ইনসাইড ইকোনমি

এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে আইএমএফের যে ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ


প্রকাশ: 17/01/2023


Thumbnail

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নতুন তহবিল রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফান্ড বা আরএসএফ থেকে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বে প্রথম এই ঋণটি পায় বার্বাডোজ, তারপর কোস্টারিকা, আর সবশেষে রুয়ান্ডা।

গত বছরের ১৩ এপ্রিল আইএমএফের বোর্ড এই তহবিলের অনুমোদন দেয় আর কার্যকর হয় পয়লা মে থেকে। যেসব স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে আছে, তাদের জন্যই এই তহবিলের সৃষ্টি।

আইএমএফ বলছে, কোভিড-১৯-এর পরে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের অনেক দেশেরই ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এই তহবিলের প্রয়োজনও অনেক বেড়ে গেছে।

আইএমএফের মতে, ঋণের অর্থ যেসব প্রকল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির প্রকোপে তার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানের ঋণ মান সংস্থাগুলো ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো ভৌত পর্যায়ের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিকে বিবেচনার মধ্যে আনছে। যার ফলে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে ঋণ গ্রহণে বাড়তি সুদ গুনতে হচ্ছে। জাতিসংঘের গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণের সুদ পরিশোধে প্রতি ১০ ডলারে অতিরিক্ত আরও ১ ডলার ব্যয় করতে হয়।

বাংলাদেশের রাজস্ব আয় এখন মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যা অত্যান্ত কম। আর প্রতিবছর সরকারের রাজস্ব আয়ের ২১ দশমিক ১ শতাংশ ব্যয় হয় ঋণের সুদ পরিশোধে। এ ঋণদায় মেটাতে ধারাবাহিকভাবে বাজেটঘাটতির মধ্যে পরছে সরকার এবং এই ঘাটতি মেটাতে আবারও ঋণ নিতে হয় সরকারকে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু অর্থায়নে সরকারের চলমান বৃহৎ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলার প্রকল্পগুলোতে জিডিপির ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন হবে।

বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে জলবায়ু অর্থায়নে বাজেটে বরাদ্দ ছিল জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। আর এর আগের দুই অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

উচ্চ ঋণ ঝুঁকিতে নেই, কিন্তু ঋণ পরিশোধের চাপে জলবায়ু অর্থায়নে রাজস্ব সক্ষমতা হারাচ্ছে, এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ একা নয়। জলবায়ু ঝুঁকিতে আছে এমন ৫৫টি স্বল্প ও উন্নয়নশীল দেশ মিলে গঠন করেছে ভালনার‍্যাবল গ্রুপ অব টোয়েন্টি (ভি ২০)। এ তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। গ্রুপের ২২টি দরিদ্র দেশ ইতিমধ্যে উচ্চ ঋণ ঝুঁকিতে আছে। ভি ২০ গ্রুপের প্রতিনিধিরা আশঙ্কা করছেন, এসব দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের যৌক্তিক সমাধান করা না গেলে আগামী দশকে একটি বড় বৈশ্বিক ঋণখেলাপির ঘটনা ঘটতে পারে।

বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। এর মধ্যে রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফান্ড বা আরএসএফ থেকে চেয়েছে ১৩০ কোটি ডলার। নিয়ম হচ্ছে, আইএমএফের কোনো একটি ঋণ কর্মসূচির মধ্যে থাকলেই কেবল আরএসটি থেকে সহায়তা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশই এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে এই ঋণ চেয়েছে।

ঋণের অর্থ দেওয়া হবে ১৮ মাসে। পরিশোধের সময় ২০ বছর, আর এর বাড়তি সময় বা গ্রেস পিরিয়ড হচ্ছে সাড়ে ১০ বছর। এই ঋণের সঙ্গেও শর্ত থাকবে। ঋণ পেতে আইএমএফের ভাষায় বেশ কিছু উচ্চ মানের বা ‘হাই কোয়ালিটি’ সংস্কার কর্মসূচি নিতে হবে। এর মধ্যে থাকবে দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করার মতো কর্মসূচি।

প্রশ্ন হচ্ছে এই তহবিল কি জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর হবে। বাংলাদেশই বা লাভবান হবে কতটা। আসলে এর উত্তর পাওয়া যাবে সামনের দিনগুলোতেই।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭