ইনসাইড টক

‘সব কিছু বিবেচনা করে এমডি একটা রিপোর্ট করুক বিশ্বব্যাংক বোর্ডে’


প্রকাশ: 21/01/2023


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত  বলেছেন, গত কয়েক বছর কোভিড এবং কোভিড পরবর্তীকালে ইউরোপ যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হয় না যে, সবাই টাইমলি কোনো কাজ শেষ করতে পারছে। একটা বড় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে যে সব লোনে কাজ হয়, তার মধ্যে আমদানির যে সব কম্পোনেন্ট থাকে, ইমপোর্ট মেটেরিয়ালস্, সেই গুলোর দাম অনেক বেড়ে গেছে। অর্থাৎ এই লোনটা যদি পাঁচ বছর আগে পাশ হয়ে থাকে, এই টাইমের মধ্যে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে, রিটার্ন ইনভেস্টমেন্ট যদি আশা করা যায়, সে রিটার্ন হওয়ার সম্ভাবনা কমেও গেছে। এসব নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে কি হবে না, আমি জানি না।

বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন) এক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গ ঢাকায় আসছেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পগুলো তার পরিদর্শনের কথা, পাইপলাইনে আটকে থাকা এসব প্রকল্পগুলোর অর্থছাড় এবং ডলার সঙ্কট- এসব বিষয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত- এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক আল মাসুদ নয়ন।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্প চলমান চলমান রয়েছে, সময়মতো অনেক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। যে কারণে এসব প্রকল্পের অর্থছাড় হয়নি, যে কারণে পাইপলাইনে আটকে আছে বৈদেশিক ঋণের ৫০ বিলিয়ন ডলার। এসব অর্থছাড়ের বিষয়ে আপনি কি মনে করেন বিশ্ব ব্যাংকের এমডি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন?- এমন প্রশ্নের উত্তরে আবুল বারকাত বলেন, আমার তো এগুলো খুব রুটিন ভিজিট বলে মনে হয়। এ রকম নয় যে, এ কারণেই তিনি এসেছেন। বিশ্বব্যাংকের এমডি তো বিভিন্ন দেশেই ঘুরেন। আমার কাছে তো মনে হয়, বিভিন্ন দেশে ঘুরার মতোই একটি ঘুরা বাংলাদেশে। বিশেষ কোনো কিছুর জন্য বাংলাদেশে এসেছে, আমার কাছে তা মনে হয়নি। দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাংকের লোনের টাকা স্টলমেন্টে দেয় এবং সেটা এমন কখনই হয় না যে, সবকিছুই একদম স্মোথলি হয়ে যায়, সেটা হয়ও না।

অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, আমার ধারনা, সাধারণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আলোচনার বিষয়গুলো এখন এগুলোই। আমাদের অবস্থাটা বুঝে, বিশ্বব্যাংকের সে সুযোগ আছে। আমাদের অবস্থা বুঝে সে লোনের মেয়াদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, যতটুকু আমাদের কারণে না, সেটুকু কনসিডার করলে আমার মনে হয় উভয় পক্ষ থেকেই রক্ষা হবে। আর বিশ্বব্যাংক যেহেতু অন্যান্য ব্যাংকের মতো না। বিশ্বব্যাংকের মেন্ডেটের মধ্যে অনেক মেন্ডেট আছে, আমার মনে হয় যে, জাতীয় উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে হলেও বিশ্বব্যাংকের এমডির বিশেষ কিছু করার আছে বলে আমি জানি না। এমডি বিষয়টা বুঝে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে প্রেজেন্ট করে।

তিনি বলেন, ওনার কাছে এতোটুকুই আশা করা যেতে পারে, বাংলাদেশ যেহেতু পৃথিবীর অনেক দেশের ইকোনোমির তুলনায়, পারফর্মেন্স অনুযায়ী বাংলাদেশ যেহেতু বেটার করছে এবং পপুলেশনের দিক থেকে একটা হিউজ ডমেসটিক মার্কেট আছে। সব বিবেচনা করে তিনি একটা রিপোর্ট করুক বিশ্ব্যাংকের বোর্ডে, বোর্ড যেহেতু বাংলাদেশের আকাঙ্খা, যেমন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি, সেগুলো বিবেচনা করে এসব বিষয়গুলো দেখুক। এর বেশি তো বলার কিছু নাই।

দিন দিন পাইপলাইনে এইসব ঋণের অর্থের পরিমাণ বাড়ছে, এসব অর্থছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশ কি ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে  অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন,বাংলাদেশ যে সব ব্যবস্থা নিতে পারে, তার জন্য সব সময় চেষ্টা করে বলেই তো আমার ধারনা। তবে যেগুলো ছাড় করা জরুরি, অর্থাৎ প্রাইওরিটি বা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, যে প্রকল্পগুলো জাতীয় অর্থনীতির অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প, সেগুলোর ওপর জোর দেওয়া উচিৎ। জোর দেওয়া উচিৎ এজন্যই যে, এক সময় তো এসব অর্থ ফেরতও দিতে হবে এবং ফেরত তো আর টাকায় দেয়া হবে না, ফেরত তো ডলারেই দেয়া হবে। লোন ম্যানেজমেন্ট-টা সব সময় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের সামনের দিকে এইটা কেমন আসবে। কারণ এগুলো ফেরত দিতে হবে। যেগুলো রিটার্ন ধীর এবং সম্ভাবনা কম, সেগুলো রি-থিংকও (পুনঃচিন্তা) করা যেতে পারে, যেগুলো অগ্রাধিকারমূলক না। অগ্রাধিকারমূলকগুলোকে জোর দেওয়া।

বাংলাদেশে ডলার সঙ্কট এবং বাণিজ্য ঘাটতি হচ্ছে এক্ষেত্রে কি ধরনের পদক্ষে নেওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?- এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, ডলার সঙ্কটের ক্ষেত্রে প্রধান হচ্ছে এক্সপোর্ট আর্নিংয়ের যত পথ আছে, কমোডিটি এক্সপোর্ট, সার্ভিস এক্সপোর্ট এবং ম্যান পাওয়ার এক্সপোর্ট- এগুলোতে জোর দিতে হবে। এবং রেমিটেন্স, রেমিটেন্সটা বৈধ চ্যানেলে যেন আসে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে- সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স যখন আসে না। তখন ডলার আপানার কাছে আসে না। দুটো জায়গাতেই জোর দেওয়া এবং জোর দেওয়ার এখন অনেক খাত-ক্ষেত্রই আছে। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় ইমপোর্ট যেমন লাক্সারি ইত্যাদি ইত্যাদি- এগুলো করলে তো ফরেন কারেন্সি চলে যায়, সেগুলো বাঁচানোর চেষ্টা করা। আর লাক্সারি কিছু গুডস আছে, যেগুলোতে বাধা দেওয়াও যায় না, করে। তাতে তো ফরেন কারেন্সি যায়- সেগুলোতে যে সব ট্যাক্স আছে, যদি ২০০% ট্যাক্স থেকে থাকে। যাদের দরকার আছে তারা ৫০০% ট্যাক্সও দিতে পারে। এসব লাক্সারি গুডসের ওপর হাই ডিউটি আরোপ করা। চেষ্টা করা যেসব ক্ষেত্রে ফরেন কারেন্সি ব্যবহার হয়, সেগুলো পরিহার করা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭