ইনসাইড টক

‘সত্যি কথা বলার মাশুল দিতে হচ্ছে’ (ভিডিও)


প্রকাশ: 17/01/2023


Thumbnail

ঢাকায় অবস্থান করছেন কলকাতার জনপ্রিয় ও স্পষ্টভাষী অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২১তম আসরে অংশ নিতে রোববার ঢাকায় আসেন তিনি। এই আয়োজনে তাঁর  নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘এবং ছাদ’-এর প্রদর্শনী হচ্ছে। প্রদর্শনীর ফাঁকে কাজ, নির্মাণ ও ব্যক্তি জীবনের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে কথা হয় এই স্পষ্টভাষী অভিনেত্রীর।  



বাংলা ইনসাইডার: শুরুতেই নিজের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘এবং ছাদ’ নিয়ে জানতে চাচ্ছি।

শ্রীলেখা: নিজ শহর কলকাতা আমার সিনেমা দেখায়নি। কিন্তু বাংলাদেশ সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছে। বাংলাদেশে এসে প্রথমবার সিনেমাটি দর্শক সারিতে বসে দেখলাম। নিজ শহরে বসে দেখতে পারলে ভালো লাগত। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমার সিনেমা জায়গা পায়নি। এর জন্য একটা আক্ষেপ রয়েছে যে, আমার শহরের মানুষদের আমার নির্মাণ দেখাতে পারিনি। এই দুঃখটা থাকবে। তবে বাংলাদেশে এসে যে ভালোবাসা পেলাম তা কখনো ভুলব না। কলকাতার মানুষ যে মর্যাদা দিতে পারেনি সেটি বাংলাদেশের মানুষ দিয়েছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় নির্মাণ দেখাতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। এভাবেই নিজের অনুভূতি ভাগ করলেন অনুরাগীদের সঙ্গে।

বাংলা ইনসাইডার: অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনা ও প্রযোজনার, বাড়তি চাপ ছিলো কী? 

শ্রীলেখা: এতদিন অভিনেত্রী হিসেবে অন্য মানুষের কাজে অভিনয় করেছি। এবার ক্যামেরার পেছনে অভিনেত্রী শ্রীলেখা নিজের লেখা, ভাবনা নিয়ে কাজ করেছে। পরিচালক এবং অভিনেত্রী কখনো এক আবার কখনো আলাদা। যেহেতু অভিনয় করি তাই জানতে চেষ্টা করেছি একজন অভিনয়শিল্পীর ক্যামেরার পেছনে কি কি দরকার হয়। কিভাবে বুঝিয়ে দিলে তার পক্ষে সুবিধা হয়। সেটা আমার কাছে জানার চ্যাপ্টার হয়েছে। নির্মাতা হয়ে এটি খুব উপভোগ করছি। নির্মাণ অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবে অভিনয়ও অনেক চ্যালেঞ্জিং। যে কোনো কাজই চ্যালেঞ্জিং। এই কাজটি করেতে গিয়ে প্রযোজনা, পরিচালনা ও অভিনেত্রী এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে করতে হয়েছিল আমাকে। কিন্তু তাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। আনন্দ নিয়েই কাজটি করেছি। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি পরবর্তী কাজের।

বাংলা ইনসাইডার: যেটা করতে চেয়েছিলেন তার কতটুকু দিতে পেরেছেন? 

শ্রীলেখা: বাজেট বেশি থাকলে আরও ভালো করার সুযোগ থাকত। আরও ভালো কিছু দিতে পারতাম। প্রতিটি কাজে বাজেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাজেট ভালো হলে অনেক ভালো কাজ উপহার দেওয়া যায়। তবে সবাই কাজটি দেখে তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছে। তাদের ভালো লাগা আমাকে আনন্দিত করেছে। বাজেট পেলে নিয়মিত নির্মাণ করতে চাই।  



বাংলা ইনসাইডার: বাংলাদেশের নাটক, সিনেমা ও সিরিজ দেখা হয় কিনা? 

শ্রীলেখা: বাংলাদেশের নাটক, সিনেমা ও সিরিজ প্রায়ই দেখা হয়। আমার পছন্দের তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তার লেখার বড় ভক্ত আমি। তার ভাষায়, এখন বাংলাদেশের কাজ অসাধারণ হচ্ছে। শিল্পী হতে হলে অনেক কিছু হতে হয়। প্রথমত ভালো মনের হতে হয়। দ্বিতীয়ত কাজে শততা থাকতে হয়। ভালো মানুষ না হলে ইমোশনালগুলো পর্দায় দেখাতে পারব না। এখন প্রচন্ড তারকা। কার কত ফলোয়ার এসব গুনে মান নির্ণয় করা হয়। কলকাতার রাজনৈতিক বিষয়ে সবাই অবগত। তাদের শ্রোতে আমি গা ভাসাতে পারিনি। যার কারণে আমি অনেকটা বঞ্চিত। চাইলে অনেক কাজ করতে পারি। তবে সেই মানহীন কাজ করতে চাই না। এখন মনের মতো কাজ করতে চাই। 

বাংলা ইনসাইডার: একজন নির্মাতা ও অভিনেত্রী হিসেবে সাংস্কৃতি বিনিময় নিয়ে আপনার ভাবনা কী? 

শ্রীলেখা: মাঝে বাংলাদেশের সিনেমা খুব খারাপ হয়েছে। সে কারণে কাজগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল দর্শক। আমারও কাজগুলো ভালো লাগত না। এখন ভালো হচ্ছে। দুই দেশের অবাধ সাংস্কৃতিক বিনিময় হওয়া উচিত। এদেশের নির্মাতারা আমাকে নিয়ে কাজ করতে চাইলে আপত্তি নেই। আমি কাজ করতে প্রস্তুত আছি। 

বাংলা ইনসাইডার: বাংলাদেশে এসে কেমন অনুভব করছেন? 

শ্রীলেখা: বাংলাদেশ আমার বাবার দেশ। তার মানে এটি আমারও দেশ। এ দেশ নিয়ে স্মরণীয় কিছু চাই। এ সম্পর্কে কেউ খারাপ বলুক তা চাই না। বাংলাদেশের এই বাংলাকে ভালোবাসা সবচেয়ে আনন্দদায়ক। এখন কলকাতায় সবাই খিচুড়ি ভাষায় কথা বলে। এ দেশের মানুষ বাংলাকে ভালোবেসে বাঁচিয়ে রেখেছে। গর্বের সাথে বাংলা নিয়ে ভাবছে, স্বপ্ন দেখছে। এটা বিরাট একটি ভালো দিক। বাংলাদেশের আতিথেয়তা পৃথিবীর কোনো দেশে পাওয়া যাবে না।



বাংলা ইনসাইডার: ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তো দুই বাংলার শিল্পীরা এক হচ্ছে। আপনাকে কবে দেখা যাবে সেই তালিকায়? 

শ্রীলেখা: আমি কাজ করতে চাই। আমাকে নিয়ে ভাবলে কাজ করতে অনীহা নেই। তবে আমি অনেক শত্রু করে ফেলেছি। সত্যি কথা বলার মাশুল দিতে হচ্ছে। যে সরকার রাজ্য চালাচ্ছে তাদের সম্পর্কে কথা বলি। তাদেরকে খুশি করার জন্য একটি গোষ্ঠি আছে। তারা ভাবেন- শ্রীলেখাকে নিলে আবার ওই সরকার যদি ক্ষুণ্ণ হন। যার কারণে আমাকে কেউ কাজে নেয় না।

বাংলা ইনসাইডার: গেল বছর সেভাবে অভিনয় দেখা যায়নি আপনাকে। কবে নাগাদ আবার দেখা যাবে অভিনয়ে? 

শ্রীলেখা: আসছে ফেব্রুয়ারিতে একটি সিনেমায় কাজ করার কথা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে ফেরদৌস আহমেদ কাজ করবেন। ফেরদৌস প্রসঙ্গ আগে একটি কাজ হয়েছে। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমায় ফেরদৌসকে নেওয়ার জন্য নির্মাতাকে আমিই বলেছিলাম। তবে সেটা আজও কোথায়ও বলেনি ফেরদৌস।



বাংলা ইনসাইডার: দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি?  

শ্রীলেখা: অপ্রাপ্তি থেকে আমার প্রাপ্তিই বেশি। প্রাপ্তি হয়েছে বলেই আজ বাংলাদেশে আমার কাজ নিয়ে এসে কথা বলতে পারছি। নেগেটিভ না ভেবে সবসময় পজিটিভ ভাবতে চাই। তাই প্রাপ্তিই অনেক বেশি।

বাংলা ইনসাইডার: বাবাবিহীন প্রথমবার এলেন বাবার দেশে। এর আগে বাবার সঙ্গেই এসেছিলেন। কেমন অনুভব করছেন? 

শ্রীলেখা: (দীর্ঘশ্বাস), বাবাকে ভীষণ মিস করছি। (চোখে পানি) আমাদের কান্না পেলে তা লুকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এটার মধ্যে দুর্বলতা নেই। কান্নাটা হচ্ছে একটা ইমোশন। এটি খুবই পিউর একটি ইমোশন। ছেলেরা কান্না পেলে কাঁদবে না সেটা ভুল কথা। ইমোশনের কাছে ছেলে-মেয়ে ব্যাপার না। কান্না পেলে সবাই কাঁদবেন। মন খুলে কাঁদবেন। তাহলে অনেকটা হালকা লাগবে।

বাংলা ইনসাইডার: ঢাকার এসে আপনার প্রিয় খাবারগুলো খাওয়া হয়েছে কি?

শ্রীলেখা: বাংলাদেশের খাবারের ধারে কাছেও আমি যাব না। আমার সাইজ দেখে তো বুঝতেই পারছেন। আমি কেমন মোটাসোটা আছি। বাংলাদেশের খাবার এত মজার যে, খাবারের টেস্ট নিতে গেলে এই খাওয়া থামবেই না। তাই ফুডের ধারে কাছেও যেতে চাইছি না। চেষ্টা করছি, খাবার তেমন না খেতে!

উল্লেখ্য, শ্রীলেখা মিত্রের পূর্বপুরুষের বসত ছিল মাদারীপুরের ঘটমাঝি গ্রামে। দেশভাগের সময় ভারতে পাড়ি দেন তারা। শ্রীলেখার জন্ম ভারতে হলেও বাবার মুখে ঘটমাঝি গ্রামের গল্প শুনে বেড়ে উঠেছেন তিনি। তাই তো বাংলাদেশের প্রতি রয়েছে তার অন্যরকম টান।

২০১৭ সালের আগে বাবা সন্তোষ মিত্রকে নিয়ে পূর্বপুরুষের ভিটার খোঁজে বাংলাদেশে এসেছিলেন শ্রীলেখা। তার কয়েক বছর পর তার বাবার মৃত্যু হয়। বাবাবিহীন প্রথমবার প্রিয় শহরে আসলেন অভিনেত্রী। 




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭