী, বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে পতন- সবকিছু মিলে অনেকটা বেহাল দশায় পাকিস্তানের অর্থনীতি।

ফেডারেশন অফ পাকিস্তান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি'স (এফপিসিসিআই) বিজনেস প্যানেল (বিএমপি) সতর্ক করেছে, পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ সংকটের মুখোমুখি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্ট গত ৯ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

এফপিসিসিআই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বিএমপি'র চেয়ারম্যান মিয়া আঞ্জুম নিসার বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্ভবত আরও কমতে পারে। কেননা ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশটির ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আছে।

পাকিস্তান ইতোমধ্যে দুবাইভিত্তিক দুই বাণিজ্যিক ব্যাংককে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ৪১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধ করার পর দেশটির মাত্র ২৫ দিনের আমদানি করার রিজার্ভ থাকবে।

জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়, দেশটিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় জিনিষের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে দেশটির লাখ লাখ মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। ১ মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানে রুপির মান ২৪০-এ পৌঁছেছে। সহসাই এ সংকট কাটছে না বলেও শঙ্কা করা হচ্ছে। 

জ্বালানি সংকট কমাতে ইতোমধ্যে দেশটি রাত ৮ টার মধ্যে সকল দোকানপাট, মল এবং বিবাহের হল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ এই ঘোষণা দেন। 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতিকে হটিয়ে দেওয়ার স্লোগান দিয়ে পাকিস্তানে নতুন করে ক্ষমতায় আসে সরকার। তবে শেহবাজ শরিফের সরকারে তাতে তেমন কিছুই করতে পারেননি। 

আশঙ্কা করা হচ্ছে, দেশটির বর্তমান সরকার দেশের এই ক্রান্তিকাল ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে পাকিস্তানের সামনে আরও বড় বিপদ!



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭