প্যারোলে মুক্তি পেয়ে পাবনায় মায়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নিয়েছেন নাশকতার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪ টায় ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বিএনপি নেতা এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টির সত্যতা প্রকাশে গড়িমসি করছে কারা এবং জেল কর্তৃপক্ষ। তারা কেউ বলছেন বিষয়টি অবগত নয়, আবার কেউ বলছেন, দায়িত্বে অন্য কেউ রয়েছেন। কারা কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললেও বিষয়টি তাদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার প্রতিবেদককে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মাহবুবুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, তিনি এখন দায়িত্বে নেই। দায়িত্বে রয়েছেন ডেপুটি জেলার আমিনুর রহমান। তিনি বিষয়টি বলতে পারবেন বলেও জানান তিনি । পরে ডেপুটি জেলার আমিনুর রহমানকে ফোন করা হলে তার নম্বরটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না বলে মোবাইল ফোনে শোনা যায়। শুক্রবার সকালে ফোন করা হলেও ওই একই কণ্ঠ ভেসে আসে ‘এই নম্বরটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না’।
এ বিষয়ে সত্যতা যাচাই করার জন্য বৃহস্পতিবার রাতেই ফোন করা হয় ডেপুটি জেলার মো. আমিনুল ইসলামকে। তিনি বলেন, ‘আমিতো মেডিকেল ভিজিটে গিয়েছিলাম, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে স্যার বলতে পারবেন।’
শুক্রবার সকালে ফোন করা হয় ডেপুটি জেলার তানিয়া জামানকে। তিনি ছুটিতে রয়েছেন বলে জানান। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেই মোবাইল ফোনে ফোন করা হয় কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) সাজ্জাদ হোসেকে। তিনি বলেন, ‘জেলার বা জেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে। এটাতো অধিদপ্তর, হেড অফিস। এখানে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।’
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৩টায় শিমুল বিশ্বাসের মা খোদেজা বিশ্বাস (৭৫) পাবনা শহরতলীর কুঠিপাড়ার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। ওই দিন প্যারোলে মুক্তি পেয়েই বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাস প্রথমে রাজধানীর শাহজাহানপুর যান। সেখান থেকে রাতেই পাবনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটায় কুঠিপাড়া আহেদ আলী বিশ্বাস স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে তার মায়ের নামাজে জানাজা শেষে তাকে পাবনার আরিফপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। পারিবারিক জমির ওপর দাদার নামে এই স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন শিমুল বিশ্বাস।
সূত্র আরও জানায়, শিমুল বিশ্বাসের মায়ের জানাজা ও দাফন কাজে অংশ নিতে নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছলে শত শত নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ সমবেত হন। শিমুল বিশ্বাসকে জড়িয়ে ধরে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রাত সাড়ে ৩টায় পাবনার আরিফপুর গোরস্থানে দাফন শেষে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে শিমুল বিশ্বাসকে আবার ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।
এর আগে বহুল আলোচিত ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে ৭ ডিসেম্বর নাশকতার মামলায় শিমুল বিশ্বাসকে নয়াপল্টন বিএনপি অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। মায়ের মৃত্যুর সংবাদে জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিমুল বিশ্বাসকে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে করে শিমুল বিশ্বাসকে পুলিশ প্রহরায় পাবনায় আনা হয়।