ইনসাইড থট

একজন শহীদ এম মনসুর আলী


প্রকাশ: 16/01/2023


Thumbnail

সিরাজগঞ্জের মাটি ও মানুষের সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর জাতীয় নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ এম মনসুর আলীর আজ (১৬ জানুয়ারি) ১০৫তম জন্মদিন। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর ও সহযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শহীদ এম মনসুর আলী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরেই যাদের ত্যাগ, অবদান ও জীবনদান উজ্জ্বল এবং ভাস্বর, তাদের মধ্যে শহীদ এম মনসুর আলী অন্যতম। তিনি তার নাম ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন নিজের মনন, মেধা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে। শহীদ এম মনসুর আলীর নাম বাদ দিলে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই মহৎপ্রাণ শহীদ এম মনসুর আলী সম্পর্কে এ প্রজন্মের অনেকেরই অজানা রয়েছে। 

শহীদ এম মনসুর আলী সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শেষ সীমানা এবং কাজীপুর উপজেলা সীমানা লাগোয়া রতনকান্দি ইউনিয়নের সে সময়ের অজপাড়াগাঁ কুড়িপাড়া গ্রামে ১৯১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই অজপাড়াগাঁয়ের মনসুর আলী নিজের মনন, মেধা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেছেন। ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর হয়ে উঠেছিলেন। অথচ তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিদে প্রকৃতির একজন মানুষ। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী সিরাজগঞ্জ-১ কাজীপুর সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। সে সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ বিরোধী দল। দেশজুড়ে তাদের হুঙ্কারে জনজীবনে ত্রাস সৃষ্টি হয়েছিল। সেই নির্বাচনে শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন জাসদ নেতা এম খোশলেহাজ উদ্দিন খোকা। জাসদ নেতা নির্বাচনী মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবে শহীদ এম মনসুর আলীর নামে অনেক মিথ্যা প্রচার করেছিল। কিন্তু জনগণ তাদের মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছেন ব্যালটের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হয়ে সফরে এসেছিলেন সিরাজগঞ্জে। তখন ভিআইপিদের জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের বাহিরগোলা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তথা পাওয়ার হাউসের রেস্ট হাউস ছাড়া বিকল্প ছিল না। সেই রেস্ট হাউসে খোশলেহাজ উদ্দিন খোকা এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি লাইসেন্স পাওয়ার জন্য। খোকা সাহেব দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীর সঙ্গে এবং দরখাস্ত এগিয়ে দেন লাইসেন্স পাওয়ার জন্য। সে সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন এই সেই খোকা যিনি নির্বাচনে প্রতিপক্ষ হিসেব আপনার বিরোধিতা করে মিথ্যাচার করেছিলেন। কিন্তু শহীদ এম মনসুর আলী তাদের কথায় কর্ণপাত না করে প্রতিপক্ষ জাসদ নেতাকে লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার সুপারিশ করে উদারতা দেখিয়েছিলন। এটাই ছিল দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাজ, মানবিক মানুষের দায়িত্ব। 

আজকের বঙ্গবন্ধু সেতু দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের যে যোগাযোগের নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে, সেই বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের প্রস্তাবক ছিলেন শহীদ এম মনসুর আলী। ১৯৭৩ সালে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে আওয়ামী লীগের বিশাল নির্বাচনী সভায় প্রধান অতিথি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অনাগ্রসর ও অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি করেছিলেন। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের শহীদ এম মনসুর আলীকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে যমুনায় সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলন। এটি হচ্ছে শহীদ এম মনসুর আলীর উন্নয়ন চিন্তা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রবাসী সরকারের অর্থমন্ত্রী শহীদ এম মনসুর আলীর নামের আগে কী করে শহীদ শব্দ যোগ হলো, কীভাবে ক্যাপ্টেন শব্দ সংযোজন হলো তা এ প্রজন্মের মানুষের জানা দরকার। এম মনসুর আলী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত হয়ে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড (পিএনজি) ক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হয়ে যশোর সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেই থেকে তিনি ক্যাপ্টেন পদবি লাভ করেন এবং তার নামের সঙ্গে ক্যাপ্টেন পদবি যোগ হয়। তিনি রাজনীতির মাঠে হয়ে ওঠেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। আর শহীদ শব্দটি যোগ হয় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ইতিহাসের নিষ্ঠুর এবং জঘন্যতম ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা তৎকালীন দেশের প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর। 

জন্ম: শহীদ এম মনসুর আলীর জন্ম ১৯১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কুড়িপাড়া গ্রামে। কুড়িপাড়া থেকে সিরাজগঞ্জ শহরের দূরত্ব প্রায় ১৯-২০ কিলোমিটার। যমুনায় ভাঙনের পরে তার পরিবার কাজীপুর উপজেলার মেঘাই এলাকায় বসবাস শুরু করে।

পারিবারিক পরিচয়: শহীদ এম মনসুর আলী জন্মগ্রহণ করেন অভিজাত মুসলিম পরিবারে। বাবার নাম হরফ আলী সরকার, মা বেগম রওশন আরা।

শিক্ষাজীবন: শহীদ এম মনসুর আলী শিক্ষাজীবনে পাঁচবার বৃত্তি পেয়েছিলেন। তার শিক্ষা শুরু হয়েছিল কাজীপুরের গান্ধাইল মাইনর স্কুলের মাধ্যমে। এরপর ১৯৩৫ সালে সিরাজগঞ্জের বিএল স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৭ সালে আইএ পাস করেন রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে। ১৯৪১ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৪৪ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।

বৈবাহিক জীবন: সহধর্মিণী মহীয়সী নারী মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন। তিনি বেগম আমিনা মনসুর আলী হিসেবে নাম সাক্ষর করতেন। আমিনা মনসুরের জন্ম এক সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারে। তার বাবা মরহুম আমির উদ্দিন সরকার ছিলেন জেলা জজ। স্থায়ী বাসস্থান ও জন্মস্থান বর্তমান গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী থানার জজ বাড়ি। মা মরহুম রওশন আরা বেগম সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশের মেয়ে।

ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী: শহীদ এম মনসুর আলী সেনাবাহিনীর কোনো ক্যাপ্টেন ছিলেন না। তিনি ছিলেন পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ডের ক্যাপ্টেন। এ বিষয়ে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন।

কর্মজীবন: এম মনসুর আলীর কর্মজীবন শুরু হয় আইন পেশার মাধ্যমে। পাবনা বারে যোগ দেন ১৯৪৫। তিনি ১৯৫৮ সালে যোগ দেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্ট বারে। শহীদ এম মনসুর আলী ১৯৭০ সালে পাবনা আইন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭০ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত কলেজের অবৈতনিক অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে তারই উদ্যোগে কলেজের নামকরণ করা হয় শহীদ আমিনুদ্দিন আইন কলেজ। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সিরাজগঞ্জের কাজীপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আতাউর রহমান খান যখন তৎকালীন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তখন প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় ক্যাপ্টেন মনসুর আলী তিনটি মন্ত্রণালয়ের (খাদ্য, আইন ও রাজস্ব) দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জাতীয় পরিষদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মুজিবনগর মন্ত্রিসভায় এম মনসুর আলী ছিলেন অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী। ১৯৭২ সালের সদ্য স্বাধীন বিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকারের পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভায় এম মনসুর আলী দায়িত্ব পান যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। মনসুর আলী তার একনিষ্ঠতা, সততা ও কর্মদক্ষতার কারণে ১৯৭৪ সালের ৮ জুলাই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রেসিডেন্ট এবং এম মনসুর আলীকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দেশের জন্য জীবনদান: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এম মনসুর আলী ছিলেন পাবনার বাড়িতে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাসঘাতকদের হাতে ১৫ আগস্টে সপরিবারে নিহত হন। ছেলে মোহাম্মদ নাসিমের টেলিফোনে এই খবর জানতে পারেন। এরপর মনসুর আলী আবার ঢাকায় আসেন। ‘মীরজাফর’ খন্দকার মোশতাক আহমেদের অবৈধ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন না করায় মনসুর আলীসহ বঙ্গবন্ধুর চার বিশ্বস্ত অনুসারীকে আটক করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে ঘটে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। জেলখানার ভেতরে নৃশংসভাবে খুন করা হয় জাতীয় চার নেতা এম মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহম্মদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে।

এ বিষয়ে আমার বাবা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি বলেন, ‘শহীদ এম মনসুর আলী আমার পিতা, আমার অহংকার। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ ও আমার জীবনের বড় পরিচয় আমার পিতা শহীদ এম মনসুর আলী। আমি আমার পিতাকে হারিয়েছি এর চেয়ে বড় বেদনা আর এর চেয়ে বড় কষ্ট আমার জীবনে কিছু নাই।’

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘শহীদ এম মনসুর আলী সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে চারজন জাতীয় নেতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সফল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলী। যিনি আমার গর্বিত পিতা এবং সব সময় সব মুহূর্তে আদর্শিক নেতা।’

 ‘যখনি আমি কোনো কাজ করি, চিন্তা করি সে সময় আমার চিন্তা-চেতনায় সব সময় আমার বাবার স্পর্শ- আবেগ অনুভব করি। তিনি যেমন জীবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন, তেমনি মরণেও আজকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই আছেন। আমার পিতা তার পরিবারের বাইরে প্রতিটি মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর কথা ভাবতেন, বঙ্গবন্ধুর কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেন তার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। মাঝে মাঝে আমার মনে হতো তিনি যেন আমাদের চাইতে বঙ্গবন্ধুকে বেশি ভালোবাসতেন। তিনি যখন রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছেন সেই মুহূর্ত থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ছাড়া তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো কিছু করারই চিন্তা করতেন না।’

‘আমি তার সন্তান হিসেবে দেখেছি ৬ দফা আন্দোলন যখন বঙ্গবন্ধুর অনেক সহকর্মী তাকে ত্যাগ করে চলে গেছেন কারাবন্দি অবস্থা থেকেও এম মনসুর আলী শত প্রলোভন ও চাপের মুখেও তখনকার পিডিএমপন্থি আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান, সালাম খানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। অথচ দীর্ঘ কারাজীবন ভোগ করেছেন। কিন্তু নেতা শেখ মুজিবের সঙ্গে বেঈমানি করেননি। তার এই দৃঢ় অভিব্যক্তি মনোভাবকে দেখেছে দেশের গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ। ১৯৬৬-৬৭ সালে যখন শহীদ এম মনসুর আলী পাবনা কারাগারে বন্দি ছিলেন, তখন ছাত্রাবস্থায় আমার পিতা সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ছাত্রাবস্থায় পিতার সঙ্গে সে মুহূর্তে একই কারাগারে আটক ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই, সংগ্রাম শেষে যখন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানে কারাগারে বন্দি তখন শহীদ এম মনসুর আলীসহ জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে মুজিবনগর সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধেও সফল নেতৃত্ব দেন। সেই বিরল মুহূর্তগুলো দেখার বা জানার আমার সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে শহীদ এম মনসুর আলী কী দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ মনোভাব নিয়ে স্বাধীনতার বিজয় এবং জীবিত বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং কাজ করে গেছেন। খন্দকার মোশতাকের মতো একজন সুযোগ সন্ধানী বিশ্বাসঘাতক ওই প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের মুহূর্তেও চেষ্টা করেছে এই চারজনের মধ্যে ফাটল ধরাবার জন্য এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করার নানা প্রলোভনের জাল বিস্তার করে মুজিবনগর নেতৃত্বকে বিভ্রান্ত করার। কিন্তু একটি বিপজ্জনক এবং জাতির যুগসন্ধিক্ষণে এম মনসুর আলী অন্য তিন নেতার সঙ্গে থেকে সব ভয়-ভীতি, অনিশ্চয়তা ও প্রলোভন উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধকে সফল করেছেন।’

‘সফেদ সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবি পরে শহীদ এম মনসুর আলী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে মুজিবনগরের রণাঙ্গনে ছুটে বেরিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকেছেন, সাহস দিয়েছেন। প্রবাসী সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শত শত তার দলীয় সহকর্মী, দেশ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার কর্মীকে আর্থিক সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। হাজার অনিশ্চয়তা ও অমানিশা অন্ধকারের মধ্যেও সাধারণ বাঙালির চেয়েও দীর্ঘদেহী আমার দাদা উজ্জ্বল প্রত্যয় মুখ’ ছবি। তিনি সর্বদা বলতেন, ‘জীবিত বঙ্গবন্ধুকে আমরা ইনশাল্লাহ মুক্ত করব।’ আসলে জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে মুজিবনগরে যে মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্ব সংগঠিত হয়েছিল তা নিয়ে একটি মহাকাব্য রচনা করা যেতে পারে। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলা, চট্টগ্রাম ও খুলনা পোর্ট পুনরায় চালু করে কার্যকর বন্দরে পরিণত করা, সর্বোপরি এক নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, স্বাধীনতাবিরোধী এবং তথাকথিত হঠকারী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী নামধারীদের অপতৎপরতা রোধ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবু তিনি সেসবের মোকাবিলা করেছেন।’

বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত এই সহচর এম মনসুর আলীর ১০৫তম জন্মবার্ষিকীতে অতল শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি ছিলেন নীতি, আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। জীবন দিয়েছেন কিন্তু আদর্শচ্যুত হননি। আমরা তার আদর্শকে অনুসরণ করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার যোগ্য কর্মী হতে পারব।

লেখক: সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও এম মনসুর আলীর পোত্র।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭