ইনসাইড ইকোনমি

অর্থপাচার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে: গভর্নর


প্রকাশ: 15/01/2023


Thumbnail

পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থপাচারের ঘটনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

তিনি বলেছেন, আমাদের প্রথম টার্গেট ছিল সংকটকালীন আমদানি কমিয়ে আনা। এটা যেন রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের সমান হয়। টার্গেট পূরণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। আমরা ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং হয়েছে কি না সেটা দেখেছি। এ কাজগুলোতে স্বচ্ছতা আনা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে অর্থপাচারও আমরা নিয়ন্ত্রণে এনেছি।

রবিবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে নতুন মুদ্রানীতি ‘মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট (এমপিএস)’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা। এবারের মুদ্রানীতিকে ‘সতর্কমূলক’ বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের এলসি খোলায় পণ্যের যে দাম ছিল তার চার ভাগের এক ভাগে এলসি খুলেছেন গ্রাহকরা। এটি ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। বাকি তিন ভাগ অর্থও কোনো না কোনো জায়গা থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। এসব বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে ওঠে এসেছে। এগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে, আরও কমে আসবে।

তিনি বলেন, আমাদের নানা উদ্যোগের ফলে আমদানি কমে এসেছে। আমদানির তুলনায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বেশি হয়েছে। এতে ডলারের ওপর যে চাপ পড়েছিল তা ও কমে এসেছে। আমদানি এলসি খোলা কমানোর প্রভাব আসন্ন রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে পড়বে না। ব্যাংকগুলোকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কয়েকটা ব্যাংকে তারল্য সহায়তা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশ্বের যে কোনো ব্যাংক সমস্যায় পড়লে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করে, আমরাও করেছি। আমাদের দেশে কোনো ব্যাংক সমস্যায় পড়লে আমরা সাপোর্ট করি।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকে শেয়ারহোল্ডারের চেয়ে সাধারণ মানুষের বেশি টাকা রয়েছে। ব্যাংকটি সমস্যায় পড়লে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হতো। মানুষের ক্ষতির কথা বিবেচনায় এনেই সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি এ ব্যাংকে ১ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা আমানত রয়েছে, অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ। দেশের ইতিহাসে কোনো ব্যাংক এখনো বন্ধ হয়নি। ব্যাংক সমস্যায় পড়লে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক সাপোর্ট দিয়েছে।

কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপে আছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে গর্ভনর বলেন, আমি অনেক চাপের মধ্যে কাজ করে এসেছি। আমার কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই। এখন বিশেষ কারও নিয়ন্ত্রণও নেই। ব্যক্তি যেই হোক, আমরা তাকে গ্রাহক হিসেবে দেখি। ভালো মানের গ্রাহক হলে আমরা তাকে ঋণ দিই। যেন সে আরও বড় হতে পারে, উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। ভালো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আমরা উঠিয়ে আনতে সহযোগিতা করি, কিন্তু ভালো না হলে ঋণ দেওয়া হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক সবাইকে গ্রাহক হিসেবে দেখে। সুতরাং কোনো ধরনের চাপে কাজ করি না, কোনো চাপ নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের।

এবারের মুদ্রানীতি সুষ্ঠুভাবে প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে আবারও রেপো বা নীতি সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে হলে আগের চেয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি সুদ গুনতে হবে। ওভারনাইট রেপো সুদহার আগের চেয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে রেপো তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নেওয়া ধারের বিপরীতে ৬ শতাংশ সুদ দিতে হবে।

রেপোর মাধ্যমে সাধারণত একদিনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার কিংবা জমা রাখা হয়। গত বছরের জুন মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে রেপো বা নীতি সুদহার ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর তিন মাসের মাথায় সেপ্টেম্বরে তা আরও ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়। নতুন মুদ্রানীতে তা বেড়ে ৬ শতাংশ উন্নীত হলো। ব্যাংকের আমানতের ওপর বেঁধে দেওয়া সুদহার তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ভোক্তা ঋণের (ব্যক্তিগত ঋণ, গাড়ি ঋণ, আবাসন ঋণ, শিক্ষা ঋণ প্রভৃতি) সুদহার ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। পরিবর্তন আনা হয়েছে রেপো বা নীতি সুদহারেও।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বস, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হকসহ গবেষণা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭