ইনসাইড বাংলাদেশ

‘জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, মানুষ কষ্টে আছে কোনো সন্দেহ নেই’


প্রকাশ: 13/01/2023


Thumbnail

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা একটু বিপদে আছি, এটি সত্য। আমাদের জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হচ্ছে। গ্যাসের সংকট, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সাধারণ, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরেও আমাদের নেত্রীর বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশের পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। আমরা ক্রাইসিসকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে যাচ্ছি, আমাদের রিজার্ভ আরও বাড়বে। রফতানি আয় ক্রমেই বাড়ছে। জিডিপিও (মোট দেশজ উৎপাদন) বাড়বে।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির সরকার পদত্যাগের দাবিকে উদ্ভট উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকায়ও সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেখানে কেউ বাইডেনের পদত্যাগ দাবি করেন না। সোমালিয়ার মতো দেশে যেখানে প্রতি ৮৬ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ মারা যায়, সেখানেও সরকারের পদত্যাগ কেউ দাবি করেন না। কিন্তু আমাদের দেশে নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্ভট একটা দাবি, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান। পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বের কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। 

সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে কাদের বলেন, একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন, ইউরোপ-আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বৈশ্বিক সংকটে পড়েছি। বিশ্বের অনেক দেশ মহামন্দার দিকে দ্রুত ধাবমান। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও জীবনমানের ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতিতে গত ৩০ থেকে ৪০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শ্রীঙ্কার রিজার্ভ তলানিতে এবং পাকিস্তানের রিজার্ভ সর্বশেষ অর্ধ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে। কিন্তু আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল, এখন কিছুটা কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের মতো রয়েছে। আমি মনে করি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বাংলাদেশ এখন স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। কারণ এখনো ৫ মাস আমদানি করার মতো রিজার্ভ আমাদের হাতে রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি আমাদের ৯’র ওপরে চলে গিয়েছিল, এখন ৮’র নিচে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। আমাদের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার, যা ২০২৬ সালে ৪ হাজার ডলারে পৌঁছুবে। আমরা আশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রাইসিস ম্যানেজার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন কঠিন বৈশ্বিক পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার মতো একজন দক্ষ লিডারের কারণে তা সম্ভব হয়েছে। তিনি আমাদের ক্রাইসিস ম্যানেজার। যথার্থ সময়ের ক্রাইসিস ম্যানেজার, সংকটের ম্যানেজার। যিনি সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা, তিনি বাংলাদেশের রূপান্তরের রূপকার। তিনি করোনা সংকটেও সারাবিশ্বের বিস্ময় হিসেবে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়ে অনেক উন্নত দেশের রেকর্ডও ভঙ্গ করেছেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচন। আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন সেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে তেমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং করণীয় সম্পের্কে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সংসদীয় কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত বলেছেন। তার নির্দেশ আমরা পালন করছি, করবো। আমরা মোকাবিলা করছি, বিরোধী দলের আন্দোলনও। সামনে বিরোধীদলের আন্দোলনে তিনি রাজপথে থাকার অঙ্গীকার করেন। বলেন, আমরা মাঠে থাকবো, সতর্ক অবস্থানে থাকবো।

তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত- একথা আমি বলবো না। আমাদের গণতন্ত্র একটা বিকাশমান ধারা। বর্তমানে বিকাশমান পর্যায়ে আছে। আমরা ক্রমান্বয়ে ভুলত্রুটি সংশোধন করতে পারবো। বিকাশমান এ ধারায় গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এক রাতেই কোনো ম্যাজিক্যাল পরিবর্তন সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর এ দেশে গণতন্ত্র ছিলই না। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছিলেন। শেখ হাসিনার মতো একজন দুঃসাহসিক নেতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছেন।

চট্টগ্রামের উন্নয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশে টানেল হচ্ছে। কেউ ভাবতে পারেননি চীনের সাংহাইয়ের মতো ওয়ান সিটি টু টাউন হবে। এখন টানেলের মাধ্যমে সেটা হচ্ছে। এখন দুই টিউবের কাজ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন ভেতরে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কাজ চলছে। আগামী এপ্রিল-মে মাসের দিকে সর্বসাধারণের জন্য এ টানেল খুলে দেওয়া হতে পারে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে প্রকল্প তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ ছালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দীন রেজা, সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭