এডিটর’স মাইন্ড

নতুন রাষ্ট্রপতি: তালিকা আরও সংক্ষিপ্ত হচ্ছে


প্রকাশ: 13/01/2023


Thumbnail

আগামী মাসেই একজন নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করতে হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী এপ্রিলে। সে হিসেবে নব্বই দিন অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন চূড়ান্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেনি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সংসদ সদস্যদের ভোটে। এই উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন যথাযথ সময়ে তফসিল ঘোষণা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তফসিল ঘোষণা করার আগেই আওয়ামী লীগের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে নানারকম আলাপ-আলোচনা, গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতির আলোচনার দৌড়ে যারা যারা আছেন তাদের তালিকা আস্তে আস্তে সংক্ষিপ্ত হচ্ছে এবং তালিকা সংকুচিত হচ্ছে। অন্তত দুইজন ব্যক্তি যারা যারা রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচনায় ছিলেন, তারা ইতোমধ্যে ঝড়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্য নন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলে রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করবে। গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেছেন। এর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেল, ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন না। 

অবশ্য টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরপরই এটা অনেকের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন না। কিন্তু কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছিল, যেহেতু ড. হাছান মাহমুদকে এক নম্বর যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সেজন্য ওবায়দুল কাদেরের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি হলেও ড. হাছান মাহমুদ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু এমনটি হচ্ছে না সেটি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

রাষ্ট্রপতি হিসেবে আরেকজন রাজনীতিবিদও আলোচনায় ছিলেনভ তিনি হলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। কিন্তু বেগম মতিয়া চৌধুরী সংসদের উপনেতা হওয়ার পর এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, শেষ পর্যন্ত তিনিও রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন না। কারণ স্বাভাবিক নিয়মে বেগম মতিয়া চৌধুরীকে যদি রাষ্ট্রপতি করা হতো তাহলে তাকে সংসদ উপনেতার পদে আসীন করা হতো না। এটি মন্ত্রী পদমর্যাদার একটি দায়িত্ব এবং সংসদীয় দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি। এখন রাষ্ট্রপতি দৌড়ে যারা এগিয়ে আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। কিন্তু নানা কারণেই মনে করা হচ্ছে যে, শিরীন শারমিন চৌধুরীকে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি করা হবে না। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সংগঠন এবং প্রশাসন গোছাছেন। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন হবে এবং সেই নির্বাচনে জয়লাভ করলে জাতীয় সংসদও ভারসাম্যপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী গত ৬ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ এ সম্পর্কিত ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। এরকম পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে বিকল্প কাউকে খুঁজে না পেলে শিরীন শারমিনের রাষ্ট্রপতি হওয়াটা এখনো ঝুকিপূর্ণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক। কারণ এখন স্পিকার হিসেবে তিনি যে গ্রহণযোগ্যতা এবং সক্ষমতা অর্জন করেছেন তার বিকল্প না পাওয়া গেলে স্পিকার পদে পরিবর্তন করা হবে না বলেই আওয়ামী লীগের অনেক নীতিনির্ধারকের ধারণা। 

রাষ্ট্রপতি হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন এবং অনেকের বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ড. মশিউর রহমান। মশিউর রহমান যে সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি তার কিছু ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি সকল কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তিনি তার কর্মকাণ্ড কমিয়ে এনেছেন। নানা কারণে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে কখনো যাননি। পচাঁত্তরের আগে তিনি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন এবং পচাঁত্তর পরবর্তী পর্যায়ে নানা টানাপড়েন এবং চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে তিনি চাকরিতে টিকে ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে তিনি উপদেষ্টা হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করেন, শেষ পর্যন্ত যদি ড. মশিউর রহমান রাষ্ট্রপতি না হন তাহলে সেটি হবে এক ধরনের বিস্ময়কর ঘটনা এবং একটি বড় চমক। 

রাষ্ট্রপতি দৌড়ে আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। কিন্তু আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত দলের বাইরে কাউকে রাষ্ট্রপতি করবেন কিনা সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন। রাষ্ট্রপতির দৌড়ে ড. গওহর রিজভী।  ড. গওহর রিজভী প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা। কিন্তু গওহর রিজভী সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। লেখালেখি এবং গবেষণার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। এ কারণে রাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি সময় দিবেন কিনা সেটি একটি দেখার বিষয়। তাছাড়া নতুন রাষ্ট্রপতিকে আগামী নির্বাচনের এক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। সেই সময়ে  ড. গওহর রিজভীর মতো একজন কূটনৈতিক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব কতটুকু দেশে থাকবেন এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নামও কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে শেষপর্যন্ত কে রাষ্ট্রপতি হবে সেটি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চলতি মাসের মধ্যেই এটি চূড়ান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭