ইনসাইড আর্টিকেল

অন্ন দে মা, অন্ন দে...


প্রকাশ: 17/01/2023


Thumbnail

অন্ন দে মা, অন্ন দে’ -বলে আকুল কান্নায় কেঁদেছিলেন রামপ্রসাদ। বিদ্রহী কবি লিখেছিলেন, ‘দারিদ্র্য অসহ /পুত্র হয়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ/ আমার দুয়ার ধরি!’ সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যে পাওয়া যায় ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ লাইনগুলো সাহিত্যের হলেও নির্মম বাস্তবতা। অবাক করা বিষয় হলো আজও পৃথিবীতে ৪০ ভাগ মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে কেবল মাত্র খাদ্যের অভাব-অনটনে আর ক্ষুধা-তৃষ্ণার পাহাড় সম সমস্যায়। ক্ষুধা নিবারণের জন্য এক বেলাও পর্যাপ্ত খাবার জুটে না তাদের পাতে। সবজিটা সুন্দর নয় এই বলে ফেলা দেয়া হচ্ছে। রান্না ভালো হয়নি, তাই ছুড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে। আর এইভাবে শুরু হয় খাদ্য অপচয়। আবার অনেকের কাছে খাদ্য অপচয়টা স্মার্টনেসে পরিণত হয়েছে। এই স্মার্টনেসের বড় প্রমাণ পাওয়া যায় রাস্তার ধারে ডাস্টবিন গুলো দেখলে। নামি-দামি খাদ্যের অপচয়ের বালাই নেই। এক শ্রেণীর মানুষ উদ্ভট আনন্দ পায় এই অপচয়ে সামিল হয়ে। এতে করে তারা তাদের অর্থের যোগান যেমনি নষ্ট করছে তেমনি পরোক্ষভাবে অন্যকেও খাদ্য থেকে বঞ্চিত করছে। ফলস্বরূপ যা দেখা যাচ্ছে আমাদের খাবার উৎপাদনের বড় একটি অংশ ভাগাড়ে যাচ্ছে। এবং বিষটার সত্যতার জন্যে বেশিদূর যেতে হবে না। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউনেপ ২০২১ সালে ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স নামে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। যাতে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে এক কোটি ৬ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। এবং ইউনেপের ওই ইনডেক্স অনুযায়ী একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করেন। এফএও'র গবেষণায় দেখা গেছে, চাল, গম ও ডাল এসব উৎপাদন থেকে মানুষের প্লেট পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই প্রায় ১৮ শতাংশ অপচয় হয়। ফল আর সবজির ক্ষেত্রে অপচয় হয় ১৭ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত। তাই সেই দিক দিয়ে বলা যায় খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ মধ্যম মাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, সামান্য একটু খেয়ে বাকীটুকু ফেলে দিয়ে যেটাকে স্মার্টনেস মনে করছি আজ, আগামীকাল সেটা পৃথিবীকে ক্ষুধার সাগরে ডুবিয়ে দিবে সেটা নিশ্চিত। দেখা যাবে টাকা আছে কিন্তু খাওয়া নেই। মনে রাখতে হবে খাদ্য সংকট দেখা দিলে অঢেল সম্পদের মালিকদেরও না খেয়ে মরতে হবে। এমনও হতে পারে, একটি সময় চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির ফলে মানুষ আর অসুখ-বিসুখে মরবে না, মরবে খাদ্যের অভাবে। তাই যতটুকু খাবার খেতে পারবো, ঠিক ততটুকুই নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত নিয়ে অপচয় করার চেয়ে, এটা ভালো।

আমাদের সবাইকে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারে, পর্যটনে, রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন, সুপার মার্কেটসহ সব জায়গায়ই যেখানে খাদ্য তৈরি, বিক্রি অথবা খাওয়া হয় সব জায়গাতেই খাদ্য অপচয়ে ভূমিকা রাখতে পারি। যাদের প্রচুর প্রাচুর্য রয়েছে তাদের কাছ থেকে আরো সচেতনতা আশা করি। কেননা তারা অনেকেই সবজিটা দেখতে সুন্দর নয় বলে তা ফেলে দেন। তাই আমাদের উচিত ভেবে-চিন্তে খাওয়া এবং অপচয় রোধে সামিল হওয়া। খাদ্য অপচয় রোধ করতে হলে সকলের মাঝে খাদ্য অপচয় সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং একইসাথে তৈরি করতে হবে খাদ্যশৃংখল বিধান এবং তা মানার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা। সরকারি ও বেসরকারি নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের পর থেকে খাবার পরিবেশন পর্যন্ত নীতিমালা ও সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তা নিয়িমিত মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য অপচয় যদি কমানো সম্ভব হয় তাহলে খাদ্যের সরবরাহ বাড়বে, উৎপাদন বাড়াতে হবে না এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ কমবে। বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর খাদ্য অপচয়ের যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সেই প্রবণতাকে অবশ্যই বিপরীতমুখী করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। অতিরিক্ত খাবার নিয়ে অর্ধেক ডাস্টবিনে না ফেলে বরং না খেয়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আজ সময়ের দাবি। এই শহরের বহু মানুষ এখনো খাবার না পেয়ে আবর্জনা স্তূপ থেকে মাংসের হাড্ডি চুষে খায়। তাই খাবার অপচয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় না করে; বরং তাদের খাবার জোগানে কিছু অর্থ ব্যয় করা প্রয়োজন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭