ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির আন্দোলনের নতুন ছক, পরিকল্পনা ফলপ্রসু হবে কি?


প্রকাশ: 20/01/2023


Thumbnail

বিএনপির আন্দোলনকে বেগবান করতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দলটি। গত বছর সারাদেশে ১০টি বিভাগীয় সমাবেশে সফলতার মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করে তুলেছিল বিএনপি। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় এসে আন্দোলনের সে গতির ধারা থমকে যাওয়ার কারণেই দলটি নতুন করে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র।  

সূত্র জানায়, দলের নেতারাই দলটির পরিকল্পনাগুলো বাইরে ফাঁস করে দিচ্ছে বলে ধারনা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। তাই আগামীতে আন্দোলন নিয়ে নেওয়া পরিকল্পনাগুলো গণহারে সবাইকে না জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের মধ্যে গোপন রেখে বাস্তবায়ন করারও একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।  

দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য নেতা জানান, বিএনপি যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছুটির দিনগুলোতে কর্মসূচি দেওয়া। পাশাপাশি কর্মসূচি ঘোষণার সময় বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা দাবির সঙ্গে চলমান জনসম্পৃক্ত ইস্যুকে যুক্ত করা। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আশ্বস্ত করা এবং তাদের কাছে থেকেও আশ্বস্ত হওয়া।     

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির আন্দোলনের গতি বাড়াতে যত পরিকল্পনাই করা হোক না কেন, দলটি এত বছরেও জনগণের সাথে সম্পৃক্ত এমন কোনো এজেন্ডা সামনে আনতে পারেনি। বর্তমান সময়ে সরকারের বিদ্যুৎ এবং শিল্প কারখানা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ইস্যুকে বিএনপির আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হলেও আশানুরুপ ফল পাবে না দলটি। কারণ এ বিষয়গুলো ইতিমধ্যেই জনসাধারণের কাছে সহনীয় হয়ে গেছে। 

বিশ্লেকরা মনে করছেন, বিএনপির যে ১০ দফা ও রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখার যে ২৭ দফা ঘোষণা করেছিল এবং ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের নিমিত্তে যে সব নতুন জোট গঠন করেছিল, সে সব জোটগুলোর তেমন সরব ভূমিকা রাজনৈতিক অঙ্গণে দেখা যায়নি। ফলে বিএনপি আন্দোলনের যেমনই পরিকল্পনা করুক না কেন, সে আন্দোলন ফলপ্রসু হবে বলে মনে হচ্ছে না।         

এদিকে বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, সারা দেশে ১০টি বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন প্রাণ ফিরে পায়। কিন্তু ঢাকায় এসে সেটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। যে কারণে বরাবরের মতো ঢাকার আন্দোলন নিয়ে আবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছে বিএনপি। আর তাই রাজধানীতে আন্দোলন নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজধানীতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। রাজধানীর আন্দোলন যত বেশি জোরদার হবে সরকারের ‘কনসার্ন বডি’ তত বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হবে। আর তখনই সরকার বিএনপির দাবি-দাওয়া মানতে নমনীয় হবে। তাই এখন আমাদের মূল টার্গেট রাজধানী ঢাকাতে আন্দোলন করা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে বর্তমানে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। আবার অনেক নেতার মধ্যে দলীয় স্বার্থকে বাদ দিয়ে নিজের স্বার্থে ছাত্রদলকে ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যে কারণে দীর্ঘ ৭ বছর পর রকিবুল ইসলাম বকুলকে ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। যাতে করে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে তাদেরকে রাজধানীতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারে। আন্দোলন নিয়ে বিএনপির নেওয়া অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। 

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, এটা দীর্ঘ দিনের। সাধারণত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কোন্দলগুলো সৃষ্টি হয়। এত বছরেও বিএনপির এসব কোন্দল সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমান যতদিন থাকবে, এ কোন্দল কোনোদিন মেটানো সম্ভব হবে না।    

বিএনপির নতুন আন্দোলনের পরিকল্পনা সম্পর্কে একাধিক নেতা জানান, যে সব দলের নেতারা মনে করেন, তারা ভোটে জয়ী হয়ে সংসদে যেতে পারবেন না, তাদের মনোনয়ন দিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলনে নামানোর পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা নেতাদেরও আন্দোলনে সক্রিয় করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যে কমিটিগুলো অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত, সেই কমিটিগুলো ভেঙে দিয়ে তাদের দেখভালের জন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলেও জানান বিএনপির নেতারা। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, আন্দোলন কখনও তুঙ্গে উঠবে, আবার কখনও ঢিলে হবে, এটাই হলো আন্দোলনের ধরন। আস্তে-আস্তে আন্দোলন আরও কঠোর হবে। কঠোর কর্মসূচি আসবে। এটাই আন্দোলনের নিয়ম। এসব নিয়ে আমাদের স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে, তবে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা তো আমি বলতে পারব না। এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে কথা বলা যাবে না।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলো সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনসহ বেশ কিছু কমন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যমত্য হলেও চূড়ান্ত পর্বে যেতে দলগুলোর পদ-পদবী, ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। এসব প্রশ্নে যদি কোনো মতবিরোধ দেখা দেয়, তাহলেই আন্দোলন পণ্ড। এসব কারণেই মনে করা যেতে পারে- বিএনপি নতুন, পুরাতন যত পরিকল্পনাই করুক, এসব পরিকল্পনা কেবল পরিকল্পনাতেই থেকে যাবে। আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখন দেখার বিষয় বিএনপির আন্দোলনের নতুন পরিকল্পনা আদৌ আলোর মুখ দেখে কি না?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭