ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির শরিকদের ভেতর নানা লোভ-প্রলোভন


প্রকাশ: 13/01/2023


Thumbnail

সর্বশেষ বিএনপির কর্মসূচিতে ৫৪ টি রাজনৈতিক দল শরিক থেকেছিল। তারা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে বিএনপির সাথে যুগপৎভাবে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু এই শরিকরা কি আসলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় নাকি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিছু একটা আদায় করতে চায় সেটি নিয়ে বিএনপির মধ্যেই এখন সন্দেহ এবং সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের প্রেক্ষাপট বিএনপির মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, শরিকদলগুলোকে যাচাই বাছাই করা উচিত। কারণ এরা অনেকেই নানা রকম লোভে পড়বে এবং সরকারের সাথে দরকষাকষি করার জন্য জোটে যোগ দিয়েছেন। বিএনপির একাধিক নেতার কাছে তথ্য আছে, বিএনপির সঙ্গে গণ-অবস্থান কর্মসূচি করার পরপরই এই শরিকদের অন্তত সাতটি দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ করেছে। সরকারের কাছ থেকে কেউ চাচ্ছে আর্থিক সুবিধা, কেউ যাচ্ছে আগামী নির্বাচনে আসনের নিশ্চয়তা। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন রকম ঠিকাদারি টেন্ডার কাজের জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সাথে যোগাযোগ করছে। এই শরিকদলগুলো এখন বিএনপির জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। 

বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। এই ১০ দফা দাবির পাশাপাশি বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে। বিএনপি আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে। মোট ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করলেও বিএনপির দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে ৫৪টি রাজনৈতিক দল। গত ১১ জানুয়ারি বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে এই ৫৪টি দল বিভিন্ন অবস্থানে থেকে বিএনপির কর্মসূচির সাথে সহমত পোষণ করে। যদিও এই কর্মসূচিতে জামায়াত ছিল না। জামায়াত না থাকলেও এই ৫৪ টি রাজনৈতিক দল বিএনপির জন্য একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক অর্জন বলে মনে করছেন বিএনপির কেউ কেউ। তারা বলছেন, যত বেশি রাজনৈতিক দল বিএনপির দাবির প্রতি সমর্থন জানাবে এবং দাবির সাথে একাত্ম হয়ে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করবে তত সরকারের ওপর চাপ চাপ তৈরি হবে। কিন্তু এটি নিয়ে বিএনপির মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে।

বিএনপি কোনো কোনো নেতা বলছেন, ৫৪টি দলের মধ্যে অন্তত ৪০টি দল নাম সর্বস্ব, ব্যক্তি সর্বস্ব এবং অস্তিত্ববিহীন। এই দলগুলো এখন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই কাজ করছে। এ দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত নয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, বিএনপি যখন আন্দোলন করছে তখন স্বাভাবিকভাবে সরকার বিএনপির আন্দোলনের জোট এবং ঐক্য ভাঙ্গার জন্য চেষ্টা করবে। আর সেই চেষ্টার প্রধান লক্ষ্য হবে যুগপৎ আন্দোলনের যে সমস্ত দলগুলো অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, তিন ধরনের প্রলোভন দিয়ে তাদেরকে আন্দোলন  থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। ফলে এটির দায়ভার পড়বে বিএনপির ওপর। যে তিনটি কৌশলে সরকার জোটের শরিকদেরকে ‘ভাগিয়ে’ নিতে পারে বলে বিএনপির নেতারা মনে করছেন তার মধ্যে আছে

১. আর্থিক প্রলোভন: এই দলগুলোর অধিকাংশই নামসর্বস্ব, ব্যক্তি সর্বস্ব। প্রায় ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত নেই। কাজেই ব্যক্তি সর্বস্ব এই দলগুলোকে সরকারও সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে নির্বাচনমুখী করতে পারে বা বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিতে পারে এবং সরকার বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে দলগুলোকে ব্যবহার করতে পারে।

২. নানারকম উপঢৌকন: এই দলগুলোর মধ্যে অন্তত ১৪টি রাজনৈতিক দলের নেতারা রয়েছেন যারা বিভিন্ন রকম ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারের সঙ্গে জড়িত। কাজেই তাদেরকে যদি বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় তাহলে তারা পক্ষ ত্যাগ করবে এবং সেটি বিএনপির আন্দোলনের জন্য একটা ঝুঁকি তৈরি করে সৃষ্টি করতে পারে। 

৩. নির্বাচনী টোপ: বিএনপির শরিকদের কাউকে কেউকে নির্বাচনী টোপ দেয়া হতে পারে। যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় আসন পাবে। এরকম অন্তত ৭ থেকে ১০টি দল রয়েছে যারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় এবং এ নিয়ে সরকারের সাথে দরকষাকষি করছিল। কাজেই জোটের ব্যাপারে বিএনপিকে আরও সতর্ক হতে হবে বলে মনে করছেন বিএনপির কোন কোন নেতারা। না হলে আন্দোলনের মাঝ পথে যদি শরিকরা উল্টো পথে হাটা শুরু করে তাহলে বিএনপির আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭