ইনসাইড আর্টিকেল

'ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি' দিবস আজ


প্রকাশ: 19/01/2023


Thumbnail

১৯৯২ সালের ১৯ শে জানুয়ারি ১০১ সদস্য নিয়ে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ঘাতক  দালাল নির্মল কমিটি।  এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক দালালেরাই স্বাধীন দেশে উদ্ভূত করে আসছিল মৌলবাদী রাজনীতি। যাদের সাথে যুদ্ধাপরাধ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, তারাই হয়ে উঠছিল মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক হর্তাকর্তা।  বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র বিশ বছরের মাথায় চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধীরা যখন রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠছিলেন সে সময় তার প্রতিবাদ করার জন্য মূলত  গড়ে উঠেছিলো এই সংগঠন।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হবার পর ১৯৮১ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর তার নানান ধরনের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। শেষ পর্যন্ত আসল রূপ দেখিয়ে ১৯৯১ সালে গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচন করা হয়। গোলাম আযমের রাজনীতিতে ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে এর প্রতিবাদ জানাতেই গড়ে উঠেছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতি শুরুর দিকে শহরাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ব্যাপক সমর্থন ছিল। ১৯৯৪ সালে এক প্রতীকী বিচারের মাধ্যমে গোলাম আযমের ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। ১২ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন এবং প্রতীকী ফাঁসি হিসেবে গোলাম আযমের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছিল। লাখো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছিল গণআদালতের সাহসী পদক্ষেপ।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যখন গঠন করা হয়েছিল, তখন থেকেই রাজনৈতিক সমর্থন চেয়েছিল সংগঠনটি। কারণ যেকোনো আন্দোলনের সফলতার মুখ দেখতে হলে রাজনৈতিক সমর্থন সব থেকে বেশি জরুরি এবং যেহেতু জেনোসাইড আইনে আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাওয়া হচ্ছিল সেহেতু চলমান রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া তা নিয়ে এগোনোর পথ খুবই সরু হয়ে গিয়েছিল।

সেই সময়ে ক্ষমতাসীন বিএনপির সাথে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের কারণে বিএনপি এই কমিটির জন্য কখনোই কোনো সমর্থন দেখায়নি। বরং গণআদালতে জনগণের সমর্থন সরকারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। তাই তারা নির্মূল কমিটির নেতা, সদস্য বা সমর্থকদের হেনস্তা করার সব ধরনের পন্থা বেছে নিয়েছিল। আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে মামলা, হয়রানি, গ্রেফতার করা শুরু করে তারা। এরপরও থেমে থাকেনি এই কমিটি।  পরবর্তীতে এই 'গন আদালতের'  নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার চার দশক পর ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা বিরোধীদের স্বরুপ উন্মোচনের জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে সদা লড়াই করা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ঘাতক বিরোধী লড়াইয়ের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা মাথায় নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তিনি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শক্তিশালী লড়াইয়ের ইতিহাস সদা জাগ্রত রাখার দায়িত্ব এই কমিটির

স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে সাহসী এই সংগঠন আগামীর পথে আরও অনেক বেশি দৃঢ়তার সাথে আপসহীন পথ চলবে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়বার শপথে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭