ইনসাইড থট

নতুন বছরে নতুন পালকে ডানা মেলা


প্রকাশ: 14/01/2023


Thumbnail

ইংরেজি পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছি আমরা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রবাস জীবনে একবারই কেবল ঢাকায় কাটিয়েছি ৩১ ডিসেম্বর রাত। তাও প্রায় বছর সাতেক আগে। সেবারই দেখেছি ইংরেজি নববর্ষের ক্ষনে ঢাকাবাসীর আতশ ফানুস উৎসব। তার আগে কখনো এমনটি দেখিনি। এবার দেখলাম আরো বেশি, প্রায় দ্বিগুন, তিনগুন। ক'মাস ধরেই শুনছি দেশের মানুষের খুব অভাব। মনে শান্তি নেই। চাল, ডাল, তেল কেনার টাকা নেই। কিন্তু শুনলাম, দু'টাকার বাজির দাম এখন দু'শ টাকা। ফানুশের দামও তাই। মানুষ দাম দিয়ে কিনে বাজি ফোটাচ্ছে। ফানুস উড়াচ্ছে। আবার এও শুনলাম, পুলিশ নাকি বাজি ফুটানো, ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করেছে। কে শোনে কার কথা? পশ্চিম ধানমন্ডিতে বাসার ছাদে উঠে যদ্দুর চোখ যায়, এমন কোন ছাদ পেলাম না যেখান থেকে বাজি বা ফানুস উপরে উঠছে না। সমগ্র ঢাকা শহরে বাজি নিষিদ্ধ না করে, একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নববর্ষের বাজি ফানুস উন্মুক্ত করলে কেমন হয়? এই যেমন শুধু হাতিরঝিল এলাকা বা সংসদ ভবন এলাকা। তাতে একদিকে যেমন দৃষ্টিনন্দন হয়, অন্যদিকে বাজি ফানুস জনিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

গেল রাতেই স্ত্রী কন্যাকে প্রস্তাব দিয়েছি বছরের প্রথম দিনটি মেট্রো রেলে উদযাপন করি। অনেক দেশের মেট্রো রেলে আমরা উঠেছি। নিজের দেশের মেট্রোরেলে উঠবো না, তা কি হয়? হাতে সময়ও বেশি নেই। দুদিন পরেই কর্মস্থলে ফিরে যাব। আবার এদিকে দেশি মেট্রোরেলের হাতছানি। নতুন বছরের নতুন পালকে ডানা মেলে উড়ে যাবার হাতছানি। এক বাক্যে রাজি স্ত্রী কন্যা। ঠিক হল, আটটায় রেলযাত্রা শুরু হয়। আমরা পৌঁছুব দশটায়। যাতে সকালের ভিড়টা এড়ানো যায়। যে কথা সেই কাজ। বিদেশে থাকি। সময়ের মূল্য বুঝি। ঠিক সকাল দশটায় আমরা হাজির আগারগাঁও মেট্রো রেল স্টেশনে। লাইন দেখে চক্ষু চড়কগাছ। বিশাল লম্বা লাইন। মূলফটক তখনও খোলেনি। অনেক টিভি সাংবাদিক দাঁড়ান সেখানে। এক সাংবাদিককে প্রশ্ন করে জানলাম, গত রাতে মেট্রো লাইনের বৈদ্যুতিক তারের উপর ফানুস পড়েছে। সেটি একটি একটি করে সরানোর কাজ চলছে। কাজ প্রায় শেষ। এখুনি ট্রেনগুলি আবার ডানা মেলবে! তবে দু'ঘন্টা দেরিতে ছাড়লেও বন্ধ হবে একই সময়ে, দুপুর বারোটায়। লম্বা লাইনে বেশিক্ষন দাঁড়ানো লাগেনি। মাত্র পঁয়ত্রিশ মিনিটেই আমরা স্টেশনে ঢুকে গেছি। ঢুকবার আগের মুহূর্তেই এক টিভি সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, কতক্ষন লাইনে দাঁড়িয়ে? 'পঁয়ত্রিশ মিনিট' উত্তর দিতেই উনারা খুব হতাশ হলেন! উনারা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার যাত্রী খুঁজছিলেন। বুঝলাম, উনারা নেগেটিভ সাংবাদিক। উনারা খুঁজে খুঁজে নেগেটিভ সংবাদ খুঁজছেন! কিছু সাংবাদিক এমন কেন? নেগেটিভ সংবাদ না খুঁজে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ খুঁজে বের করাইতো একজন সংবাদ কর্মীর দায়িত্ব।

স্টেশনে ঢুকেই প্রথম টার্গেট, দীর্ঘমেয়াদি পাশ সংগ্রহ করা। কর্তৃপক্ষ সেটি অত সকালে দিবেন না। তিনটে থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দিবেন। ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলে আবার আসা দুরূহ ব্যাপার তো বটেই। একযাত্রায় পাশ সংগ্রহ করতে পারলে সময় সাশ্রয় হত। অগত্যা লাইনে দাঁড়ালাম আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ি স্টেশনের একক যাত্রার টিকেট সংগ্রহের। আমি দাঁড়ালাম মেশিনে টিকেট কেনার লাইনে। স্ত্রী কন্যা দাঁড়ালো মনুষ্য কর্তৃক দেয়া টিকেটের লাইনে। যেটা আগে হয়। দুটোতেই সমান ভিড়। মনুষ্য লাইনের অগ্রগতি বেশ ধীর। মনে হল, কাউন্টার কর্মীদের দক্ষতা আরেকটু বাড়ানো প্রয়োজন। যথারীতি মেশিনেই টিকেট পেয়ে গেলাম আগেভাগেই।

এবার অপেক্ষার পালা প্রায় শেষ। সর্বসাধারণের জন্য মেট্রো রেল উন্মুক্তের চতুর্থ দিন। সবখানেই ঝকঝকে তকতকে পরিবেশ। জানিনা ক'দিন এমন থাকে। অবশেষে উঠে পড়লাম কাঙ্খিত মেট্রোরেলে। দশ বছর আগে আমরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি যে, আমাদের জীবদ্দশায় ঢাকা শহরে মেট্রো রেল দেখবো, উঠবো। এগারো মিনিটের মধ্যে আগারগাঁও থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন। এ যেন জাদুর গাড়ি। নতুন বছরে নতুন পালকে সাজানো 'হাওয়াই গাড়ি'! আমাদের মেট্রোতে চড়ে আমাদের ঢাকা শহর দেখতে দেখতে মাত্র এগারো মিনিটে দু তিন ঘন্টার রাস্তা পার হবার অনুভূতি অন্য রকম। যাত্রাকালে বাংলা ও ইংরেজিতে সুন্দর কণ্ঠ যখন ঘোষণা দিচ্ছে, তখন মনে হল আমি এদেশে নই, অন্য কোন দেশে। কিন্তু একটি কর্কশ কণ্ঠ যখন বলছে, আপনারা সরে দাঁড়ান, এখুনি ট্রেন ছাড়বে। তখন আবার মনে হল- আমি যে ঢাকায়। তাতে অবশ্য অবাক হবার কিছু নেই। জাপানেও এমনটি দেখেছি। লাইভ কণ্ঠগুলো এমনই হয়। পূর্বে রেকর্ডকৃত কন্ঠ সব সময় সুন্দর।

দিয়াবাড়ি (উত্তরা উত্তর) পৌঁছে আবার ফেরার টিকেট কিনতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পাশ থাকলে আর লাগতো না। এবার পড়লাম বিপত্তিতে। গেট দিয়ে বের হতেই টিকেট কাউন্টার। কিন্তু সেখানে যাবার ক্ষেত্রে রশি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীরা স্টেশন থেকে বাইরে যেয়ে অপর পাশ দিয়ে প্রবেশের পরামর্শ দিলেন। তিন তলা ভবনের নিচে নেমে দেখি আমাদেরকে চার লেনের রাস্তা পার হতে হবে। শুরুতে যাঁরা মেট্রোরেলে চলাচল করছেন তাঁরা আসলে আমার মতই অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন। প্রায়  সবার সাথেই ছোট ছোট শিশুরা রয়েছে। নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অগত্যা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চার লেনের রাস্তা পার হয়ে আবার উঠলাম তিনতলা ভবনের উপর তলায়। ঢুকে এক স্কাউট কর্মীকে নিচ দিয়ে ঘুরে আসার যৌক্তিকতা জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, যেখানে টিকেটের লাইন, তার পেছন দিয়েই যাত্রীরা ঢুকছেন। তাতে নাকি টিকেটের লাইনে জটলার সৃষ্টি হতে পারে। তাই মানুষজনকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চার লেনের রাস্তা পার করিয়ে আবার উঠানো হচ্ছে। যুক্তিটি যৌক্তিক মনে হল না। একটা বিকল্প বের করা যেত। মজার ব্যাপার হল, এত ঘুরে যখন আবার এলাম তখন দেখি কিছু কিছু ভদ্রলোক নিরাপত্তা কর্মীকে কি যেন বলছেন, আর তিনি দড়িটা খুলে তাঁদের ঢুকবার সুযোগ দিচ্ছেন। বুঝলাম, এখানেও গলদ আছে।

পরের বছর যখন আবার দেশে আসব তত দিনে হয়ত মেট্রোরেল মতিঝিল যাবে। দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল। ধানমন্ডি থেকে শাহবাগ, বাংলামোটর বা ফার্মগেটে অন্য কোন বাহনে এসে ঢাকা শহরের কাজ শেষ করে আবার এসব স্থানে নেমে বাসায় ফেরা যাবে। তাই মনে হল, আমার একটি দীর্ঘমেয়াদি পাশ দরকার। স্টেশনে এসে টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো সময় সাপেক্ষ। পাশ থাকলে নিজে নিজেই তাতে টাকা ভরা যাবে। তাই বছরের প্রথম সন্ধ্যায় আবার আগারগাঁও স্টেশনে যেয়ে কাঙ্খিত পাশ কিনে ঢাকার বাসায় রেখে এসেছি। আশাকরি, পরের বার দেশে গেলে ঢাকার রাস্তায় বসে বসে সময় কাটানোর সময় কিছুটা হলেও কমানো যাবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭