ইনসাইড ইকোনমি

ফেব্রুয়ারিতেই আরও চাঙ্গা হচ্ছে দেশের অর্থনীতি


প্রকাশ: 14/01/2023


Thumbnail

৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাবের চূড়ান্ত আলোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ডিএমডি অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ ঢাকায় এসেছেন। এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। 

এদিকে চলতি অর্থনৈতিক বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে দেশটি বেশ কিছু দিন থেকেই ডলার সঙ্কটে ভুগছে। আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। আবার রপ্তানি বাড়লেও তা আমদানির মতো নয়। প্রবাসী আয়ও বাড়েনি, বরং তা কমেছে। ফলে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে ব্যাপকভাবে। আনুষ্ঠানিকভাবে ডলার প্রতি দাম  ৯৪ টাকার মধ্যে থাকলেও প্রবাসী আয় ও পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সঙ্কট কাটিয়ে উঠার সময় এসেছে। ফেব্রুয়ারিতেই আরও চাঙ্গা হতে চলেছে দেশের অর্থনীতি। সেই সঙ্গে ডলার সঙ্কটও সমাধান হবে। চলতি মাসেই চূড়ান্ত হচ্ছে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ। ইতিমধ্যেই আইএমএফ-এর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ডিএমডি অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ ঢাকায় এসেছেন।        

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) দিন শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। ৫ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমে ৩২ বিলিয়নের (৩ হাজার ২০০ কোটি) ঘরে নেমেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১১২ কোটি (১ দশমিক ১২ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করার পর রবিবার (৮ জানুয়ারি) এই রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০৫ থেকে ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা শতকরা হিসাবে বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। খোলাবাজারে ডলারের দর ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনও ১১২ থেকে ১১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডলার। 

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারের বিভিন্ন ধরনের মেগাপ্রকল্প চলছে। তার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল আমদানিতে ডলার প্রয়োজন। এগুলো অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে। যে কারণেই দেশে ডলার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও, বিশ্ববাজারে জ্বালানি-বিদ্যুৎসহ আমদানিকৃত বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলার সঙ্কট বিকট আকার ধারন করেছে। তবে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পেলে কিছুটা স্বস্তি আসবে। দেশের ডলার সঙ্কটও কেটে যাবে। ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পেতে যাচ্ছে।   

সূত্রমতে, আইএমএফ কাছে বাংলাদেশের ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তবের পর, এ সংক্রান্ত আইএমএফের দলটি গত ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৩০টি বৈঠক করেছে। বেশির ভাগ বৈঠক ছিল আর্থিক খাতের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আইএমএফ তিন মাসের মধ্যে এই ঋণের আনুষ্ঠানিকতা চূড়ান্ত করবে বলেও জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এই ঋণ সাত কিস্তিতে দেবে তারা। প্রথম কিস্তির ঋণ মিলবে আসছে ফেব্রুয়ারিতে। আর সর্বশেষ কিস্তির ঋণ পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। আইএমএফের ঋণের সুদহার হবে বাজারদর অনুযায়ী। তাতে গড় সুদহার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ বলেও জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।

আইএমএফ থেকে বাংলাদেশের ঋণ পাওয়া এবং দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট, ডলার সঙ্কট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণ, সুশীল সমাজ এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন থেকেই ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়ে আসছেন। আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ ঋণ পাচ্ছে কি পাচ্ছে না ?-এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আবার কেউ বলেছেন আইএমএফ থেকে ঋণ পেলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য আরও অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণ। এখন দেখার বিষয় আইএমএফ-এর এ ঋণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট, ডলার সঙ্কট নিরসনে কতোটা ভূমিকা রাখে।   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭