ইনসাইড বাংলাদেশ

ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর: রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনা


প্রকাশ: 14/01/2023


Thumbnail

ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু-এর এ সফর নিয়ে সরকারি দল, সরকার বিরোধী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সুশীল সমাজের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কি হতে পারে? তবে কি র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে? কোন দিকে মোড় নিচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি? বাংলাদেশের রাজনীতি কি বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল?

এদিকে ডোনাল্ড লু’র এই সফর নিয়ে যেমনই সরকার তৎপর, তেমনই দেশের বিরোধী দলগুলোও রাখছে সতর্ক নজর। তাই এমন পরিস্থিতিতে বসে নেই বিএনপিও। দলটির শীর্ষ নেতারা ডোনাল্ড লু’র এই সফরকে গুরুত্ব সহকারে দেখছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিদলের বৈঠক হবে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

অন্যদিকে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন,‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হবে। র‍্যাব যখন তৈরি হয় তখন আমেরিকা, যুক্তরাজ্যের পরামর্শেই তৈরি হয়। তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই দেশগুলো র‍্যাবের কনসেপ্ট দেয়। তারাই তৎকালীন সরকারকে র‍্যাবের জন্য ইকুয়েপমেন্ট দেয়। তাদের কারণেই প্রাথমিকভাবে র‍্যাব চালু হয়।’  

সূত্র বলছে, বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি না করার বিষয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে পারেন। ফলে তাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা ছড়িয়েছে। দলের তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। এসব স্ট্যাটাসে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা- বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসন হবে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সফরে গুরুত্ব পাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, শ্রম, জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, জিএসপি পুনর্বহালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুও। র‌্যাবসহ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে এর মধ্যেই ছড়াচ্ছে নানা গুঞ্জনও।  

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সফরে আসছেন ডোনাল্ড লু। তার সফর ঘিরে চলছে নানা আলোচনা। সফরসূচি অনুযায়ী, লু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করবেন। দু’দিনের সফরে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন তিনি। তবে তার এ সফর ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যু।

এদিকে বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে নানা গুঞ্জন ছড়ালেও ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিদলের বৈঠক হবে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেননি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সরকারের সঙ্গে ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠক’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে ভেতরে ভেতরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বিএনপি। যেভাবেই হোক, ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠক আয়োজনে তৎপর বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির নেতারা। তবে লুর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত বিএনপির বৈঠক হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে বিএনপিতে।

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলে সক্রিয় রাজনীতি করছেন। তৃণমূলের এ নেতা চান, যেভাবেই হোক বিএনপি যেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠক করে। আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সারা বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলে, কাজ করে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আজ খাদের কিনারে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। দেশের বড় বড় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ওপর চলছে জুলুম-নির্যাতন। কেউ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছেন না। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দিনের ভোট রাতে হচ্ছে। বিএনপির উচিত মার্কিন এ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে এসব বিষয়ে তুলে ধরা।’

জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার বলেন, ‘ডোনাল্ড লুর সফর বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে। তাকে আমরা বাংলাদেশে স্বাগত জানাই। লুর এ সফর হোক গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সফর। তার পরামর্শে সরকার ইতিবাচক ধারায় ফিরুক। আগামী দিনে যাতে আমরা সবাই মিলেমিশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারি সেই পদক্ষেপ বেরিয়ে আসুক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করে জবাবদিহিতামূলক সরকার যেন দেশে প্রতিষ্ঠা পায়।’

দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান মনে করেন ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হওয়া উচিত। গত ১৪ বছরে বর্তমান সরকারের অধীনে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তা ফেরানোর একটি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে তার এ সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া ও ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করি। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কোনো বিশেষ দলকে বিশেষভাবে সুবিধা করে দেওয়ার মতো অবস্থান তাদের কাছে প্রত্যাশা করি না। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য ভারত, চীন, রাশিয়া বাংলাদেশের বর্তমান অনির্বাচিত সরকারকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে দানবীয় কায়দায় দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরি।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উচিত ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকের জন্য তৎপর হওয়া। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের যেভাবে হয়রানি- নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে, তা মার্কিন এ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবগত করা খুবই জরুরি। ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হবে কি না, তা জানেন না দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও।

এ বিষয়ে কথা হয় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে। তারা মার্কিন এ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি দলের বৈঠক চূড়ান্ত হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।  

স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সবসময় গণতন্ত্র দেখতে চায়। সেজন্য দেশটির প্রতিনিধির বাংলাদেশ সফরে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এ সফরে তিনি বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কোনো বৈঠক করবেন কি না, তা এখনো আমি জানি না।’

আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ডোনাল্ড লু আসছেন, সেটা তো জানি। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এখানে আসছেন। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন। এজন্য আমাদের (বিএনপি) সঙ্গে তার বৈঠক বা আলোচনার কোনো প্রসঙ্গ থাকছে বলে মনে হয় না। তবে গণতন্ত্রকামী একটি দেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসায় বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা তাকে স্বাগত জানাচ্ছি।’



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭