প্রকাশ: 15/01/2023
পৌষের শেষলগ্নে হিমেল হাওয়ায় কেঁপেছে পুরো বাংলাদেশ। একদিকে কনকনে ঠান্ডা বাতাস অন্যদিকে কুয়াশার দাপট এই ছিলো পৌষের শেষ মুহুর্তে রাজধানীসহ সারাদেশের চিত্র। পৌষ কে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতিতে এলো মাঘের আগমন। আজ পহেলা মাঘ ১৪২৯ সাল। ষড় ঋতুর হিসেবে পৌষ-মাঘ এই দুইমাস হলো শীতকাল। পৌষে সাধারণত হালকা হিমেল হাওয়া থাকে এবং হাড় কাঁপানো শীতের আগমন ঘটে মাঘে।
প্রচলিত আছে মাঘের হাড় কাঁপানো শীতে নাকি বাঘ ও পালিয়ে যায়।
‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ শীর্ষক এই প্রবচনটি যদি বাস্তবে প্রকাশ পায়,
তবে মানুষের কী দুর্বিষহ অবস্থা হবে,
সেটা সহজেই অনুমেয়। পৌষের শেষলগ্নের হাড় কাঁপানো শীতে কয়েকদিনেই বিপর্যস্ত হয়েছিলো গ্রামীন ও নাগরিক জীবন। এর মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে চলতি মাসে বৃষ্টির পাশাপাশি প্রবল শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঘের শীতের অস্বাভাবিক এই দাপট থাকলে এবং সব কিছু হিম হয়ে গেলে আপামর মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না।
বাংলাদেশ চিরকালই উষ্ণ-ভাবাপন্ন নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলীয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। চরম-ভাবাপন্ন গরম বা শীত এদেশের আবহাওয়ার ইতিহাসে তেমন নেই বললেই চলে। কিন্তু বৈশ্বিক আবহাওয়া যেভাবে বদলে যাচ্ছে,
নানা রকমের পালাবদল যেভাবে হচ্ছে,
তাতে এদেশের আবহাওয়ার ঐতিহ্যও আর টিকে থাকতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
এদেশের মানুষের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতায় যে হাল্কা-মধুর শীতের বিবরণ এ যাবৎকাল ধরে বিরাজ করছিল,
সেটা আর টিকছে না এইবার। কনকনে ঠান্ডা বাতাস,
কুয়াশার ভারী দাপট,
সূর্যের অনুপস্থিতি শীত নামক মায়াবী
ঋতুটিকে প্রবল আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত করে তুলতে পারে। কেননা মাঘের প্রকৃতি এমনিতেই থাকে নীরস,
শীতে জবুথবু। এমনকি কবি-সাহিত্যিকদের কলমও যায় থমকে।
তাইতো বাংলা সাহিত্যে ঋতু-প্রকৃতি নিয়ে কথার ফুলঝুরি ফুটলেও মাঘের প্রসঙ্গ বড় ই দুর্লভ। তবে এগুলোর বাইরেও মাঘের শীত সবচেয়ে বেশি আলোচিত কেননা মাঘ মাস প্রকৃতিতে শীত নিয়ে আসার পাশাপাশি জনজীবনে ও নানান কিছুর আগমন ঘটান। মাঘে চারদিকে শীতের আমেজের পাশাপাশি বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। যেমন
এ মাসের পূর্ণিমাকে বলা হয় মাঘী পূর্ণিমা। শীতকাল এক অর্থে 'সাংস্কৃতিক ঋতু'। শহুরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে গ্রামের যাত্রাপালা,
পালাগান, সার্কাস- সবাই অপেক্ষা করে থাকে শীতের জন্য। শীতকালের জবুথবু জীবনে উষ্ণতা আনার জন্য কেবল নয়,
এসব আয়োজনে দর্শকদের জমজমাট আবহ দিতেও শীতের প্রলেপ অব্যর্থ।
মাঘের শুরুটা হয় পুরান ঢাকায় বাঙালির ঐতিহ্যের সাকরাইন ও ঘুড়ি উৎসবের মাধ্যমে।
এরপর মাঘ মাসেই শুক্লা পঞ্চমীর তিথি নিয়ে আসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী। পালিত হয় সরস্বতী পূজা। প্রকৃতি সাজতে শুরু করে ভিন্ন রূপে,
ঝরে পড়তে শুরু করে গাছের পাতা,
নতুন কিশলয় অংকুরিত হয়,
আমের মুকুল আসে। মাঘের এই শীত জেঁকে বসলে মূলত মৌসুমী আয়োজনগুলো আবহমান বাংলার ঐতিহ্য কে আরো সমুন্নত রাখে। কেননা এই সময়েই ঘরে ঘরে রমণীরা
ব্যস্ত হয়ে পড়ে
‘শীতের’ খাবার পরিবেশনে।
এইসময় বাড়িতে,
বাজারে, ফুটপাতে, রেস্টুরেন্টে
পেশাদার পিঠাওয়ালাগন ব্যস্ত হয়ে পড়ে নাগরিকদের রসনা তৃপ্ত করতে। শীতকাল কৃষকদের এবং তাদের ফসল চাষাবাদের জন্য ও সুন্দর এক অনুকূলীয় পরিবেশ। রবিশস্যের প্রাচূর্য্যে পূর্ণ হয়ে উঠে শুকনো মাঠ। ভরে উঠে টাটকা শাক-সবজি,
নতুন আলু,
শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম ইত্যাদিতে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। মাঘের হাড় কাঁপানো শীতে পাল্লা দিয়ে শুরু হয় ‘ভাপা’, ‘পুলি’, ‘চিতই’,
‘দুধচিতই’, ‘পাটিসাপ্টা’, ‘পাকনপিঠা’, ‘তেলের পিঠা’, ‘ম্যারা পিঠা’, ‘জামাই পিঠা’সহ আরো অনেক নামের ও স্বাদের পিঠার রসনা বিলাসের আয়োজন। তাছাড়া থাকে খেজুরের রসের পায়েস আর খেজুর গুঁড়ের ম ম গন্ধে মাতোয়ারা দশদিগন্ত । মাঘ প্রকৃতি ও জনজীবনে নিয়ে আসে বৈচিত্র্যতা। মাঘের এই শীত
একদিকে
আমাদের
জীবনে আশীর্বাদ নিয়ে আসে আবার তেমনি নিয়ে আসে অভিশাপও। অপরূপ শীতের সৌন্দর্য্য অনুভবে ও উপভোগে ভুলে যাওয়া যায়না সেইসব ছিন্নমূল মানুষের কথা যারা এক টুকরো শীতের কাপড় বা মাথা গোঁজার ঠাই পায়না কোথাও। শীত সবার জীবনে আনন্দ বয়ে আনেনা। কারো জন্য মাঘের এই শীত অনেক রোমান্টিক,
আবার কারো কাছে মাঘের এই শীত
বেঁচে থাকার লড়াই।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭